somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা নির্মূলে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’: জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭ দিনে তিন হাজার রোহিঙ্গা হত্যা, ১০ হাজার গ্রাম পুড়িয়েছে সেনাবাহিনী * রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক ‘সেফ জোন’ ঘোষণার প্রস্তাব ঢাকার * মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রথমবারের মতো সেনা অভিযান বন্ধের আহ্বান * বন্ধুত্ব বজায় রেখে সংকট সমাধানের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর * আজ কক্সবাজার যাচ্ছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী...

মাসুদ করিম।। রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করেছে। গত সাত দিনে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এদের ১০ হাজার গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।




বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্মূলে পরিকল্পিত গণহত্যা’ হিসাবে মনে করছে। উগ্রপন্থী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা সিতওয়েতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ঘেরাও করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক ‘সেফ জোন’ ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বসনিয়া, যুগোস্লাভিয়াসহ সংঘাতকবলিত অনেক স্থানে এভাবে ‘সেফ জোন’ ঘোষণা করা হয়েছিল। রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সংস্থা ইতিমধ্যে ‘সেফ জোন’ ঘোষণার প্রস্তাব রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ থেকেও একই ধরনের ঘোষণা আশা করে বাংলাদেশ। নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রে বুধবার জানা গেছে এসব তথ্য।

বর্তমান পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সংকট নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে সমাধান খোঁজার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে।

ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এ নিয়ে গত সাত দিনে চতুর্থ দফায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হল। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের অবস্থা জানার জন্য তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কেভুসেগলু এবং দেশটির ফার্স্টলেডি এমিন এরদোগান আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে যাচ্ছেন। তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রতীকী ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন।

মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্টকে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনা অভিযানে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম চৌধুরী বিকালে মিয়ানমারের দূতকে তলব করেন। এ সময় বাংলাদেশের একটি প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

নিরাপত্তা বাহিনী বলপ্রয়োগ করায় অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানোর কারণে এবং সীমান্তে স্থল মাইন বসানোর ফলে অভাবনীয় রোহিঙ্গার সে াত সৃষ্টির কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কেননা বেসামরিক রোহিঙ্গাদের হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশ খুবই উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশের প্রতিবাদলিপিতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, মঙ্গলবার পর্যন্ত এক লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। (তবে অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে এবার দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।) নতুন করে এভাবে রোহিঙ্গার ঢল চলতে থাকায় বাংলাদেশের ওপর বাড়তি বোঝার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো রাখাইন রাজ্যের সহিংসতাকে জাতিগত সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করেছে । ফলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছে বাংলাদেশ। ঢাকার পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, রাখাইন রাজ্যে ত্রাণকর্মীদের কাজ করার সুযোগ করে না দেয়া হলে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা মানবিক সংকটের আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে চতুর্থ দফায় এই তলব করে যেসব রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন; তাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সূত্রমতে, রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের বলেছেন, খুব সতর্কতার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী কতিপয় কর্মপন্থার অনুমোদন দিয়েছে। সেই মোতাবেক, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার নিশ্চিতকল্পে চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে উগ্রবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রতিরোধে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিতভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

আগত মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করা এবং তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। রাখাইন মুসলিমদের ‘বাঙালি’ এবং ‘বাংলাদেশ হতে আগত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে মিয়ানমার কর্তৃক পরিচালিত অপ্রপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি বলপ্রয়োগের পদক্ষেপ না নিলেও কূটনৈতিভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করবে না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। তার ফলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও অঙ্গীকার করা হয় যে, বাংলাদেশ সরকারিভাবে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করবে না।

বাংলাদেশ তাই রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইন মুসলিম’ হিসেবে এতদিন বলে আসছে। কিন্তু সাম্প্র্রতিক সহিংসতার সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করছে। এ কারণে বাংলাদেশও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে অভিহিত করছে। রোহিঙ্গা শব্দটির মানে হল স্থায়ী বাসিন্দা। এ কারণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল।

এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাপসগলু এবং ফার্স্টলেডি এমিন এরদোগান আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজার যাচ্ছেন। বিশেষ বিমান নিয়ে সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা। পাশাপাশি দুর্গত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান ইতিমধ্যে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে কথা বলেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×