somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল অথবা ইট পাথরের যান্ত্রিক শহরের গল্প

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.


অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যখন দেখলাম বৃষ্টি পড়ছে তখন নিজের থেকে অসহায় আর অন্য কাউকে মনে হলোনা। কাজ করতে করতে বেশ হাপিয়ে উঠেছিলাম। সুমন ভাইকে বলতেই চলে যেতে বললো। উনি নাকি সামলে নেবে সব৷ ব্যস বের হয়ে যাওয়া কিন্তু বিপত্তির শেষ নেই এই শহরে। বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যেই মানুষের কার্যকলাপ দেখতে লাগলাম। দুনিয়া হলো এক রঙ্গশালা সেখানে মজাদার জিনিসের কমতি নেই। আমার মনে হয় বৃষ্টিতে বেশ কিছু শ্রেনীর মানুষের কষ্ট হয় বেশী। এর মধ্যে কপোত কপোতিদের সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয়, কেননা দু দন্ড শান্তিতে প্রেম করার জন্য বসা কিন্তু সেখানেও বৃষ্টি হানা দিয়ে তাদের প্রেম ভেস্তে দেয়।

এক ভিক্ষুক দেখলাম এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ভিক্ষা করছে। আরেক মা কে দেখলাম তার বাচ্চাকে নিয়ে বৃষ্টিতে জুবুথুবু বসে আছে। জীবন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম, কারো কাছে বৃষ্টি আসা মানেই বৃষ্টিবিলাস আর কারো কাছে বৃষ্টি আসা মানেই ক্ষতি। আমি কোন দলে পড়ি সেটা ভাবার বিষয়। তবে এখন বেশ মজার একটা জিনিস খেয়াল করলাম, এক রুপবতী তরুনী হাতে দুটো আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তবে ঠিক সুস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, সমানে দুটো আইস্ক্রিম ই খাচ্ছে আর টিস্যু দিয়ে নাক মুছছে। বুঝলাম যে ইনি সেই মাপের একজন আইসক্রিম খোর এবং তার ঠান্ডা লাগার পর ও সে এখন আইসক্রিম খাচ্ছে। বৃষ্টি কমার পর তার সামনে যেয়ে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বললাম -" ঠান্ডার মধ্যে আইসক্রিম খাওয়াটা ঠিক না। এতে দাতের মাড়িতে কিংবা টনসিলে সমস্যা হতে পারে ম্যাডাম। " তারপর চলে আসলাম । পিছনে ফিরে হয়তো দেখতে পেতাম এক অসম্ভব রুপবতী তরুনী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর টিস্যু দিয়ে নাক মুছছে।

২.
"চা খাবেন? আমি কিন্তু ভালো চা বানাতে পারি। " - পিছু না তাকিয়েই বুঝতে পারি নবনীতা নিঃশব্দে ছাদে উঠে এসেছে। রাতের বেলায় ছাদে আশা টা একধরনের নেশার মত৷ পরিবেশ নিশ্চুপ-নিস্তব্ধ থাকে, দূর থেকে বাশির আওয়াজ ভেসে আসে, মৃদু বাতাস বয়ে বেড়ায়। আজকের আকাশটা মেঘলা,কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। তারাদের আজকে ছুটি হয়েছে৷ চাঁদটা মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। সন্ধ্যা বেলায় বৃষ্টি হওয়াতে কেমন একটা গুমোট ভাব আছে পরিবেশে। কোথা থেকে যেন ব্যাঙ ডাকার আওয়াজ আসছে।
-"আবহাওয়া টা সুন্দর তাইনা। ইচ্ছে হচ্ছে মেঘগুলোকে ডেকে বলি যে-'তোমার সব কষ্ট গুলো আমাকে দিয়ে দাও। আমি বরং তুমি হয়ে তোমার বৃষ্টি গুলোকে নিজের করে নেই।তুমি বরং আজ ছুটি নাও '। "কালো মেঘগুলো চাঁদটাকে যে ঢেকে দিয়েছে দেখেছেন? "। "

আমার কথা শুনে মুচকি হেসে ফ্লাস্ক থেকে চা এগিয়ে দিলো ।
-"আজকের রাতটা খুব দীর্ঘ হবে এই কামনা করছি। চাঁদ টা যখন মেঘেদের আড়াল থেকে বের হয়ে আসবে প্রকৃতি একটা স্বর্গীয় রূপ ধারন করবে।
যেই রূপ দেখে এক সহস্র যুগ পার করে দেয়া যাবে। "
মাঝে মাঝেই মেয়েটার ব্যবহারে বা কথায় আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাই। মেয়েটার চোখের মাঝে একটা অদ্ভুত বিষন্নতা আছে, একদিন সাহস করে বলেছিলাম -"আচ্ছা শুনুন, আপনার শহরে আজকাল কালো মেঘেদের আনাগোনা। বৃষ্টি হয়ে সব গুলো মেঘেদের ঝড়িয়ে দিন। শহরের অলিতে গলিতে জোনাকিদের ঠাই দিন।" মেয়েটা বেশ চমকে গিয়েছিলো। -"সব শহরে আলো থাকেনা। এই শহর তিমিরাচ্ছন্ন থাকুক। জোনাকি গুলো না হয় অন্য কারো শহরে উড়ে বেড়াক। " কথাটা বলেই চলে গিয়েছিলো সেদিন আমার সামনে থেকে। কিছু বলতে পারিনি সেদিন, অনুভব করেছিলাম তার শহরে খুব করে মেঘেদের আনাগোনা । আকাশ থেকে মেঘগুলো সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, চাদটা স্পষ্ট হচ্ছে একটু একটু করে।চারদিকে চুপচাপ নীরব। এই ছোট নগরীতে দুটো মানব মানবী খোলা আকাশের নীচে নিঃশব্দে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা উপভোগ করছে।

৩.
শরৎ আসি আসি করছে, এই কদিন বৃষ্টি হচ্ছে খুব। বৃষ্টি যখন তখন এসে প্রকৃতি কে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। শরতের আকাশ খুব সুন্দর হয়,আকাশে কালো মেঘেদের আনাগোনা কমে যায়, তারা গুলো আকাশে জ্বলজ্বল করে। আমার শহরে আজকাল জোনাকিদের আনাগোনা। রাতভর আলোকিত করে রাখে শহরকে। অনুভূতি গুলো আজকাল কেন জানি বুঝে উঠতে পারছিনা মনে হচ্ছে কেমন ঘোরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এই অনুভূতির নাম দিয়েছি নবনীতা। মেয়েটা আজকাল মাথার ভেতর গেথে গেছে, চাইলেও তাকে নিয়ে ভাবনা গুলো সরিয়ে ফেলতে পারছিনা। অফিস থেকে ফেরার পথে সেদিন দুটো চকলেট কিনেছিলাম খেয়ালের বশে, যদিও চকলেট পছন্দ করিনা কিন্তু মানব মন বড় বিচিত্র, কখন কি চায় বোঝা মুশকিল। সিড়ি দিয়ে উঠার সময় নবনীতা কে দেখে চকলেট দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বললাম - " নিন, আপনার জন্য উপহার৷ আপনি চকলেট খুব পছন্দ করেন সেটা আমি জানি তবে কিভাবে জানি তা বলবোনা । " অসম্ভব রকমের অবাক হয়েছিল।মেয়েটা। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাসায় চলে এসেছিলাম। আজকাল নবনীতার চোখের মাঝে নিজেকে আকতে ইচ্ছে করে৷ ইচ্ছে করে জোছনা রাতে নবনীতার হাত ধরে জোছনাবিলাস করবো। নবনীতা দেখবে চাঁদ, প্রকৃতি আর আমি দেখবো নবনীতাকে। মনের মধ্যে কাব্যগুলো জীবন্ত ছবির ন্যায় ধরা দিতে চায়। গল্পগুলো চায় পরিসমাপ্তি।

ছাদে উঠে দেখলাম নবনীতা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ অবাক হলাম। মেয়েটা সাধারনত এত তাড়াতাড়ি ছাদে উঠে আসে না। কিংবা বলা যায় চাঁদ যখন মাথার উপর উঠে আসে তখন নবনীতা আসে। আমার দিকে তাকিয়ে স্ফীত হেসে বললো -" আজকে আপনার আগে চলে এলাম জনাব। জোছনার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। " মেয়েটাকে সজীব মনে হল খুব। পাশাপাশি দাড়িয়ে চুপচাপ প্রকৃতির মায়া উপভোগ করছিলাম।
-" ইট কাঠের এই যান্ত্রিক নগরীতে আমরা মানুষগুলো দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি৷ এই যান্ত্রিকতার ভিড়ে আমি যদি বলি যে আমি আপনার শহরে রংধনু হয়ে আলোকিত করে দিতে চাই, আপনি কি আমায় অনুমতি দিবেন?। আপনার কাব্যগুলো যেখানে থেমে গেছে আমি আর আপনি মিলে কাব্যগুলোকে আবার নতুন করে লিখব। আপনার সকল দুঃখ কষ্ট গুলোকে আমরা দুজনে বরং ভাগ করে নিবো। দিবেন কি সে অনুমতি?। উত্তরগুলো এখনের জন্য বরং তোলা থাকুক। কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য, হাতে নিয়ে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া। আমি চাইবো একটা রক্তাভ লাল শাড়ি পড়ে আপনি আসবেন ঠিক প্রথম যেদিন যেমন করে আপনাকে দেখেছিলাম ঠিক তেমন করে। " - অবাক তাকিয়ে আমার কথাগুলো শুনে কোন প্রতিভাষ না দিয়েই নবনীতা চলে গেল৷ আমি জানিনা এরপর কি হবে। আসলেই কি সে আমার হবে নাকি সব মিথ্যে মরীচিকা। আমরা মানুষেরা মরীচিকার পিছনে ছুটতে ছুটতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই কিন্তু আসল মানুষটাকে আমরা চিনতে পারিনা।



সময়ের পরিক্রমায় আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি নবনীতার জন্য। হাতে নিয়ে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল। প্রতীক্ষার প্রহর গুলো অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কাটে। সময় গড়িয়ে যায়, সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে। আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়ছে কেন যেন মনে হচ্ছে আকাশ ও আজ উপহাস করছে। চোখের মধ্যে মনে হলো কিছু পড়েছে। চোখের কানা বেয়ে জল বের হচ্ছে ,।প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়েই এ জীবন। অন্য এক জন্মে না হয় তাকে আমি আমার করে নিবো। আজ বরং মিশে যাই প্রকৃতির মাঝে।
।.

পরিশিষ্ট......


বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো বলে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। নগরীর মানুষ প্রতিদিনের কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাচ্ছে কাক ভেজা হয়ে। আধার নেমে আসবে একটু পর। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে যাবে শহর। দুটো মানব মানবী এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হেটে যাচ্ছে গন্তব্যহীন ভাবে। কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তাদের দিকে । মেয়েটা পড়েছে রক্তাভ কাল শাড়ি, হাতে ধরে আছে একগুচ্ছ লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া ফুল। মেয়েটার একটা হাত আকড়ে ধরে আছে ছেলেটা, এমনভাবে যেন হারিয়ে যেতে দেবেনা তাকে। তবে কেউ খেয়াল করলোনা যে ছেলেটা একটু পর পর চোখ মুছছে সেটা চোখের জলে নাকি বৃষ্টির জলে বোঝার উপায় নেই। সব কিছু বুঝতে হয়না। কিছু জিনিস না হয় না বোঝাই থাকুক । হয়তোবা একটা নতুন রুপকথা শুরু হয়েছে শহরে। যে রুপকথায় আছে রাজা রানীর গল্প, আছে রাজ্যসহ রাজকন্যা পাওয়ার গল্প। আমরা নাহয় শহর দেখি, যান্ত্রিক শহর। সে শহরের আনাচে কানাচে কোথাও হয়তো ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। যেথা হতে শুরু হবে এমন আরো নাম না জানা রুপকথার গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×