somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মহান অতন্দ্র
অন্তর মম বিকশিত করো/ অন্তরতর হে/ নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,/ সুন্দর কর হে

মুখ

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস থেকে নামলো রফিক। নিউমার্কেটের উল্টোদিকে চাঁদনী চকে রোজ থামে বাসটা। এখান থেকে তার অফিস ৫ মিনিটের হাটা পথ। সিগন্যাল পার হয়েও নামা যায়। তবু এখানেই আজকাল নামে সে। তারপর ফুটপাথ ধরে হাঁটে।
ফুটপাথগুলোতে অবশ্য হাঁটা দায় । বিভিন্ন রকম বাহারি জিনিষ নিয়ে হকাররা বিক্রি বসিয়েছে। বেশিরভাগই মেয়েদের সাজগোজের জিনিষ। এত সকালেও ভালই ভীড়। মেয়েরা কেনাকাটা করছে । রফিক না কিনলেও সাজগোজের জিনিষ আজকাল ভালই দেখে। মেয়েদেরকেও দেখে।
মেয়ে দেখতে খুব ভাল লাগে তার । ঢাকা শহরের সবকটি মেয়েই তার কাছে খুব সুন্দর মনে হয়। তবে শহুরে মেয়েতে তার বেশ ভয়। সে গাঁয়ের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও এত কায়দা কানুন করে কথা বলতে জানে না। দেখতেও তো এমন ভাল কিছু নয়। আর ভার্সিটিতে সে দেখেছে মেয়েগুলো ছেলেদের নিয়ে এমন হাসাহাসি করে যেন জগতের সকল ছেলেই তাদের কাছে তুচ্ছ।
সে নিজে তুচ্ছ কিনা জানে না। তবে মেয়েদের নিয়ে ভাববার এত সৌখিন অবসর তার খুব একটা হয়নি। তবে এখন ভাবতে হবে । রফিকের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কুড়ি দিন পর তার বিয়ে, কিছু কেনাকাটা তার করা দরকার । মা অবশ্য বলেছে বিয়ের বাজার তারাই করবে। তার কোন কিছু কেনার দরকার নেই। তবুও সে কিছু কিনতে চায়। মেয়েদের জিনিষ কেনা তার কাছে খুব শক্ত মনে হয়েছে। এক হাতের চুড়ি তারই আবার কত যে রকম। কি কিনবে ভেবে পায়না সে। হ্যাংলা মত এক ছোড়া টিপের দোকান নিয়ে বসে। এই দোকানটার সামনে আসলেই একটা লাল টিপ পরা বুলুর মুখ তার সামনে ভাসে।
বিকেলের দিকে মাঝে মাঝে দোকানে গিয়ে সে শাড়িও দেখে। সব রঙের শাড়ি সে বুলুকে মনে মনে একবার করে পরায়। বুলুর গায়ের রং বেশ, একটা কোমল উজ্জ্বলতা আছে। সে যেটিই দেখে তার মনে হয় সেটিতেই বুলুকে মানায়। বুলুর জন্য কোনটি নেবে ভেবে পায় না সে। এক একবার তার ইচ্ছে করে সব কটিই সে কেনে। বুলুকে এক একদিন এক এক রঙে সে দেখবে। কিন্তু সে জানে, সেটি আসলে ভাল দেখায় না। আর নতুন বউ নিয়ে আদিখ্যেতা কোন মা ই ভাল ভাবে নেবে না।
রফিকের কোন প্রেমিকা নেই। কোনকালেই ছিল না। বিয়ের জন্য অনেক মেয়ে সে আগে দেখেছে। তবে বুলুর মত কাউকে দেখেনি। মা অবশ্য চেয়েছিল একটু বড় ঘরে বিয়ে দিতে। কিন্তু তাতে সেরকম পাত্রী জোটানো দুস্কর ছিল। রফিক মাকে বলেছিল মায়ের পছন্দেই বিয়ে হবে। তবে পাত্রীকে একটু দেখনসই হতে হবে। তার খুব ইচ্ছা বেশ সুন্দরী একটা বউ হবে তার অনেকটা ঈশিতার মত।
ঈশিতা তাদের ক্লাসে পড়ত। ক্লাসের সবকটি ছেলেই ঈশিতাকে নিয়ে ভাবত। রফিক যে ভাবেনি তা নয়। ঈশিতার কপালে থাকতো সবসময় ছোটো একটা টিপ। সুতি, মাড়ের ভাঁজহীন জামা পরত ঈশিতা। সেই সাথে কোন কোনদিন খুলে দিত সিল্কি চুল। সেই চুলে কোনোদিন বেনি। কোনোদিন খোঁপা, সেই খোপায় চুলের কাটা। আবার কোনোদিন পনিটেল। ক্লাসের মাঝেই হঠাৎ বাঁধা চুল খুলে দিত সে। আবার খোলা চুল হাত দিয়ে নিমিষেই পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলত। সেখানে গুজে দিত লেখার কলম। যেন চুল নিয়ে খেলত মেয়েটা।
ঈশিতা বসত প্রথম বেঞ্চে। রফিক বসত শেষের দিকে কোনা বরাবর । ওখান থেকে ভাল করেই দেখা যেত খেলাটা। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত সে। মাঝে মাঝে তার মনেও হত, এ রকম দেখা ঠিক নয়। তবু রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ঈশিতাকে নিয়েই আবার ভাবত সে। তবে ঈশিতা কোনোদিন এ কথা জানেনি। ঈশিতার গায়ের রঙ এতোটা ফর্সা নয়। বলা যায় বুলুর মত। তবে অনেকসময় তাকে ফর্সাও মনে হত। সকালের ক্লাসে ঈশিতা যখন ঘুম ঠেকে উঠে আসত। তার গায়ের রঙ এ অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ভর করত। মনে হত যেন সদ্য পেড়ে আনা একটা পাকা ডালিম তার সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। এখুনি চুমুক দিয়ে যার রসটুকু নিঙরে নেওয়া দরকার তা না হলে বেলা বাড়লে রোদের তাপে যেন সে রস শুকিয়ে যাবে ।
ঈশিতার শরীরের অন্য ডালিম নিয়ে অবশ্য ছেলে মহলে খুব আলাপ হত। সে কখনও এসব খারাপ আলাপে খুব একটা অংশ নিতনা। তবে তার মনে হত বিয়ে করলে ঈশিতার মত কাউকেই করবে। মেয়েকে ঈশিতার মত দেখতে হতে হবে। মেয়ের ডালিম দুটোও ঈশিতার মত হতে হবে।
বুলুকে সে প্রথম দেখে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। খোলা হেসেলে কুটনো কাটছিল বুলু। আর মাঝে মাঝে চুলার জাল সরিয়ে খড়ি গুঁজছিল। তার নাকে ছিল বিন্দু বিন্দু ঘাম। গায়ে একটা কমলা রঙের ওড়না পেঁচানো। সেই ওড়না দিয়ে মাঝে মাঝে ঘাম মুছছিলও সে। এসময় রফিক বুঝেছিল বুলুর ডালিম দুটোও ঈশিতার মত। ঈশিতা গায়ে কখনও ঠিকঠাক ওড়না রাখতো না। রফিকের মনে হত ঈশিতা যেন চাইত সবাই তার ঐ উঁচু পর্বত শৃঙ্গ দেখুক আর মনে মনে উচ্চতা মাপুক। আর মেপে মেপে বৃথাই ক্লান্ত হোক।
সেদিন খুব একমনে হাসছিল বুলু। রফিক জানে না কুটনো কাটতে যেয়ে এত হাসির কি আছে। সে হেসেলে গিয়ে আম্বিয়া ভাবীর কাছে এক গ্লাস পানি চাইল। যদিও তার মোটেও কোন তেষ্টা ছিল না। তাকে দেখে বুলু গায়ে ওড়নাটা ভালভাবে জড়িয়ে ঘোমটা টানল ।
বুলুর সাথে সরাসরি একবারই কথা হয়েছে রফিকের। বিয়ে ঠিক হওয়ার দিন। বুলু ডিগ্রি পড়ে। কথায় বেশ আঞ্চলিক টান। তবে রফিক বিয়ের পরে সব ঠিক করে নিবে। বুলুকে নিয়ে কি কি করবে প্রতিদিন ভাবে সে। একই ভাবনা । তবু বারবারই ভাবতে ভাল লাগে।
রফিকের অফিসে রিমা মেয়েটা একটু নারীবাদী। বুলুর ছবি দেখাতে রিমা খুব রেগেই গেল। আপনি ভার্সিটি গ্রাজুয়েট হয়ে ডিগ্রি পড়া মেয়েকে বিয়ে করবেন। আপনারা পুরুষেরা যে কি, সৌন্দর্য ছাড়া কিছুই বোঝেন না । একটা ক্লাসও মেইনটেইন করেন না। নারী কেবল আপনাদের কাছে মাংসই। আর সুস্বাদু মাংস দেখলেই না, আপনারা পুরুষেরা হায়েনা হয়ে ওঠেন ।
রফিক আসলে নারীদেরকে শুধু মাংস কখনই ভাবেনি। সে বুঝতে পারে নারীবাদীদের ক্ষোভটা কোথায়। সে নিজেও চায় মেয়েরা সম্মানিত হোক। সংগ্রামী মেয়ে দেখলে তার মনে শ্রদ্ধায় আসে। তবে বউ ব্যপারটা ভাবলে মনে হয়, না একটা সুন্দর পুতুল বউ তার চাই। যে হবে বরফ গলা নদীর মত। আল্লাদে ফেটে পড়বে। হাজারো বায়নায় অস্থির করবে ।
রিমা টাইপ মেয়েদেরকে কিছুতেই বউ ভাবতে পারে না সে। তার বিয়ের জন্য যখন মেয়ে দেখা হচ্ছিল রিমাকে নিয়ে কয়েকবার ভেবেছে সে। রিমা যে দেখতে খারাপ তা নয়। তবে বউ বউ ব্যাপারটা একেবারেই নেই যেমন ঈশিতার আছে, বুলুর আছে ।
রফিকের বিয়ের আর দুদিন বাকি। রওনা দিয়েছে সে। আজ আবার হরতাল। তবুও বাস চলছে। কুড়িল থেকে বাস ধরেছে সে। তার কাছে একটা ব্যাগ। সেখানে সবার জন্য টুকিটাকি নিয়েছে সে । বুলুর জন্য সে নিয়েছে কাঁচের চুড়ি। টিপও নিয়েছে আর একটা নাইটি নিয়েছে। রফিকের বন্ধু আমজাদ তাকে বলেছে এই নাইটি কিনতে। দোকানের ঠিকানাও দিয়েছে। দোকানে গিয়ে প্রথমে তার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। আশেপাশে মেয়েরা সব অন্তর্বাস কিনছে। নিজেকে বোঝাল সে, এরা তো কেউই তার চেনা নয়। তাই লজ্জার কিছু নেই । একটা লাল রঙের স্বচ্ছ নাইটি কিনল সে।
রফিক বাসে হেলান দিয়ে বসেছে। রাস্তাঘাট খুব ফাঁকা ফাঁকা। সে জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখেছে। আসলে সে কিছুই দেখছে না। তার সামনে লাল নাইটি পরা বুলুর ছবি ভাসছে। তবে কেন জানি কিছুতেই পুরোটা কল্পনা করতে পারছে না সে। সে বারবার ভাবতে চাইছে সে ঘরে ঢুকল। বুলু গায়ে লোশন মাখছে। বুলুর দিকে এগোচ্ছে সে । কিন্তু চিন্তাভাবনা আর এগোতে পারছে না সে। একবার সে বুলুর দিকে এগিয়েছে তখনি সুপারভাইজর চিৎকার করে বলল, বাসে কেউ ঘুমাবেন না। সাবধান থাকবেন। জানেন তো আজকাল প্রায়ই বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে।
রফিকের মনে যে কিছুটা আতঙ্ক নেই তা নয়। তবে সে ভাবল কি ই বা আবার হবে। জীবন তো এভাবেই চলছে। বরং বুলুর কথা ভাবা যাক। এবার সে ঠিক করল, না পুরোটা সে ভাববেই। তখনি এক বয়স্ক মহিলা বাস ভর্তি করে বমি করলেন। তার পাশের আর এক মহিলা রেগে বাস থামাতে বলল। মহিলা খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এই অবস্থায় বুলুকে লাল নাইটি কিছুতেই পরাতে পারল না সে।
রফিকের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের খাবার নিয়ে খুব ঝামেলা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষের সাথে কিছুটা তর্কাতর্কি হয়েছে। খাবারের মান ভাল হয়নি। টক ছিল দইটা। পোলাওয়ের চালও ভাল নয়। রফিকের মামা খুব আফসোস করেছেন কি ফকিরনীর ঘরে ভাগ্নে বিয়ে দিয়েছি।
রফিকের খুব খারাপ লেগেছে মামার ব্যাবহার। তারা যে নিজেরা খুব বড়লোক তা নয়। বাবা-মারা যাবার পর কি কষ্ট করে সে লেখাপড়া শিখেছে, সংসারটা তুলেছে, ভাই-বোনকে মানুষ করেছে । সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই সামান্য আয়োজনেই বুলুর বাবার বেশ কষ্ট হয়েছে। বুলুর সামনেই ছোট মামী কয়েকবার খাবারের ব্যাপারটা তুলেছে । বুলুকে বাবার বাড়ি থেকে তেমন ভাল শাড়ি দেওয়া হয়নি এই নিয়েও মা কথা শুনিয়েছে বুলুকে। বুলুর জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। বুলুকে শাড়ি তো সেই কিনে দিতে পারে। এরা কি বোঝে না তার এই ৩২ বছরের মরুময় জীবনে বুলু এক শীতল ঝর্না । আর সেই শীতল ঝর্নার জলে জীবনের সব ক্লান্তি মুছতে কতটা অস্থির হয়ে আছে সে।
রফিকের ছুটি ফুরিয়ে আসছে। এর মাঝে নাইটিটা বুলুকে পরাতে পারেনি সে। বুলু খুব ভয় পায়, বাড়িতে কখন কে ডাক দেয় আর তার আড়ষ্টতাও অতটা কাটেনি । টিপও পরাতে পারেনি তাকে। মা টিপ পছন্দ করেন না । মা বলেছে বুলুকে বোরখা বানিয়ে দেবে। বাড়ির বউ, অবশ্যই পর্দা করা দরকার। আর সাজগোজ ভাল জিনিস নয়। তবে ঘুমানোর সময় বুলু টিপ পরে ঘুমাত। কি মিষ্টি যে লাগত তাকে। বুলুর ফর্সা কপালে লাল টিপ দেখলে, তার মনে হত সবুজ পাতার ভেতর যেন এক টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া। সেই লাল কৃষ্ণচূড়াকে চুম্বনে আরও লাল করত সে। তবে রাতে ছাড়া বুলুকে খুব কাছে পায়নি সে। মাকে সে আকারে ইঙ্গিতে বলেছে বুলুকে সে শহরে নিয়ে যেতে চায় । মা বলেছে বছর দুই যাক। কিছু টাকা পয়সা জমুক। তারপর বউরে নিস।
রফিক তার মেসে ফিরেছে। ফেসবুকে সে তার আর বুলুর বিয়ের ছবি আপলোড দিল। ফেসবুক খুলতে ইদানিং তার আর ভাল লাগে না । শুধু আগুন দেওয়াদেওয়ির খবর। মানুষজনের যেন আসলেই কোন কাজ নেই। পুরা দেশটাকে অগ্নিকুণ্ড বানিয়ে ছাড়বে। আর একদল আছে এদেরও কোন কাজ নেই । এরা কোন টপিক পেলেই সেটা নিয়ে লিখতে বসে। পেট্রোল বোমা নিয়ে সে অন্তত দশটি লেখা দেখেছে । এসব খবরে যে তার খারাপ লাগে না তা নয়। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে সত্যিই প্রতিবাদ করা দরকার । তবে এসব এখন তার সয়েই গেছে বলা যায় । আর সে ভাল করেই জানে তার মত একজনের প্রতিবাদে দেশের কিছুই যায় আসে না ।
রফিক ইদানিং মাকে প্রায়ই ফোন করছে । মেসে তার খাওয়া দাওয়া হচ্ছেনা না । হরতালের কারনে বুয়া আসে না। রান্না –বান্না হয় না । বুয়ার রান্নাও খুব খারাপ । ইদানিং অফিসে কাজের খুব চাপ । তার প্রায়ই জ্বর হচ্ছে । মা বলছে মাথায় পানি দে, সাবু গুলে খা। মাকে সে বলেছে, এত এত কাজের চাপ, সব কিছু কি একা সামলানো যায়। কারো সাহায্য পেলে ভাল হয়। আসলে রফিকের অফিসে এখন কাজের চাপ তেমন নেই। নতুন বিবাহিত বলে তাকে বরং কিছুটা ছাড়ই দেওয়া হয়েছে। আর বুয়াও রোজ আসে। বুয়া তাদের পাশেই টিনশেডে থাকে। রফিকের জ্বরটরও কিছু হয়নি। আসলে সে উপায় খুঁজতে থাকে বুলুকে কিভাবে শহরে আনা যায়। অফিস থেকে ফিরে বুলুকে খুব দরকার পড়ে তার। বুলুকে নিয়ে তার নানান ভাবনা আসে তখন। মাকে আরও পটাতে হবে। কি জানি মা বুলুর সাথে কেমন আচরণ করে। সারাদিন কি ওকে চুলোর পাড়েই রাখে। বুলুর গায়ের রঙ নিয়েও খুব ভাবনা হয় তার ।
এখানে বুলু আসলে সে একটা ছুটা বুয়া রাখবে। বুলুকে দিয়ে প্রাইভেটে ডিগ্রিটা দেওয়াবে। বুলুকে সে বলেছে অফিস থেকে সে যখন ফিরবে বুলুকে খুব পরিপাটি হয়ে থাকতে হবে। বুলুর কপালে থাকবে কৃষ্ণচূড়ার মত লাল টিপ । পরনে মাড় দেওয়া ভাঁজহীন সুতী শাড়ি, ঠিক ঈশিতার মত। ঈশিতা যেমন পরত। বুলু দরজা খুললেই বুলুকে কোলে নিয়ে সোজা বেডরুমে যাবে সে। বুলুর জন্য নানান ড্রেস কিনেছে সে। সিনেমার নায়িকাদের মত। বুলুর পা খুব সুন্দর। তার ইচ্ছা বুলুকে বাসায় মাঝে মাঝে হাফ প্যান্ট পরিয়ে রাখবে সে। তবে বাইরে গেলে শাড়ি সালোয়ার কামিজ যেকোনো কিছু পরবে বুলু । রিক্সায় ঘুরবে তারা। হুড নামিয়ে দেবে। রোদ এসে পড়বে বুলুর গালে। দিনের উজ্জ্বল আলোয় সূর্যমুখীর মত দেখাবে বুলুকে। পুরা শহর প্রচণ্ড ঈর্ষা নিয়ে দেখবে সূর্যমুখী বুলুকে ।
রফিক এখন নিউমার্কেটের উল্টোদিকে প্রায়ই নামে । মা রাজি হয়েছে । অবশেষে বিয়ের ৬ মাস পর সংসার হতে যাচ্ছে তাদের। বুলুর জন্য অনেক কাঁচের চুড়ি কিনেছে সে। বুলুর ফর্সা হাতে খুব মানাবে। কিছু গয়না গাটিও কিনেছে আর কিনেছে আঢ়ং থেকে সুতি শাড়ি। সবকটি রঙের শাড়িই কিনেছে সে। ফেসবুকে তার বান্ধবিদের শাড়ি দেখে শাড়ির চলটাও বুঝে নিয়েছে । রফিক ভাবতে থাকে হলুদ শাড়িটা পরলে, বুলুকে সে কি বলে ডাকবে। হলদে পাখি। আর সবুজটা পরলে টিয়া। লাল পরলে কাকাতুয়া। না আর পাখির নামে নয়, কাকাতুয়া ভাল কোন নাম নয়। ফুলের নামে করবী বলে ডাকবে সে। আর যদি স্নিগ্ধ গোলাপি পরে তাহলে ক্যামেলিয়া আর ......
রফিকের ভাবনায় ছেদ পড়ে। আহা আজকেও একজন দিনমজুর মারা গেছে । তবে পত্রিকায় খুব ছোট করে এসেছে । দিনমজুরের জীবন মনে হচ্ছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় তবে ভিকারুন্নেসার এক ম্যাডাম এর পা পুড়ে গেছে । ম্যাডাম এর পা টা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে । ম্যাডামের বিষয়টা নিয়ে খুব লেখালেখি হচ্ছে । স্কুলের মেয়েরা মানববন্ধনও করছে ।
রফিকরা রওনা দিয়েছে । বুলু তার কাঁধে মাথা দিয়েছে। বুলুর পরনে বোরখা। তবে সে বলেছে ঢাকায় পৌঁছালে আর তাকে বোরখা পরতে হবে না । রফিক বুলুকে বারবার দেখেছে । জীবন তার কাছে বেহেশত মনে হচ্ছে। অথচ কি আশ্চর্য একসময় নিঃসঙ্গ এই জীবনের কোন অর্থই সে খুজে পায়নি।
বোরখার ভিতর থেকে বুলুর ফর্সা মুখ বেরিয়ে আছে । রফিক মনে মনে সেখানে একটা টিপ আকঁল । আহা কি মিষ্টি দেখাচ্ছে বুলুকে । বেহেশতের হুরপরীরা এর থেকেও বেশি সুন্দর কিনা কে জানে।
রাতের নিউজে টিভিতে খবর দেখানো হচ্ছে । কাচপুরগামী বাসটায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে কেউ মারা যায়নি । বাসের জানালার পাশে থাকা এক নারীর শরীর পুরোপুরি ঝলসে গেছে । বাকিরা অনেকেই আহত হয়েছে । তবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। মমিন সাহেব টিভি দেখছিলেন । তার স্ত্রী জাহানারা খাবার জন্য অনেক্ষন ধরে ডাকছে । মমিন সাহেবকে উঠতে হল । জাহানারা চিৎকার করছে সেই রোজ একই তো পোড়াপুড়ির খবর, দেখার কি আছে!
সামিন ফেসবুক খুলেছে । বুলু নামক এক নারীর ঝলসানো খবরটা নিয়ে তার এক উঠতি লেখক বন্ধু একটা লেখা দিয়েছে। সে না পড়েই লাইক দিয়ে দিল। পরিচিতদের লেখায় লাইক দিতে হয় । না দিলে তারা কষ্ট পায় । তার বন্ধু ভালই লেখে তবে রম্য পোষ্ট ছাড়া এত বড় একই রকম কাহিনী পড়তে তার আর ভাল লাগে না ।
ডক্টর রহমান তার চেম্বারে বসে আছেন । সকালের পেপার পড়ছেন ।সেই সাথে চায়ে চুমুকও দিছেন । সেখানে এক ঝলসানো নারীর ছবি । ডক্টর রহমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের প্রফেসর। জিতু নামে ওনার এক ছাত্র এসেছে ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট বোঝার জন্য । ডক্টর রহমান তার গরম চায়ের কাপ পেপারের উপর রাখলেন। জিতুকে বোঝানো শুরু করলেন। চায়ের গরম কাপে ঝলসানো নারীর ছবি ঢেকে গেল।
আবিদা পুরানো কাগজপত্র বিক্রি করছেন । বিক্রির আগে সব দেখে টেখে নিচ্ছে । অনেকগুলা পেপার বিক্রি করল সে । সেখানে একটি পাতায় বুলুর খবরটিও ছিল । সেটিও একই দামে বিক্রি হল।
সালেহা খুব বিরক্ত। তার ছেলে জারিফ আবার মেঝেতে পায়খানা করেছে । কবে যে ছেলেটা নিজে থেকে বলতে পারবে। হাতের কাছে একটি পুরানো খবরের কাগজ পেল সালেহা, যেখানে একটি মেয়ের ঝলসানো ছবি ছিল। ভীষণ বিরক্ত হয়ে সেটি দিয়েই ছেলের গু পরিস্কার করল সে।
আতিক নৌকায় বসে আছে । বাদাম খাচ্ছে । খাওয়া শেষে ঠোংগাটা নদীতে ফেলে দিল সে। ঠোংগাটাতে ঝলসানো বুলুর ছবি ছিল। ঠোংগাটা এখন নদীতে ভাসছে। ঝলসানো বুলুও ভাসছে।
বছর দুই পর । দেশের পরিস্থিতি এখন বেশ ভাল। নতুন সরকার এসেছে । অফিসে নতুন প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙ্গানো হয়েছে। নতুন সরকার চাকুরীজীবীদের জন্য বোনাসের ব্যবস্থা করেছেন । আজকে বড় সাহেব এসেই ঘোষণা দিলেন। বেশ ভাল এমাউন্ট, আপনারা স্ত্রীদের নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরে আসতে পারেন ।
রফিক বাসায় ফিরেছে । তাকে দরজা খুলে দিয়েছে তাদের ১১ বছরের কাজের মেয়ে। ঐদিনের দুর্ঘটনার পর বুলুর একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে । বুলুর শরীরের আশি ভাগ চামড়া পুড়ে কুঁচকে গিয়েছে । কপালের অংশ গলে নাকে এসে ঝুলছে । আলাদা করে কপাল মুখ বোঝা বেশ কষ্টকর। রফিক বুলুর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। তবে বিদেশে নিয়ে গেলে হয়ত কিছু হত। সে সামর্থ্য তার নেই। বুলুর চিকিৎসা করতে যেয়ে সে অনেকটা নিঃস্ব বলা যায়।
রফিক আলমারি খুলে একটা ফাইল বের করতে যেয়ে বুলুর হাফপ্যান্টটা দেখল। লাল নাইটিটা দেখল । বুলুর রঙিন শাড়িগুলো দেখল। প্রায়ই এগুলো দেখে সে। বুলু এসব কিছুই পরেনি। এক পায়ে হাফপ্যান্ট পরা খুব হাস্যকর। আর নাইটটিটাও স্বচ্ছ । সেটাতে নাইটটিতে বুলুর কুৎসিত শরীরটাই বরং বেশি দৃশ্যমান হবে।
রফিকের মা অনেকবার তাকে বলেছে বিয়ে করতে । এরকম প্রতিবন্ধী কুৎসিত বউ নিয়ে কেন ঘর করবে সে । কতই বয়স হয়েছে তার। পুরুষ মানুষ বলে কথা। হ্যা অনেকবারই তার পুরুষত্ব তাকে নাড়া দিয়েছে । তাদের মধ্যে সঙ্গমও হয়েছে । তবে একেবারেই তার ইচ্ছাতে নয়। বুলু যেন কষ্ট না পায় শুধু সেই কারনেই।
সঙ্গমের সময়টা রফিক চোখ বন্ধ করে রাখে। সে আগের বুলুকে ভাবতে চেষ্টা করে। সেখানে বুলু রংবেরঙের শাড়ি পরে। কৃষ্ণচূড়ার টিপ পরে। দরজা খুলে তার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে ।
বুলুকে ভীষণ ভালবাসে রফিক। বুলুর মন ভাল রাখতে গত পাঁচবছর রুটিন করে প্রতি মাসে ৪বার মিলিত হয়েছে তারা। কিন্তু ইদানিং হিসেবে কিছু ভুল হচ্ছে । গত সপ্তাহে বুলুকে আদর করেনি সে। একদম ভুলে গেছে । আজকে অনেক আদর করবে সে বুলুকে। রফিক চোখ বন্ধ করে বুলুর শরীরে মুখ ডোবায়। বুলুর লাল নাইটি পরা ছবিটা ভাবতে চেষ্টা করে সে । কিন্তু ইদানিং কিছুতেই বুলুর মুখ কল্পনা করতে পারে না সে । সেখানে ঈশিতার মুখ ভাসে । রিমার মুখ ভাসে । যেই মেয়েটা অফিসে রোজ ঝাড়ু দেয় তার ছবি ভাসে, আম্বিয়া ভাবীর ছবি ভাসে .........
প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে রফিক কৃষ্ণচূড়ার টিপ পরা বুলুর মুখটা। কিন্তু পারে না। নিজের সাথে ক্রমশ হেরে যেতে থাকে সে। বুলুকে নিয়ে তার কল্পনার আকাশের শুকতারাটি খসে পড়তে থাকে । সেখানে জায়গা করতে থাকে পুলহ, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ...... নাম না জানা আরও অসংখ্য তারা।

***একটু এডাল্ট গল্প হয়ে গেল জীবনের গল্প বেশিরভাগ তো এডাল্টদের নিয়েই। তাই গল্পটি আমার কাছে অশ্লীল মনে হয়নি। আর হলে হোক প্রত্যেকটি মানুষই অশ্লীল অনুভুতি নিয়েই বাস করে। এটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। তবুও যারা অস্বীকার করে তাদের মত অস্বাভাবিক আমি নয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×