রাত বাজে দুইটা। চোখে নাই ঘুম। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে পুরনো দিনের সব খুচরো স্মৃতি। আহ!! কি মধুর সেই দিনগুলো।
আমার জন্ম আশির দশকে হলেও বেড়ে উঠেছি নব্বই দশক জুড়ে। সেই সময়টাতে ল্যান্ড ফোন কারো বাসায় থাকাটা একটা বিশাল ব্যাপার ছিলো। সেই আমলে প্রথম দিকে ছিলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডায়াল করার ফোন। শতবার ডায়াল করেও আমরা ক্লান্ত হতাম না। তখন বাসায় ফোনের লাইন আনাও ছিলো এলাহি কারবার। হুট করেই ফোন আনা যেত না। সে সময়গুলোতে ক্রস কানেকশন, রং নাম্বার এগুলো ছিলো নিত্য দিনের ঘটনা। কত মানুষের যে এই রং নাম্বারে প্রেম হয়ে যেতো তখন। আবার অনেকে তো প্রেম করতে গিয়ে ধরা পরলে রং নাম্বার এ চলে যেতো।
সেই সময়গুলোতে প্রতিদিন নিয়ম করে লোডশেডিং চলতো। এখনকার বাচ্চাদের কাছে লোডশেডিং খুব একটা পরিচিত না। তখন তো নিয়ম মাফিক লোডশেডিং চলতো এবং ওই সময়টা গল্প আর আড্ডাতেই চলে যেতো। আইপিএস আাসার আগে তো মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে হাত পাখা ঘুরাইত ঘুরাইতে কব্জি ব্যাথা হয়ে যেতো।
সেই দিনগুলোতে টিভি দেখাটা একটা উৎসব এর মতন ছিলো। একটা মাত্র বিটিভি ছিলো বাংলা চ্যানেল। প্রতিটা অনুষ্ঠান তো ছিলোই সাথে কুরআন তেলাওয়াত, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক এর জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক পর্যন্ত সবার মুখস্থ ছিলো। বিজ্ঞাপনের প্রতিও ভালোবাসা ছিলো অগাধ। নাটকের চরিত্রগুলোও ছিলো বড্ড বেশি আপন। মিস্টার বিনের গাড়ি ভেঙে গেলে নিজের চোখে পানি আসতো। আলিফ লায়লার জন্য কতযে অপেক্ষা ছিলো। রবিনহুড, সিন্দাবাদের জন্য মন কেমন করতো।
সেই সময়গুলোতে মোবাইল ফোন তো ছিলোনা। তাই অবসর কাটাবার সঙ্গী ছিলো বই। সেই যে চাচা চৌধুরী, বিল্লু,পিংকি, নন্টে-ফন্টে, ফ্যান্টম,টিনটিনের কমিকস গুলোর প্রতি ভালোবাসা, তা তো এখন লাখ টাকায়ও পাইনা। একটু বড় হবার পর হুমায়ুন আহমেদের বাচ্চাদের বই, জাফর ইকবাল এর বই, তিন গোয়েন্দাদের সাথে কত যে স্মৃতি তা কি বলে শেষ করা যাবে। আহারে কি আনন্দ ছিলো!!
সেই সময়গুলোতে মানুষের প্রতি মানুষের মায়া ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো। শুধু মানুষ না, সব কিছুর মাঝে মায়া ছিলো। হয়তো তখন আমাদের কাছে বেছে নেবার অপশন কম ছিলো। তাই যেটুকু পেতাম সেটাতে মন প্রাণ ঢেলে দিতাম। অন্তর দিয়ে উপভোগ করতাম। সব কিছুর হাজারো অপশন। তাই হয়তো মায়া জন্মাবার আগেই আমরা নতুন কিছু খুঁজে নেই। তাই আমার ল্যান্ড ফোনের দিনগুলোর জন্য এখনো অনেক মায়া লাগে। কত সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৪০