somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম আলীকদমের নোনা ঝিরি ঝর্ণা!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিগন্ত বিস্তৃত গ্রন্থিল পাহাড়। অন্তর্বিহীন মৌননিস্তব্দ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। পাথুরে সর্পিল রাস্তা। গা ছমছম করা পাহাড়ি বুনো পরিবেশ! তার মাঝে অবস্থিত ‘নোনা ঝিরি ঝর্ণা’। পার্বত্য আলীকদম উপজেলা সদরের পশ্চিম-দক্ষিণ দিগন্তে লম্বমান পাহাড়ের বুক থেকে নেমে এসেছে এ পাহাড়ি ঝর্ণা

‘নোনা ঝিরি ঝর্ণা’ যে সত্যিকার অর্থে একটি অপরূপ ঝর্ণা তা এতদিন জানা ছিল না। আলীকদম উপজেলা সদরের অনতিদুরে রোয়াম্ভু এলাকায় এ ঝর্ণার অবস্থান।


এতদিন ধরে নোনা ঝিরি ঝর্ণার কথা নানান জনের কাছে শুনে আসছিলাম। শেষাবধি উইলিয়াম ভাইয়ের আগ্রহে সবাই রাজি হলো।

যাত্রা শুরুর কথা সকাল আটটায়। কিন্তু যাত্রা শুরু করতে হলো সাড়ে নয়টায়।

পূর্বের রাতের সিদ্ধান্ত মতে যথারীতি সকাল আটটায় আমি আলীকদম বাজারে উপস্থিত হলাম। কিন্তু আমি ছাড়া কেউ আসেনি। কয়েকজনকে ফোন দিলাম। একে একে সবাই জড়ো হলো।

৫টি মোটর বাইকে করে ১১ জনের যাত্রা শুরু হলো। গন্তব্য রোয়াম্ভুর নোনা ঝিরি ঝর্ণা।

আলীকদম বাজার থেকে বাইক নিয়ে নয়াপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়া অতিক্রম করলাম। আনুমানিক ৩ কিলোমিটার যাবার পর রোয়াম্ভু খালের পানি ডিঙ্গিয়েই বাইক নিয়ে চলতে হবে।

কি সাংঘাতিক

রোয়াম্ভু খালজুড়ে ছোট বড় পাথর। বালির ওপর পাথর বিছানো বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে লাগলাম। একটু অসতর্ক হলেই বাইকসহ কাত হয়ে যাওয়ার আশংকা!
আমদের টীমের তিনটি বাইকে ছয়জন আগেই চলে এসেছি। অন্যদের আসার খবর নেই। এ ধরণের যাত্রায় সাথীদের পেছনে ফেলে চলা ঠিক নয়।

সঙ্গীদের জন্য ওয়েট করা লাগবে! রোয়াম্ভু খাল-কেয়াং ঝিরির মোহনায় দাঁড়ালাম আমরা। ওদিকে খবর নেই অন্যদের।

আর হ্যাঁ; আমাদের ১১ জনের টীমের অন্যতম সফরসঙ্গী হলেন নয়াপাড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা। অন্যান্যদের মাঝে ছিলেন ইউলিয়াম মার্মা, শুভরঞ্জন বড়ুয়া, হাসান মাহমুদ, লিটন, মিনার, জমির, দিপু, মমরি ও বাপ্পী।

আসার পথেই ফিরতি পথের খাবারের আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন ফোগ্য চেয়ারম্যান ও ইউলিয়াম ভাই। চেয়ারম্যান বলেই কথা! স্থানীয় সুন্যধন তঞ্চঙ্গ্যাকে দুপুরের খাবারের দায়িত্ব দিলেন তারা।

সকলে একত্রিত হলে আবার যাত্রা শুরু করলাম।
অবশেষে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রোয়াম্ভু চাইয়ে মুরুং কার্বারী পাড়ায় যাত্রা বিরতি।


এ পাড়ার কার্বারী দিমওয়াই মুরুং আমাদের টীমকে আথিতেয়তা করলেন। সকলে মিলে কার্বারীর গাছের রসালো জাম্বুরা খেয়ে তৃপ্ত হলাম! এ সময় জাম্বুরার স্বাস্থ্যগত উপকারীতা বর্ণনা দিলেন আমাদের টিমের স্বাস্থ্য সহকারী লিটন।

আমরা একজন গাইড খুঁজছিলাম। কার্বারী বললেন ‘আমি যাবো আপনাদের সাথে!’ সকলের মুখে হাসি!
বিরতির পর যাত্রা আবার শুরু। এবার কিন্তু বাইক নিয়ে আর চলা যাবে না। রোয়াম্ভু খালের এবার পাথুরে রাস্তাটি বেশ কঠিন। পায়ে চলতে হবে। অগত্য রওয়ানা হলাম সকলে।


চলছি তো চলছিই! ছোট বড় পাথরের বাহার খালজুড়ে। এসব পাথুরে খালে ও ঝিরিতে এর আগেও অসংখ্যবার হেঁটেছি। কিন্তু অনুভূতি ছিল ভিন্ন। আজকের যাত্রায় সহযাত্রাীদের সুখানুভূতি ও প্রাণচাঞ্চল্য ছিল লক্ষ্যণীয়।


এত সুন্দর পাহাড়ি পথ এবং পাথুরে খাল অতীতে তেমন দেখা হয়নি। যতই হাঁটছিলাম পাথুরে পথে সকলের প্রাণচাঞ্চল্যের ঘাটতি দেখা গেল না!

হাঁটছি তো হাঁটছিই। কেউ এগিয়ে গেলে কেউবা পিছিয়ে পড়ছে। কেউবা মনের সুখে ছবি আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেল।


হঠাৎ হরিষে বিষাদ নেমে এলাম দলের একজনের মাঝে। সকলের প্রিয় শুভ দা পিছলে পড়েন পানিতেই! এতে তার দামী মোবাইলটি পানি ডুবে যায়!!

পাথুরে রাস্তায় বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম মিলন মোহনায়! উপযুক্ত গাইড থাকায় গন্তব্যে পৌঁছতে আমাদের বেগ পেতে হয়নি।

সকাল পেরিয়ে তখন দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় ১২ টা। সকলের মাঝে আনন্দের ঝিলিক! এ আনন্দের হর্ষধ্বানী আকাশে-বাসাতে ছড়িয়ে যেতে লাগলো।

মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল ‘আহা কি আনন্দ আজি আকাশে-বাতাসে!’

সত্যিই আমরা আনন্দিত। আলীকদম উপজেলা সদরের অনতিদুরে এ ধরণের একটি ঝর্ণা আছে তা জানা থাকলেও তো আগে দেখা হয়নি! আজ দেখলাম!


আল্লাহ যেন এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতিতে দু’হাতে তার সৌন্দর্য দান করেছেন। আমরা যার সামান্যতম সৌন্দর্য পেয়েই বিমোহিত হই। আন্দোলিত হই। আমাদের সারা তনু দেহমনে আনন্দের ঝিলিক লাগে!

আমরা ১১ জন সম্মিলতিভাবে ‘নোনা ঝিরি ঝর্ণা’র শীতল জলে সিক্ত হলাম। প্রাণ জুড়ালো সকলের। ঘন্টা অবধি পানি আর পাথুরে রাস্তায় হাঁটার ক্লান্তি যেন নিমিষেই দুর হয়ে গেল।


প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা থেকে পানি আছড়ে পড়ছে পাথুরে ভূমিতে। নোনা ঝিরি ঝর্ণার জল হিমশীতল। কোন কৃত্রিমতা নেই। প্রাকৃতিক এ ঝর্ণার শীতল জলে স্নানের পর মনে হলো দেহমনে প্রশান্তি নেমে এলো।

প্রাকৃতিক এ ঝর্ণাটি এখনো পর্যটকদের নজরে আসেনি। সম্ভবত আমার লেখা এ অভিজ্ঞতালব্ধ লেখাই প্রথম কোন ব্লগ কিংবা ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হলো। সময় পেলে এ ঝর্ণা নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছা আছে...।

কিভাবে যাবেনঃ
নোনা ঝিরি ঝর্ণা দেখতে হলে প্রথমে আসতে হবে আলীকদম। ঢাকা থেকে আপনাকে প্রথমে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। চট্রগ্রাম থেকেও বাসে চকরিয়া আসতে পারেন।
চকরিয়া থেকে আলীকদম চাঁদের (জিপ) গাড়িতে আসতে পারবেন। লোকাল ভাড়া জন প্রতি ৬৫ টাকা। রিজার্ভ ভাড়া এক পথ ১২০০-১৪০০ টাকার মত।

বাসে আসলে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। আর চাঁদের গাড়িতে গেলে ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিট কম লাগবে। দুয়ের মাঝে ভাড়ার তফাৎ মাত্র ১০ টাকা। বাস স্টেশন থেকে টম টম বা রিক্সায় করে মাতামুহুরী ব্রিজ পার হয়ে আব্বাছ কার্বারী পাড়া পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সেখান থেকে রোয়াম্ভু খাল বেয়ে নোনা ঝিরি ঝর্ণায় যাওয়া যাবে।

গাইড হিসেবে রোয়াম্ভু চাইয়ে মুরুং পাড়া থেকে কার্বারী অথবা কোন মুরুংকে গাইড হিসেবে নিতে পারলে ভাল হয়।


- মমতাজ উদ্দিন আহমদ
সভাপতি, আলীকদম প্রেসক্লাব।
তারিখ : ১১/০৯/২০১৬ ইং।
মোবাইল : ০১৫৫৬৫৬০১২৬।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×