ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ভারতকে পণ্য আনা-নেওয়ায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সব আনুষ্ঠানিকতা 'যতো দ্রুত সম্ভব' সম্পন্ন করা হবে বলে ঢাকা-দিল্লী শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী যতো দ্রুত সম্ভব এ দুটি চুক্তি সম্পাদনের কাজ শেষ করতেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে বুধবার ৬৫টি দফা সম্বলিত এই যৌথ ঘোষণা আসে।
এতে বলা হয়, "চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ভারতীয় পর্যন্ত পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি যতো দ্রুত সম্ভব শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী।"
গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময়ও দুই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ দফার একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সফরের অগ্রগতি পর্যালোচনায় এবং প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা পৌঁছান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সফরে দুই প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে একটি 'রূপরেখা' চুক্তিতে সই করলেও তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে কোনো লিখিত রফায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় দুই দেশ। ট্রানজিট বাস্তবায়নে দুই দেশের মধ্যে সম্মতিপত্রও বিনিময়ের কথা থাকলেও মঙ্গলবার তা হয়নি।
দৃশ্যতঃ তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় অনেকটাই মলিন হয়ে যায় মনমোহন সিংয়ের বহু প্রতীক্ষিত এই সফর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ঢাকা-দিল্লি শীর্ষ বৈঠক শেষে শুরু হয় চুক্তি স্বাক্ষর। 'রূপরেখা' চুক্তি ছাড়াও স্থল সীমা নিয়ে একটি প্রটোকল এবং কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই পক্ষ।
চলতি বছরের শুরুতে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর হয়ে ভারতের পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যন্ত্রপাতি ত্রিপুরায় পরিবহনের মধ্য দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালুর বিষয়ে যৌথ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মনমোহন সিং।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রথমে নৌ ও স্থল পথে ভারতের পশ্চিম ও পূবাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো মধ্য পণ্য পরিবহনের জন্য গত বছর আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে বাংলাদেশের পঞ্চম 'পোর্ট অব কল' এবং দ্বিতীয় 'ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট' ঘোষণা করা হয়।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, "ভারতীয় পণ্য আরো দ্রুত খালাস ও পরিবহনের জন্য আশুগঞ্জে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়েও দুই পক্ষ একমত হয়েছে।"
এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উন্নয়নের বিষয়টি তরান্বিত করতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। এই রেলপথের উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে ভারত।
তিস্তা চুক্তি
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ন্যায্যতার ভিত্তিতে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টনে অন্তর্বতীকালীন চুক্তির জন্য মূলনীতি এবং কাঠামোর মতো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। যতো দ্রুত সম্ভব এ চুক্তি সম্পদনের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
গত ১৮ মাস ধরে মধ্যস্থতার পরও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায় এ দুটি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। অথচ দুই দেশের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছিল, চুক্তির জন্য খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং মনমোহনের এবারের সফরেই চুক্তিতে সই হবে।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, মানু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়েও যৌথ নদী কমিশন, সচিব ও কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
"টিপাইমুখে বাধ নির্মাণ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ দিল্লি নেবে না।"
আসামি প্রত্যর্পণ
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তিও বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীই গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনি ও কাঠামোগত দিকগুলো চূড়ান্ত করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন তারা।
অপরাধ বিষয়ক পারস্পরিক আইনি সহায়তা, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস মোকাবিলা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ ও মাদক পাচার বন্ধে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়েছিল সেগুলো কার্যকর হওয়ায় দুই প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
দুই দেশের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি হলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে সেদেশের সরকারের কাছে হস্তান্তরের পথ তৈরি হবে।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া অনুপ চেটিয়া বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে বন্দি আছেন। দিল্লি অনেক দিন ধরেই তাকে ফেরত চাইলেও চুক্তি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
Click This Link