somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিলখানার সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি : নেপথ্য ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখার দাবি নিহতদের স্বজনদের

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের নাম পিলখানার ট্রাজেডি। রক্তস্নাত বিডিআর বিদ্রোহের সেই কালো দিন আজ। গত বছরের এদিনে বিডিআর সদর দফতর ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ চলাকালে বিডিআর সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুর শিকার হন তত্কালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল, ৩ মহিলা, বিডিআরের সুবেদার মেজর পদমর্যাদার একজন ডিএডিসহ ৭৪ জন। হত্যা, লাশ গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, মারধর, গুলিবর্ষণ, লুণ্ঠনসহ হেন অপকর্ম নেই যা বিডিআর বিদ্রোহে হয়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা থেকে দ্রুত বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশের বিডিআর ব্যাটালিয়ন ও ক্যাম্পগুলোতে। দেশজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ আতঙ্ক। ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় অবসান হয় বিদ্রোহের। সাজানো গোছানো পিলখানা রূপ নেয় ভয়ঙ্কর এক মৃত্যুপুরীতে। একের পর এক গণকবরের সন্ধান, ম্যানহোল ও গর্ত থেকে উদ্ধার হতে থাকে লাশ আর লাশ। পিলখানাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় এক মর্মস্পর্শী নজিরবিহীন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির। প্রথমদিকে ওই বিদ্রোহকে দীর্ঘদিনের শোষণ, নীপিড়ন, বেতনভাতা, পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য, জরুরি সরকারের আমলে পরিচালিত অপারেশন ডাল ভাতের অর্থ আত্মসাত্ ইত্যাদি কারণে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণের পরিণতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তী তদন্ত, রিমান্ড ও টিএফআই সেলে বিদ্রোহী জওয়ানদের জবানবন্দি, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিডিআর বিদ্রোহ ছিল দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফসল। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার নাম। সরকারি দলের ভাষ্যকাররাও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে ঘটনাকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। বিতর্ক দেখা দেয় তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে। বিদ্রোহের সময় সরকারের ভূমিকা, প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া খুনিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক, সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। বিডিআরের নাম ও পোশাক পরিবর্তন, বিএসএফের আদলে বিডিআর পুনর্গঠন, পুনর্গঠনে বিএসএফের সহযোগিতা নেয়ার প্রসঙ্গ আসাতেও বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
বিডিআর বিদ্রোহের এক বছর পার হলেও এখনও বিদ্রোহের প্রকৃত কারণসহ অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। থেকে গেছে রহস্যের আড়ালে। বহুবার তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার সম্ভাব্য সময় নিয়ে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও গত এক বছর পার হয়ে গেলেও তদন্ত সংস্থা সিআইডি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্য কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজও হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বাংলাদেশ রাইফেলস—বিডিআর প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী সুশৃংখল বাহিনী। দেশের সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী এই বাহিনীর ঐতিহ্য ২১৪ বছরের। গত বছর মাত্র একদিনের মর্মান্তিক ট্রাজিডিতে তাদের প্রায় সোয়া দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য ধুলায় মিশে যায়।
গত বছর এই সময় চলছিল ‘বিডিআর সপ্তাহ ২০০৯’। সপ্তাহের শুরুর দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যান। তার সফরের সময় বিডিআর সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিডিআর সপ্তাহের দ্বিতীয়দিনে পরবর্তী করণীয় ও বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য বিডিআরের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিসহ সব কর্মকর্তা দরবার হলে বার্ষিক দরবারে মিলিত হন।
অপারেশন ডালভাতের অর্থ আত্মসাত্সহ বিভিন্ন ইস্যু এনে ডিজির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় কয়েক বিডিআর জওয়ানের। বেঁচে আসা সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বিদ্রোহের শুরুতে তত্কালীন ডিজি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফেনে কথা বলেন। তিনি সেনাবাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তার ওই অনুরোধের সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের দরবার হলে লাইনে দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে আসতে বলে। বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীরা প্রথমেই ডিজিকে গুলি করে। পরে একে একে অন্য কর্মকর্তাদের হত্যা করে। এ সময় পিলখানার বাইরেও জওয়ানরা দিনভর গুলি ছুড়ে গ্রেনেড ফাটিয়ে আতঙ্কময় পরিস্থিতি তৈরি করে। একটু পরপর শত শত রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা কথা, নানা গুজব। মোবাইল ফোন, উপস্থিত জনতার কাছ থেকে শোনা ওই সব খবর কতর্ব্যরত সাংবাদিকরা মনোযোগ দিয়ে নোট করেন। বিদ্রোহের দিন দুপুরের মধ্যেই সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘিরে ফেলে পুরো এলাকা। কিন্তু কেউই পিলখানার আশপাশে ঘেঁষতে পারছিলেন না। কোনো গাড়ি বা সাধারণ মানুষ দেখলেও পিলখানার ভেতর থেকে মুহুর্মুহু গুলি চালানো হয়। বিমানবাহিনীর একটি টহল হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে চালানো হয় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি। উপস্থিত সেনাবাহিনী ও র্যাব ভেতরে প্রবেশের জন্য সরকারের গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় ছিল। সরকার রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়। প্রথম দিন দুপুরেই দুই সেনা কর্মকর্তার লাশ বেরিয়ে আসে পয়ঃবর্জ নিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে। গুলিতে পিলখানার বাইরে প্রথমদিনেই মারা যান তিন বেসামরিক নাগরিক। আহত হন অন্তত ২০ জন। বিদ্রোহের প্রথমদিন দুপুরেই ভারতীয় মিডিয়ায় বিডিআর ডিজিসহ সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়।
ঘটনার প্রথমদিন দুপুরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম পতাকা হাতে পিলখানায় যান। সরকারি আলোচক ১১০ মিনিট কথা বলেন ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে। নানকের স্কুল জীবনের সহপাঠী ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসে। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা বিডিআর জওয়ানদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। এরই মধ্যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিডিআর চৌকি ও সেক্টর সদর দফতরগুলোতে। বেশিরভাগ এলাকা থেকে সেনা কর্মকর্তারা আত্মগোপন করেন। জওয়ানরা ফাঁকাগুলি করে ভারি অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে মহড়া দিতে থাকে। সীমান্ত হয়ে পড়ে অরক্ষিত। ভেঙে পড়ে বিডিআরের চেইন অব কমান্ড। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পরও বিডিআর জওয়ানরা অস্ত্র সমর্পণ করে এতে রাজি না হয়ে সেনাবাহিনী সরে যেতে বলে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিডিআর জওয়ানদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। তারা বিদ্রোহের দ্বিতীয়দিন দুপুর ২টা থেকে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে। অস্ত্রাগারের দায়িত্ব নেয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। এরই মধ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পিলখানায় থাকা ঘাতক বিডিআর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা কীভাবে পালিয়ে গেল এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
বিদ্রোহের দ্বিতীয়দিন বিকালে ছেড়ে দেয়া হয় ভেতরে আটকে পড়া নারী শিশুদের। ছাড়া পান বিডিআরে কর্মরত বেঁচে যাওয়া ৩৩ কর্মকর্তা। তারা প্রথমে মিডিয়ার মুখোমুখি না হলেও রাতে মিডিয়ার সামনে আসেন। তাদের একজন ছিলেন লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান। তিনি জানান, বিদ্রোহের শুরুতেই ডিজি শাকিল আহমদকে প্রথম গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয় সেক্টর কমান্ডারসহ উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের। বিদ্রোহের সময় কামরুজ্জামান নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। তার ভাষায় ৩ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবেই বেঁচে যান তিনি। তার বর্ণনায়, দরবার হলে ডিজির দরবারের শুরুতেই বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল শাকিল। সূচনা বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই ৫ মিনিটের মাথায় দুই জওয়ান এসে তাদের বিভিন্ন দাবি তোলে। এগিয়ে যান ডিজির দিকে। এরপরই উপস্থিত জওয়ানরা বাইরে চলে যায়। বাইরে থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের সিঙ্গেল লাইনে দাঁড় করিয়ে হাত ওপরে তুলে দরবার হল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। ডিজি ছিলেন সবার সামনে। তিনি দরবার হল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ৪ জওয়ান ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। পেছন থেকে আরও বিডিআর জওয়ানরা এসে অপর কর্মকর্তাদেরও ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ডিজি ও কর্মকর্তাদের হত্যার পর মেজর জেনারেল শাকিলের বাসায় হানা দেয় বিডিআর সদস্যরা। তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে তাকে নৃশংস নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। বাসায় বেড়াতে আসা আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দেলোয়ার ও তার স্ত্রীকে বাসার ভেতরেই হত্যা করে বিডিআর জওয়ানরা।
পরদিন বৃহস্পতিবার বুড়িগঙ্গার স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে বেরিয়ে আসে আরও ৭টি লাশ। ধীরে ধীর পরিষ্কার হয়ে পড়ে ভেতরে অবস্থানরত সেনা কর্মকর্তার পরিণতি। দ্বিতীয় দিন বিকালে পিলখানার দু’কিলোমিটার এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। সবার মধ্যে আরেক দফা ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক। শোনা যায়, বিডিআর সদর দফতরে সেনা অভিযানের কথা। এ সুযোগে পিলখানা ছেড়ে পালিয়ে যায় বিদ্রোহী জওয়ানরা। তাদের অনেকেই অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামালসহ বিভিন্ন স্থানে আটক হয়। সন্ধ্যার আগে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল বিডিআর সদর দফতরে প্রবেশ করে। আসে পুলিশ, র্যাব, দমকল কর্মীসহ বিভিন্ন সংস্থা। ওই দিন রাতে ডিজির বাসা থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ম্যানহোলের ভেতর থেকেও এক সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার সকালে লাশের সন্ধানে অভিযান শুরু করে উদ্ধারকারী দল। পিলখানার গো-খামারের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি লাশ। এর পর পাওয়া যায় গণকবরের সন্ধান। একটি গর্ত থেকে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৩৮টি লাশ। পিলখানার মরচ্যুয়ারির পাশে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় প্রথম দফায় দুপুরে ১৮টি পরে আরও ২০টি লাশ ওঠানো হয়। তৃতীয় দিনের শেষে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭। লাশের সন্ধানে চলতে থাকে উদ্ধার অভিযান। চতুর্থ দিন আরও ৩টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এখান থেকে উদ্ধার হয় আরও কিছু লাশ। কিছু লাশ পাওয়া গেছে চোখবাঁধা অবস্থায়। তাদের হাতও বাঁধা ছিল। এ থেকে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছেন, দরবার হলের বাইরেও কয়েক দফায় বেঁচে যাওয়া কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বেঁচে আসা কর্মকর্তারাও জানান, বেশ কয়েক দফায় তাদের মৃত্যুর মুখোমুখি পড়তে হয়। ঘাতকরা কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ওই কমিটির প্রধান করা হয় সাবেক সচিব আনিস উজ জামানকে। সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি হয় কোয়াটার মাস্টার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে।
শ্বাসরুদ্ধকর বিডিআর বিদ্রোহের পর ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকে দ্রুত। বিদ্রোহের পর ২৮ ফেবু্রয়ারি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এই দিন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল ইসলামকে। বিদ্রোহের সময় যারা পিলখানা থেকে পালিয়ে যায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনা সদরে মিলিটারি ইমার্জেন্সির তত্কালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ হাসান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ৭২ সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন। ৬৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, সেনাবাহিনী অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজনৈতিক সমাধানের। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, সেনাবাহিনী অ্যাকশনে গেলে বহু সেনা কর্মকর্তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিডিআর বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় তারা বিডিআর বিদ্রোহ দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের অন্যদের তত্পরতার কঠোর সমালোচনা করেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান উপস্থিত সেনা সদস্যরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ‘নো নো নেভার’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সময় সেনা কর্মকর্তারা বিদ্রোহের দিন বিডিআরের নিহত ডিজির ফোনের কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ওই সময় সেনাবাহিনী অথবা র্যাব অ্যাকশনে গেলে সেনা অফিসারদের মরতে হতো না। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, কেন সেনা অফিসারদের এভাবে মরতে হলো। শুধু মারাই হয়নি, কীভাবে ১১ অফিসারের মৃতদেহ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে, এসব বর্ণনাও তারা দেন। তারা আরও বলেন, কারা কীভাবে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের পালানোর সুযোগ করে দিল। ১৬৮ অফিসার যেখানে পালানোর সুযোগ পেলেন না সেখানে প্রায় ৯ হাজার সৈনিক কীভাবে পালিয়ে গেল। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জবাব দিন, আমরা জবাব চাই।
ঘটনার ৪ দিন পর লালবাগ থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, লাশগুমসহ নানা অভিযোগ এনে বিডিআরের ডিএডি তৌহিদকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জওয়ানকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিদ্রোহে মৃতের সংখ্যা ৭২, এর মধ্যে পরিচয় পাওয়া যায়নি ৫ জনের, নিখোঁজ রয়েছেন ৭১ সেনা কর্মকর্তা। এদিকে একই দিন থেকে আত্মগোপনে থাকা বিডিআর জওয়ানদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’। ১ মার্চ পিলখানার ৪ নম্বর গেটে কয়েক হাজার জওয়ান রিপোর্ট করতে আসেন।
২ মার্চ সেনা সদর সংশোধিত প্রেস ব্রিফিং করে। এতে বলা হয় নিখোঁজ ৭১ নয় বরং ৭ জন। চিফ অব জেনারেল স্টাফ সিনা ইবনে জামালি জানান, ৫৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ওই দিনই অপর এক ঘোষণায় বলা হয়, বিডিআরের নাম পাল্টে যাচ্ছে।
৩ মার্চ গ্রেফতার হন প্রধান আসামি ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি রহিমসহ ৫ জন। লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে। একই দিন বিডিআর ডিজি বলেন, পালাতক জওয়ানের সংখ্যা এক হাজার। পরে অবশ্য এই সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়। ৩ মার্চ বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয় নায়েক সুবেদার মোজাম্মেলের লাশ। বিদ্রোহের পর তিনিই প্রথম হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর শিকার হন।
১২ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আকস্মিকভাবে পিলখানায় এসে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। এই হত্যাকাণ্ডে জেএমবি জড়িত। যদিও পরে তিনি কক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, এটা তার নিজস্ব অনুসন্ধান। কোনো তদন্ত কমিটিই জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। এরই মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহে মদত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের বাবা তোরাব আলী।
বিদ্রোহের তদন্ত শুরু করে সিআইডি। রিমান্ডে নিয়ে জেরার মুখে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায়, বিদ্রোহের দিন সকালেও তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। এর আগে তারা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম ও ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে দেখা করেছিল বলে তথ্য দেয়। এছাড়াও জেরায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক ৬ নেতার নাম আসে। তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। দরবার হল থেকে উদ্ধার হয় সিসিটিভিতে ধারণ করা ১০ ঘণ্টার ভিডিও ফু�বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের নাম পিলখানার ট্রাজেডি। রক্তস্নাত বিডিআর বিদ্রোহের সেই কালো দিন আজ। গত বছরের এদিনে বিডিআর সদর দফতর ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ চলাকালে বিডিআর সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুর শিকার হন তত্কালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল, ৩ মহিলা, বিডিআরের সুবেদার মেজর পদমর্যাদার একজন ডিএডিসহ ৭৪ জন। হত্যা, লাশ গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, মারধর, গুলিবর্ষণ, লুণ্ঠনসহ হেন অপকর্ম নেই যা বিডিআর বিদ্রোহে হয়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা থেকে দ্রুত বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশের বিডিআর ব্যাটালিয়ন ও ক্যাম্পগুলোতে। দেশজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ আতঙ্ক। ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় অবসান হয় বিদ্রোহের। সাজানো গোছানো পিলখানা রূপ নেয় ভয়ঙ্কর এক মৃত্যুপুরীতে। একের পর এক গণকবরের সন্ধান, ম্যানহোল ও গর্ত থেকে উদ্ধার হতে থাকে লাশ আর লাশ। পিলখানাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় এক মর্মস্পর্শী নজিরবিহীন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির। প্রথমদিকে ওই বিদ্রোহকে দীর্ঘদিনের শোষণ, নীপিড়ন, বেতনভাতা, পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য, জরুরি সরকারের আমলে পরিচালিত অপারেশন ডাল ভাতের অর্থ আত্মসাত্ ইত্যাদি কারণে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণের পরিণতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তী তদন্ত, রিমান্ড ও টিএফআই সেলে বিদ্রোহী জওয়ানদের জবানবন্দি, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিডিআর বিদ্রোহ ছিল দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফসল। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার নাম। সরকারি দলের ভাষ্যকাররাও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে ঘটনাকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। বিতর্ক দেখা দেয় তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে। বিদ্রোহের সময় সরকারের ভূমিকা, প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া খুনিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক, সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। বিডিআরের নাম ও পোশাক পরিবর্তন, বিএসএফের আদলে বিডিআর পুনর্গঠন, পুনর্গঠনে বিএসএফের সহযোগিতা নেয়ার প্রসঙ্গ আসাতেও বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
বিডিআর বিদ্রোহের এক বছর পার হলেও এখনও বিদ্রোহের প্রকৃত কারণসহ অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। থেকে গেছে রহস্যের আড়ালে। বহুবার তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার সম্ভাব্য সময় নিয়ে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও গত এক বছর পার হয়ে গেলেও তদন্ত সংস্থা সিআইডি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্য কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজও হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বাংলাদেশ রাইফেলস—বিডিআর প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী সুশৃংখল বাহিনী। দেশের সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী এই বাহিনীর ঐতিহ্য ২১৪ বছরের। গত বছর মাত্র একদিনের মর্মান্তিক ট্রাজিডিতে তাদের প্রায় সোয়া দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য ধুলায় মিশে যায়।
গত বছর এই সময় চলছিল ‘বিডিআর সপ্তাহ ২০০৯’। সপ্তাহের শুরুর দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যান। তার সফরের সময় বিডিআর সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিডিআর সপ্তাহের দ্বিতীয়দিনে পরবর্তী করণীয় ও বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য বিডিআরের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিসহ সব কর্মকর্তা দরবার হলে বার্ষিক দরবারে মিলিত হন।
অপারেশন ডালভাতের অর্থ আত্মসাত্সহ বিভিন্ন ইস্যু এনে ডিজির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় কয়েক বিডিআর জওয়ানের। বেঁচে আসা সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বিদ্রোহের শুরুতে তত্কালীন ডিজি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফেনে কথা বলেন। তিনি সেনাবাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তার ওই অনুরোধের সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের দরবার হলে লাইনে দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে আসতে বলে। বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীরা প্রথমেই ডিজিকে গুলি করে। পরে একে একে অন্য কর্মকর্তাদের হত্যা করে। এ সময় পিলখানার বাইরেও জওয়ানরা দিনভর গুলি ছুড়ে গ্রেনেড ফাটিয়ে আতঙ্কময় পরিস্থিতি তৈরি করে। একটু পরপর শত শত রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা কথা, নানা গুজব। মোবাইল ফোন, উপস্থিত জনতার কাছ থেকে শোনা ওই সব খবর কতর্ব্যরত সাংবাদিকরা মনোযোগ দিয়ে নোট করেন। বিদ্রোহের দিন দুপুরের মধ্যেই সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘিরে ফেলে পুরো এলাকা। কিন্তু কেউই পিলখানার আশপাশে ঘেঁষতে পারছিলেন না। কোনো গাড়ি বা সাধারণ মানুষ দেখলেও পিলখানার ভেতর থেকে মুহুর্মুহু গুলি চালানো হয়। বিমানবাহিনীর একটি টহল হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে চালানো হয় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি। উপস্থিত সেনাবাহিনী ও র্যাব ভেতরে প্রবেশের জন্য সরকারের গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় ছিল। সরকার রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়। প্রথম দিন দুপুরেই দুই সেনা কর্মকর্তার লাশ বেরিয়ে আসে পয়ঃবর্জ নিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে। গুলিতে পিলখানার বাইরে প্রথমদিনেই মারা যান তিন বেসামরিক নাগরিক। আহত হন অন্তত ২০ জন। বিদ্রোহের প্রথমদিন দুপুরেই ভারতীয় মিডিয়ায় বিডিআর ডিজিসহ সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়।
ঘটনার প্রথমদিন দুপুরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম পতাকা হাতে পিলখানায় যান। সরকারি আলোচক ১১০ মিনিট কথা বলেন ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে। নানকের স্কুল জীবনের সহপাঠী ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসে। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা বিডিআর জওয়ানদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। এরই মধ্যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিডিআর চৌকি ও সেক্টর সদর দফতরগুলোতে। বেশিরভাগ এলাকা থেকে সেনা কর্মকর্তারা আত্মগোপন করেন। জওয়ানরা ফাঁকাগুলি করে ভারি অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে মহড়া দিতে থাকে। সীমান্ত হয়ে পড়ে অরক্ষিত। ভেঙে পড়ে বিডিআরের চেইন অব কমান্ড। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পরও বিডিআর জওয়ানরা অস্ত্র সমর্পণ করে এতে রাজি না হয়ে সেনাবাহিনী সরে যেতে বলে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিডিআর জওয়ানদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। তারা বিদ্রোহের দ্বিতীয়দিন দুপুর ২টা থেকে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে। অস্ত্রাগারের দায়িত্ব নেয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। এরই মধ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পিলখানায় থাকা ঘাতক বিডিআর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা কীভাবে পালিয়ে গেল এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
বিদ্রোহের দ্বিতীয়দিন বিকালে ছেড়ে দেয়া হয় ভেতরে আটকে পড়া নারী শিশুদের। ছাড়া পান বিডিআরে কর্মরত বেঁচে যাওয়া ৩৩ কর্মকর্তা। তারা প্রথমে মিডিয়ার মুখোমুখি না হলেও রাতে মিডিয়ার সামনে আসেন। তাদের একজন ছিলেন লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান। তিনি জানান, বিদ্রোহের শুরুতেই ডিজি শাকিল আহমদকে প্রথম গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয় সেক্টর কমান্ডারসহ উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের। বিদ্রোহের সময় কামরুজ্জামান নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। তার ভাষায় ৩ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবেই বেঁচে যান তিনি। তার বর্ণনায়, দরবার হলে ডিজির দরবারের শুরুতেই বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল শাকিল। সূচনা বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই ৫ মিনিটের মাথায় দুই জওয়ান এসে তাদের বিভিন্ন দাবি তোলে। এগিয়ে যান ডিজির দিকে। এরপরই উপস্থিত জওয়ানরা বাইরে চলে যায়। বাইরে থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের সিঙ্গেল লাইনে দাঁড় করিয়ে হাত ওপরে তুলে দরবার হল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। ডিজি ছিলেন সবার সামনে। তিনি দরবার হল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ৪ জওয়ান ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। পেছন থেকে আরও বিডিআর জওয়ানরা এসে অপর কর্মকর্তাদেরও ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ডিজি ও কর্মকর্তাদের হত্যার পর মেজর জেনারেল শাকিলের বাসায় হানা দেয় বিডিআর সদস্যরা। তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে তাকে নৃশংস নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। বাসায় বেড়াতে আসা আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দেলোয়ার ও তার স্ত্রীকে বাসার ভেতরেই হত্যা করে বিডিআর জওয়ানরা।
পরদিন বৃহস্পতিবার বুড়িগঙ্গার স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে বেরিয়ে আসে আরও ৭টি লাশ। ধীরে ধীর পরিষ্কার হয়ে পড়ে ভেতরে অবস্থানরত সেনা কর্মকর্তার পরিণতি। দ্বিতীয় দিন বিকালে পিলখানার দু’কিলোমিটার এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। সবার মধ্যে আরেক দফা ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক। শোনা যায়, বিডিআর সদর দফতরে সেনা অভিযানের কথা। এ সুযোগে পিলখানা ছেড়ে পালিয়ে যায় বিদ্রোহী জওয়ানরা। তাদের অনেকেই অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামালসহ বিভিন্ন স্থানে আটক হয়। সন্ধ্যার আগে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল বিডিআর সদর দফতরে প্রবেশ করে। আসে পুলিশ, র্যাব, দমকল কর্মীসহ বিভিন্ন সংস্থা। ওই দিন রাতে ডিজির বাসা থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ম্যানহোলের ভেতর থেকেও এক সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার সকালে লাশের সন্ধানে অভিযান শুরু করে উদ্ধারকারী দল। পিলখানার গো-খামারের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি লাশ। এর পর পাওয়া যায় গণকবরের সন্ধান। একটি গর্ত থেকে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৩৮টি লাশ। পিলখানার মরচ্যুয়ারির পাশে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় প্রথম দফায় দুপুরে ১৮টি পরে আরও ২০টি লাশ ওঠানো হয়। তৃতীয় দিনের শেষে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭। লাশের সন্ধানে চলতে থাকে উদ্ধার অভিযান। চতুর্থ দিন আরও ৩টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এখান থেকে উদ্ধার হয় আরও কিছু লাশ। কিছু লাশ পাওয়া গেছে চোখবাঁধা অবস্থায়। তাদের হাতও বাঁধা ছিল। এ থেকে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছেন, দরবার হলের বাইরেও কয়েক দফায় বেঁচে যাওয়া কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বেঁচে আসা কর্মকর্তারাও জানান, বেশ কয়েক দফায় তাদের মৃত্যুর মুখোমুখি পড়তে হয়। ঘাতকরা কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ওই কমিটির প্রধান করা হয় সাবেক সচিব আনিস উজ জামানকে। সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি হয় কোয়াটার মাস্টার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে।
শ্বাসরুদ্ধকর বিডিআর বিদ্রোহের পর ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকে দ্রুত। বিদ্রোহের পর ২৮ ফেবু্রয়ারি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এই দিন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল ইসলামকে। বিদ্রোহের সময় যারা পিলখানা থেকে পালিয়ে যায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনা সদরে মিলিটারি ইমার্জেন্সির তত্কালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ হাসান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ৭২ সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন। ৬৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, সেনাবাহিনী অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজনৈতিক সমাধানের। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, সেনাবাহিনী অ্যাকশনে গেলে বহু সেনা কর্মকর্তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিডিআর বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় তারা বিডিআর বিদ্রোহ দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের অন্যদের তত্পরতার কঠোর সমালোচনা করেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান উপস্থিত সেনা সদস্যরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ‘নো নো নেভার’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সময় সেনা কর্মকর্তারা বিদ্রোহের দিন বিডিআরের নিহত ডিজির ফোনের কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ওই সময় সেনাবাহিনী অথবা র্যাব অ্যাকশনে গেলে সেনা অফিসারদের মরতে হতো না। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, কেন সেনা অফিসারদের এভাবে মরতে হলো। শুধু মারাই হয়নি, কীভাবে ১১ অফিসারের মৃতদেহ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে, এসব বর্ণনাও তারা দেন। তারা আরও বলেন, কারা কীভাবে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের পালানোর সুযোগ করে দিল। ১৬৮ অফিসার যেখানে পালানোর সুযোগ পেলেন না সেখানে প্রায় ৯ হাজার সৈনিক কীভাবে পালিয়ে গেল। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জবাব দিন, আমরা জবাব চাই।
ঘটনার ৪ দিন পর লালবাগ থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, লাশগুমসহ নানা অভিযোগ এনে বিডিআরের ডিএডি তৌহিদকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জওয়ানকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিদ্রোহে মৃতের সংখ্যা ৭২, এর মধ্যে পরিচয় পাওয়া যায়নি ৫ জনের, নিখোঁজ রয়েছেন ৭১ সেনা কর্মকর্তা। এদিকে একই দিন থেকে আত্মগোপনে থাকা বিডিআর জওয়ানদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’। ১ মার্চ পিলখানার ৪ নম্বর গেটে কয়েক হাজার জওয়ান রিপোর্ট করতে আসেন।
২ মার্চ সেনা সদর সংশোধিত প্রেস ব্রিফিং করে। এতে বলা হয় নিখোঁজ ৭১ নয় বরং ৭ জন। চিফ অব জেনারেল স্টাফ সিনা ইবনে জামালি জানান, ৫৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ওই দিনই অপর এক ঘোষণায় বলা হয়, বিডিআরের নাম পাল্টে যাচ্ছে।
৩ মার্চ গ্রেফতার হন প্রধান আসামি ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি রহিমসহ ৫ জন। লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে। একই দিন বিডিআর ডিজি বলেন, পালাতক জওয়ানের সংখ্যা এক হাজার। পরে অবশ্য এই সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়। ৩ মার্চ বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয় নায়েক সুবেদার মোজাম্মেলের লাশ। বিদ্রোহের পর তিনিই প্রথম হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর শিকার হন।
১২ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আকস্মিকভাবে পিলখানায় এসে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। এই হত্যাকাণ্ডে জেএমবি জড়িত। যদিও পরে তিনি কক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, এটা তার নিজস্ব অনুসন্ধান। কোনো তদন্ত কমিটিই জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। এরই মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহে মদত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের বাবা তোরাব আলী।
বিদ্রোহের তদন্ত শুরু করে সিআইডি। রিমান্ডে নিয়ে জেরার মুখে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায়, বিদ্রোহের দিন সকালেও তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। এর আগে তারা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম ও ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে দেখা করেছিল বলে তথ্য দেয়। এছাড়াও জেরায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক ৬ নেতার নাম আসে। তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। দরবার হল থেকে উদ্ধার হয় সিসিটিভিতে ধারণ করা ১০ ঘণ্টার ভিডিও ফু�বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের নাম পিলখানার ট্রাজেডি। রক্তস্না
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×