এক তরুণ ঘরে বসে বিরক্ত হচ্ছিল। তাই ভাবল অভিযানে বের হবে। যেই বলা সেই কাজ। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।
কিছুদূর যাবার পর 'পৃথিবীটা অনেক সুন্দর' তার মনে হতেই থাকে। হাঁটতে হাঁটতে ক্রোশের পর ক্রোশ পার হয়ে মরুভূমিতে পৌছে সে প্রচণ্ড তাপ অনুভব করল। দেখল, তার পা বালির গভীরে ঢুকে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ, সাথে আনা পানিও শেষ।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটবার পর সে কঠিন পাথুরে জায়গায় আসল। রাত হওয়ায় বিশ্রাম নিবে ভাবল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বেচারার। অজানা কোন এক পতঙ্গের আক্রমণের কারণে ঐ জায়গায় থাকা তার পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ল।
তাই ভোর রাতেই সে ফের রওনা করে। এবার হেঁটে কিছুদূর যাবার পর শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। কখনো বৃষ্টি বাড়ে, কখনো কমে গিয়ে পিট পিট করে পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভালই লাগে তার। তবে বেশি বৃষ্টি পড়লে যা হয়, দিগ্বিদিকশূন্য অঞ্চলটা কাদাময় হয়ে গেল। তার পা ঢুকে গেল কাদার ভিতরে। প্রায় হাঁটু সমান কাদায় হাঁটতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কিছুদূর হাঁটবার পর দেখল, কাদার উপর জোঁকের মত কি সব যেন। তার গা গুলিয়ে আসল। সে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করল। হাঁটু সমান কাদাতে চেষ্টা করেও দ্রুত হাঁটতে পারল না সে। বরং জোঁকগুলো (হ্যাঁ, এগুলো জোঁকই) তার পায়ে লেপ্টে বসে রক্ত খাওয়া শুরু করল। অন্ধকার রাতে সে এক নারকীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হল।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে তার প্রভুর কথা মনে পড়ল। অবশ্য তার মাঝে অবস্থান করছে এক দ্বৈত সত্তা। যার একদিকে বিজ্ঞানীদের হাতে মহাবিশ্বের রহস্য। অন্যদিকে নবীর হাতে কুরআন ও সৃষ্টি জগৎ তৈরীর উদ্দেশ্য। সে দ্বিধায় পরে নিজেকে Egnostic হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। Egnostic হল এমন ব্যক্তি যাদের একবার মনে হয় সবকিছু প্রকৃতির তৈরি। পরমুহূর্তে মনে হয়, না, সবকিছু কেউ একজন নিশ্চয় তৈরি করেছেন!
এসব ভাবতে ভাবতে সে জলাভূমি পার করল। এরপর সে খুব সুন্দর এক হ্রদের পাশে এসে দাঁড়াল। হ্রদের পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটাল। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে। সে একটি বিশাল গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে নিজেকে আবিষ্কার করল এক পাহাড়ি এলাকায়।
পাহাড়ের উঁচু জায়গায় সে একটি কাঠের ঘর দেখতে পেল। ধীরে ধীরে সে সেখানে পৌছে দেখল ঘরটা অনেক বড়। আধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। লোকালয় থেকে দূরে এমন পাহাড়ের উপর বিদ্যুৎ পর্যন্ত রয়েছে! ছেলেটি ঘরে প্রবেশ করে দেখল কিছু লোক ধর্ম কর্মে মগ্ন। তবে সবার ধর্ম এক নয়। একেকজন একেকভাবে নিজের ধর্ম পালন করছে। তাকে দেখতে পেয়ে সবাই সমাদরে গ্রহণ করল। সবার মাঝে সে কি মিল!
তার ভাবতে অবাক লাগল একইসাথে এতগুলো লোক কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মকে মেনে নিয়ে একই ঘরে বাস করছে! অথচ সারা পৃথিবীতে এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের শত্রু ভাবছে! গোঁড়া শাসকদের রোষানলে পড়ে প্রতিদিন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আর এখানে এরা কিভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখেছে!
দ্বৈত সত্তার অবসান ঘটিয়ে ঠিক ঐ মুহূর্তেই সে ঠিক করল এখানেই সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে। তার বিজ্ঞানীদের থিওরি জানার দরকার নেই(বিশেষ করে যা ধর্মকে হেয় করে). তার দরকার একে অপরের সাথে হাত মিলিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা।