somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: নতুন শুরু

১১ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

শেষবারের মত যেদিন লাবনীর সাথে আমার দেখা হয়, ওর মাথায় আলতো ছুয়ে বলেছিলাম - "চলে যাও মেয়ে। তোমার শহরে অন্য কারো অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সুখ দুঃখ গুলো তার সাথেই ভাগাভাগি করে নিয়ো, প্রকান্ড ব্জ্রপাতের আওয়াজে তার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলো ভয়ে কিংবা মুষলধারে বৃষ্টিতে তার হাত হাত ধরে বৃষ্টিস্নান করো। আমি বরং একলা পথে শহরের অলিতে গলিতে হেটে বেড়াবো, তোমায় মুক্তি দিলাম মেয়ে। ভালো থেকো।,নিজের খেয়াল রেখো"

লাবনী মায়াভরা মুখে বলেছিলো - " তুমি খুব ভালো একটা মানুষ৷ সব সময় নিজের খেয়াল রেখো৷ " মুচকি হেসে চলে এসেছিলাম সেদিন আর মায়া বাড়াতে চাইনি। আর দেখা হয়নি আমাদের কিংবা বলা যায় নিজেই ওর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। মায়া খুব খারাপ একটা ব্যাপার। একবার কারো মায়ায় জড়িয়ে গেলে সেখান থেকে নিজে সরিয়ে নেয়া খুব কঠিন৷ সেই কঠিন কাজ টুকু করেছিলাম, কিভাবে করেছিলাম জানিনা তবে শেষ পর্যন্ত পেরেছিলাম।

মাঝে মাঝে জোছনা ছড়ানো মায়াবী রাতে প্রচন্ড মিস করতাম, কত স্বপ্ন বুনতাম আমরা।শহরের আনাচে কানাচে কি সুন্দর স্বপ্ন ডানা মেলে গুলো উড়ে বেড়াতো আর আমি সেখানে তাদের সাথে লুকোচুরি খেলতাম। সময় যেমন কারো জন্য থেমে থাকেনা তেমনি কেউ কারও জন্য খারাপ থাকেনা বরং ভালো থাকে অথবা ভালো থাকার নিরন্তর চেষ্টা করে প্রতিনিয়ত। জীবন তো এমনই!! কেউ পেয়ে ভালো থাকে আবার কেউ না পেয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে যায়। আমিও নিজের আবেগ অনূভুতি গুলোর বিসর্জন দিয়ে নিরন্তর ভালোর থাকার চেষ্টায় ছিলাম,আছি।

২।
বাস্তবমুখী জীবনের আবেশে নিজেকে পাথর বানিয়ে ফেললাম। একটা চাকরিতে ঢুকে নিজেকে কাজের ভেতর সপে দিলাম। তবে হাপিয়ে উঠেছিলাম একসময়।
অফিসের থেকে ছুটি নিয়ে মা কে যখন দেখতে গিয়েছিলাম । মা খুব করে বিয়ের জন্য ধরেছিলো আমি আর মানা করিনি কারন জানি কাজ হবেনা।
শিরিন আপার বিয়েতে নাকি মেয়েটাকে দেখেছিলো মা। এটুক শুধু শুনেছি এর বেশি শোনার ইচ্ছে আর হয়নি৷ আসলে নতুন করে কারও মায়ায় নিজেকে জড়ানোর ইচ্ছেটাই আজকাল মরে গেছে। তবু মায়ের কথা ফেলতে পারিনি। সারাদিন কানের কাছেই মেয়েটাকে নিয়ে কথা বলতো, না চাইতেও শুনতে হতো।
মেয়েটার নাম নীলু, মায়ের থেকে শুনেছিলাম যদিও। অবশেষে ওকে দেখতে যেতেই হলো কেননা মা আমার কোন কথাই শুনবে না৷ এখানেই বিয়ে করতে হবে।
নীলুকে যখন সামনে আনা হয়, অবাক হয়েছিলাম ওকে দেখে, অন্যলোকের মায়ায় ভর করেছে ওর মধ্যে। কেমন একটা স্নিগ্ধতা জড়ানো আছে ঐ চেহারায়।
আমাদের যখন একান্তে কথা বলতে পাঠিয়েছিলো আমি তাকে বলেছিলাম -

" আপনাকে আমি হয়তোবা কখনো ভালোবাসতে পারবোনা, এ শহরে কোন একজনের আনাগোনা ছিলো কিন্তু সে এখন আর নেই চলে গেছে কিন্তু তার মায়ায় নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলেছি তাই চাইলেও আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারবোনা। কথাগুলো লুকোতে পারতাম কিন্ত নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা তাহলে কখনো, আপনি চাইলে এই বিয়েতে রাজি নাও হতে পারেন। ভেবে দেখবেন কেমন৷ আর ভালো থাকবেন সব সময়। "

আমার কথা গুলো শুনে নীলু নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ছিলো, কোন কথা বলেনি৷ আমি চলে এসেছিলাম সেদিন ।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার নীলু বিয়েতে রাজি হয়েছিলো৷ বাসর রাতে ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম -
"রাজি হলেন কেন আপনি? " নীলু মুচকি হেসেছিলো শুধু। আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ ৭ মাস।
কখনো ঠিকমত কথা বলিনি তার সাথে। অফিস থেকে বাসায় এসে নিজের মত থাকি, বই পড়ি আর রান্না হলে নীলু ডেকে দিলে খেয়ে শুয়ে পড়ি৷ নিজের ভেতরে ভয়াবহ অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।
খুব অপরাধবোধ থেকে ওকে বলি- "চলে যান আপনি। আমার থেকে তো অবহেলা ছাড়া তো কিছু পাচ্ছেন না, কেন আছেন এখনো? " মুচকি হেসে আমায় বলেছিলো -
" এই শহরে একদিন বৃষ্টি নামবে সেই বৃষ্টিতে আপনার সকল কষ্ট মুছে দিবো আমি"। অবাক চোখে সেদিন তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। জানিনা কি হয়েছিলো তবে নিজের ভেতর একটা অবশ অনুভূতির আবেশ ছড়িয়ে গিয়েছিল।

৩।

আজকাল নিজের ভেতর কেমন একটা অন্য রকম অনূভুতির টের পাচ্ছি। অনেক দিন আগে কারো জন্য যেমন অনূভুতি হয়েছিলো ঠিক সেরকম।
হুট করে দেখলাম নীলু হাতে একটা কাগজ গুজে দিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো৷ কাগজ খুলতেই দেখলাম গোটা গোটা হাতে লেখা -
"এইযে খারাপ মানুষ,
প্রতিদিন রাতে আপনি যে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন এতে আমার ঘোর অসুবিধা হয়। ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা আমি৷ সারাদিন ঘুম ঘুন চোখে কাজ করতে হয়। আবার কাজ করতে গেলেও যে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন তাতেও কিন্তু কাজ করতে ঘোর সমস্যা হয়, গত সপ্তাহে এই জন্য কিন্তু হাত কেটে ফেলেছিলাম।আড় চোখে আপনাকে দেখতে গিয়ে বটিতে লেগে আংগুল কেটে গিয়েছিলো। সেসবের তো আপনার খোজ নেই । আপনার জন্য ঠিকমত চুল ঝাড়তে পারিনা, চুল এমনিতেই লম্বা তার উপর আবার মুছতে পারিনা আপনার জন্য, ঠান্ডা লেগে অবস্থা কাহিল হয়েছিলো কিছুদিন৷ সে খবর তো জনাবের মাথায় নেই, পারেন তো শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে। নিজেকে মেলে ধরুন জনাব। আবেগ অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে নেই। সময় থাকতে মেলে ধরুন।নিজেকে " -

লেখাগুলো পড়ে পুরোপুরি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে গেলাম। প্রতিদিন রাতে নীলুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি আজকাল। কেন তাকাই জানিনা,
আবার যখন সে গোসল থেকে বের হয়ে চুল গুলো ঝাড়তে থাকে নিজেকে হারিয়ে ফেলি কেমন এক ঘোরের ভেতর ।
।কাজ করতে করতে ওর ঘর্মাক্ত মুখে যে ক্লান্তি কিংবা মায়া ভর করে তার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।

শহরের অলিতে গলিতে স্বপ্ন গুলো ডানা মেলতে শুরু করেছে আজকাল, নিজেকে আটকাতে চেয়েও পারিনি আর৷
"শীতকালে গাছের পাতা গুলো শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে যায় তারপর আবার সেগুলো নতুন করে গজায় একদম সবুজ হয়ে। আপনার শহরের আনাচে কানাচে যে স্বপ্ন গুলো ডানা মেলতে চাইছে সেগুলো কে কি উড়তে দিতে পারেন না আপনি? আসুন না নতুন করে সব শুরু করি, আপনার শহরের কালো মেঘ গুলো কে সরিয়ে সেখানে নীল মেঘগুলোকে আশ্রয় দিন৷ আমি ডানা মেলে সেখানে উড়তে চাই সব সময় । "

নীলুর কথা শুনে কেমন মেঘ জমতে শুরু করলো চোখে৷ অনেক দিন , বেশ অনেক দিন পর আজ বৃষ্টি নেমেছে আকাশে৷ কালো মেঘ সরে গিয়ে সেখানে আজ নতুন গান গুলো ভিড় করেছে। বৃষ্টির পর রঙধনুর সাত রং এ আকাশ যেভাবে আলোকিত হয়ে যায় আজ তেমন লাগছে৷ মনে হচ্ছে এইতো জীবন,
এই মূহুর্তটার জন্য আরো হাজার বছর বেচে থাকা যায়৷ এই আহবান কে দূরে ঠেলে দেয়া যায়না৷
শহরকে আজ নতুন করে সাজাতে হবে সেখানে তোমার আর আমার স্বপ্ন গুলো ডানা মেলে আকাশে উড়বে।
নীলুকে বলি..
প্রিয়তমেষু,
এসো বৃষ্টিতে ভিজি।
নিজেদের স্বপ্ন গুলোকে
এসো নতুন করে সাজাই।
শহরের অলিতে গলিতে এসো
বীজ বুনি স্বপ্নের
যেথায় শুধু তোমার আমার
ভালোবাসার স্বপ্নিল কাব্যগুলো
মাথা তুলে দাঁড়াবে।

নীলুর চোখে মেঘের আনাগোনা তবে থামাবোনা আজ, এই শেষ মেয়ে আর তোমায় কাদাবোনা।
সারাজীবন নাহয় সুখ গুলোকে একসাথে বয়ে বেড়াবো আর দুঃখকে আড়ি দিয়ে দিবো ভালোবেসে।



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:১২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×