রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই যে কারণে রবির মনটা খারাপ হয়ে যায় তাহল স্কুলে যেতে হবে।রোজ রোজ সকাল করে ঘুম থেকে উঠতে হবে-এটাও একটা বড় হ্যাপা।কেনরে বাবা,সকাল আটটায় স্কুল না দি্যে দশটায় দিলে কী এমন ক্ষতি হ্য় শুনি!মালা দের স্কুল তো দশটায় শুরু হয়,আমাদের টা কেন দশটায় শুরু হয়না? তাহলে একটু আরাম করে ঘুমানো যেত।ঘুম থেকে উঠে এইসব ভাবতে ভাবতে রবি চোখ কচলাচ্ছে, এমন সময় রান্না ঘর থেকে শোনা গেল মেজ আপার ডাক-
"রবি উঠেছিস?তাড়াতাড়ি মুখ ধুযে নাস্তা করতে আয়।স্কুলে যেতে হবেনা?"
এই মেজ আপাটা হয়েছে আরেকটা ঝামেলা।সব সময় খালি পড় আর পড়।নিজে তো দুই বারে মেট্রিক পাশ করেছে, আবার মানুষ কে বলে পড়তে।বড় আপার বি্যে যখন হয় তখন রবি ছিল খুব ছোট। তার কিছুই মনে নেই।জ্ঞান হবার পর থেকেই রবি দেখছে মেজ আপাকে গিন্নি গিরি করতে।তবে বেশিদিন আর এই বাড়ীতে তার গিন্নি গিরি করা চলবেনা।খুব শিগগিরই তার বি্যে হয়ে যাচ্ছে।তাই বলে মেজ আপাকে যে রবি খুব বেশী অপছন্দ করে তা না।বরং পছন্দই করে।মেজ আপা তাকে খাইয়ে দেয়,অনেক মজার মজার গল্প শোনায়,ঘুম পাড়িয়ে দেয় আর মাঝে মাঝে যখন "ছুটু ভাই" তাকে কোন কারণে মারতে আসে তখন এই মেজ আপাই তকে বাঁচায়।রবির এই "ছুটু ভাই" আসলে তার মেজ ভাই।তিন ভাই আর পাঁচ বোনের মধ্যে রবিই সবার ছোট।আট আটটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে রবির মায়ের শরীর ভগ্নপ্রায়।তাই রবির দেখাশোনার ভারটা গিয়ে ঠেকেছে মেজ আপার কাঁধে।
"কইরে রবি, বাথরুমে এতক্ষণ লাগে?" মেজ আপা আবার তাড়া দেয়।
পাশের ঘর থেকে মা অসুস্হ কন্ঠে মেজ আপাকে বলেন "আকাশের অবস্হা তো ভালো না।বৃষ্টি আসতে পারে। আজকে ও স্কুলে না গেলে কি হয়না?"
মায়ের কথায় রবি তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে।আরে তাইতো!আকাশে তো অনেক মেঘ!!ঘুমের ঘোরে বাথরুমে যাওয়াতে আকাশটা সে খেয়াল করেনি।রবির মনে খুশির জোয়ার। বহুদিন পর তার মনের আশা পূরণ হয়েছে।কতদিন সে চেয়েছে সকালের দিকে একটু বৃষ্টি হোক।তাহলে আর স্কুলে যাওয়া লাগবেনা।কিন্তু না। সকালে কখনই বৃষ্টি হবেনা।হবে কখন-বিকালে।যখন খেলার সময়।খেলাটায় মাটি করে দেয় বৃষ্টি।রবি খুব বিরক্ত হয়।মসজিদের হুজুর বলেছেন বৃষ্টি নাকি আল্লাহর হুকুমে হয়।তাই বৃষ্টি কখন হয়-না হয় সেটা নিয়ে বিরক্ত হওয়া উচিত না।কিন্তু বিরক্তি আসলে সে কী করবে?তবে আজকে মনে হয় আল্লাহ তার কথা শুনেছেন।আকাশে সত্যিই অনেক মেঘ।
"না, না , বৃষ্টি আসবেনা।স্কুলে যেতেই হবে।খালি ফাকিবাজী।আর তুমিও ওকে লাই দিওনা মা"-মেজ আপার কথাটা রবি'র বাড়া ভাতে যেন ছাই দিয়ে দেয়।
বিরস বদনে রবি খেতে বসে।রুটি -কলা-দুধ।বিরক্তিকর।'বিরক্তিকর' শব্দটা রবি নতুন শিখেছে।বাংলা বইয়ের "শব্দার্থ" থেকে নয়।মেজ আপা হবু দুলাভাইকে যে চিঠিটা লিখেছিল আর তাকে দিয়ে ডাকপিয়নের কাজটা করিয়ে ছিল, তখন সে চিঠিটা পড়েছিল।তাতে লেখা ছিল "আপনি যে বারবার আপনার নাক চুলকান, সেটা আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগে"।সেখান থেকে রবি বুঝেছিল বিরক্তিকর মানে অপছন্দ করার মত কিছু একটা।অবশ্য ডাকপিয়নের কাজটা করে রবি আর্থিকভাবে এবং অবশ্যই খাদ্যগতভাবে কিছুটা লাভবান হয়েছিল। হবু দুলাভাই তাকে বাজারের হোটেল থেকে দুইটা বড় বড় রসগোল্লা খাইয়েছিল আর দশ টাকা দিয়েছিল আংটা (মার্বেল) কেনার জন্য।
রবি এসব কথা ভাবে আর খায় ।খেতে খেতে সে ইচ্ছা করে দেরী করে।যদি বৃষ্টি টা শুরু হয়! আকাশে মেঘ গুরগুর করে।রবির মনে আশার সঞ্চার হয়। হঠাৎ বিকট শব্দে কোথাও যেন বাজ পড়ে।শুরু হয় ঝমঝম বৃষ্টি । রবির চোখে আনন্দের ঝিলিক।খুশিতে মনটা ডগমগ করে উঠে।সে মেজ আপার দিকে তাকায়।
"ফাকিবাজ"-মেজ আপার চোখে কপট রাগ, ঠোঁটে প্রশ্রয়ের হাসি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



