ওরা এদিক ওদিক ঘুরছে, ইয়াবা খাচ্ছে, গাঁজা খাচ্ছে, মেয়েদের দেখে শিস্ দিচ্ছে ওড়না ধরে টান দিচ্ছে, নোংরা দাঁত বের করে শয়তানি হাসি হাসছে...
ওদের যদি ধরে এনে চুলে আর্মি কাট দিয়ে, সাবান দিয়ে ডলে গোসল করিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর পর কাউকে ডেকে এনে যদি বলা হয়, এরা বখাটে, লম্পট, ছিনতাইকারী-আমি জানি ঐ লোক জীবনেও তা বিশ্বাস করবে না।
আসলে মানুষের বেশভূষা পাল্টাতে পারে, মানুষটা খারাপ কাজে জড়িয়ে লোকের ক্ষতি করতে পারে, মাস শেষের মাইনে রাখা মানিব্যাগের জন্য পেটে ছুরি ঢোকাতে পারে, মেয়েদের কান ছিঁড়ে কানের দুল ছিনিয়ে নিতে পারে, এমনকি নিজের জন্মদাতা বাবা কিংবা মায়ের গায়েও হাত তুলতে পারে মাদকের আবশ্যকীয় চাহিদা মেটাতে।
## আমরা আদর্শ সমাজের স্বপ্ন দেখি। এ সমাজে কোন অন্যায় নেই। সবার অধিকার সমান; অধিকার কেড়ে নেওয়ার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না সেখানে। এখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কাউকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনশন করতে হয়না। ইভ্ টিজিংয়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে হয়না। এ সমাজে ৭০ বছর বয়স্ক লোককে তপ্ত রোদের মধ্যে রিকশা অথবা ঠেলাগাড়ি টানতে না পারলেও টানতে হয়না।
তাছাড়া এ সমাজে উপরের বখাটেরা নিয়মিত সাবান দিয়ে ডলে গোসল করে, মাথায় তেল দিয়ে চুল বাম দিক থেকে ডান দিকে ভাজ করে। বৃদ্ধ মানুষকে গাড়িতে সিট ছেড়ে দিয়ে বসতে দেয়। দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকে। তারা মাদকের সংজ্ঞা জানেনা...
## অ্যাকচুয়ালি আমাদের সমাজটাই মূলত দায়ী তাদেরকে মাদকের দিকে ঠেলে দিতে। ভালোবাসার বদলে অবহেলা, গালমন্দ করে। অপরাধের সাথে সাথে অপরাধীকেও ঘৃণা করে।
ব্যাপারটা মূলত শুরু হয় পারিবারিক জীবন থেকে। পারিবারিক বন্ধন যখন ঢিলে হয়ে যায়; ভাইবোন, বাবা, মায়ের মাঝে তখন ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ছেলেমেয়েদের তখন মাদক তার কাল চাদরে আস্তে করে জড়িয়ে নেয়। আর যারা পথশিশু, ঘরবাড়ি নেই, সমাজে তারা মারাত্মকভাবে অবহেলিত ও ঘৃণার পাত্র। তারা এই দেশের নাগরিক হয়েও নাগরিকের ছিটেফোঁটা অধিকারটুকু পায়না। উল্টো হাঁটতে বসতে মার খেতে হয়। টাকা জমিয়ে ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো অনেক কষ্টে পূরণ করতে হয়।
## আমাদের সমাজটা যেদিন আদর্শ সমাজে পরিণত হবে না, সেদিন কিন্তু এই কথাগুলো সতীদাহ প্রথার মত দুঃখময় অতীত হয়ে যাবে। আমরা অবশ্যই আদর্শ সমাজের স্বপ্ন দেখব। প্রতিবার স্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে উঠে একটু একটু করে সমাজটা গড়ে তুলব।
তার আগে আমরা আমাদের ঘরের উঠতি বয়সের মানুষটার প্রতি আরেকটু বেশি যত্নবান হব। তার সাথে বুদ্ধি করে কথা বলে দুনিয়ার তাবত বিষয় মাথায় ঢুকিয়ে দিব।