নেটওয়ার্কিং
একাধিক কম্পিউটার যখন পরষ্পর বিভিন্ন তথ্য বিনিময় করে তখন সেটাকে নেটওয়ার্কিং বলে। নেটওয়ার্কিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো, অন্য কম্পিউটারে থাকা তথ্য এবং উপাদানকে নিজের কম্পিউটার থেকে ব্যবহার করা।
নেটওয়ার্কিং আরম্ভের কারণ
কম্পিউটার আরম্ভের যুগে, অনেক বড় কম্পিউটার যেগুলোকে মেইনফ্রেম বলে ডাকা হতো সেগুলো বেশি কর্মক্ষম ছিলো না। সেগুলোতে কীবোর্ড বা মনিটর পর্যন্ত ছিলো না।
সে কারণেই সেই পুরোনো ডিভাইসগুলিকে ডাম্ব টার্মিনাল নামে ডাকা হতো।
নেটওয়ার্কিং আরম্ভের মূল কারণ ছিলো সবাই মিলে (বিশেষ করে সুশিক্ষিত লোকদের মাঝে) তথ্য শেয়ার করা। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষকেরা যখন পরষ্পরের মাঝে তথ্য বিনিময় করতে চাইলো, তখন প্রথম ভিন্ন ডাম্ব টার্মিনালগুলোর মাঝে যোগাযোগ গড়ে তোলার আইডিয়া নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা শুরু হলো। এতে দুইটি সমস্যা পাওয়া গেলো -
একটি ইউনিভার্সিটির মেইনফ্রেম থেকে ১০০ মাইল দূরের অন্য আরেকটি ইউনিভার্সিটির সংযোগ সম্ভব কীভাবে এবং ভিন্ন ইউনিভার্সিটি ভিন্ন কোম্পানীর মেইনফ্রেম ব্যবহার করায় ভিন্ন রকমের মেইনফ্রেমের সংযোগ সম্ভব কীভাবে?
প্রথম সমস্যা দূর করার জন্যে সবার মাথায় টেলিফোনের নাম আসলেও একটি নতুন ডিভাইস আবিষ্কার করা হয় যাকে মোডেম বলা হয়। এই মোডেম দিয়ে দুই জায়গায় অবস্থিত দু'টি ডাম্ব টার্মিনালকে ফোন লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়। পুরাতন মোডেমগুলি সেকেন্ডে ১৫০টির বেশি ক্যারেক্টার পাঠাতে বা গ্রহণ করতে না পারলেও তখনকার সময়ে এটিই ছিলো যথেষ্ট।
কীভাবে শেয়ার করা হবে?
যখন নেটওয়ার্কিংয়ের সময়ে কোনো ওয়েবসাইটে কোনো ছবি বা ডাটা থাকে, সেই ছবি বা ডাটাটুকু যে দেখে সবসময় তার কম্পিউটারে থাকে না বরং অন্য কোনো কম্পিউটারে থাকে।
অন্য জায়গার ওয়েবপেইজটিকে বলা হয় রিমোট এবং ব্যবহারকারী যে কম্পিউটারে বসে সেটা ব্যবহার করে, সেই কম্পিউটারটিকে বলে লোকাল কম্পিউটার। নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে একটি কম্পিউটার থেকে যে ডাটা, ফোল্ডার, প্রিন্টার, ওয়েবপেইজ শেয়ার করা যায় সেগুলোকে রিসোর্স নামে ডাকা হয়।
কী শেয়ার করা হবে?
নেটওয়ার্কিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন এক কম্পিউটারের রিসোর্স অন্য কম্পিউটার শেয়ার করতে পারে। কোন জিনিস শেয়ার করা হবে তা নিয়ে প্রথম দিকে সংশয় থাকার কারণে শুধু মাত্র ফোল্ডার ও প্রিন্টার শেয়ার করা হলেও বর্তমানে ওয়েব পেইজ, ইমেইল, ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল এবং এমনকি অন্য কারো ডেস্কটপ পর্যন্ত শেয়ার করা যায়।
সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট
একটি নেটওয়ার্কে যে রিসোর্স শেয়ার করে তাকে সার্ভার আর যে সেইসব রিসোর্স ব্যবহার করে তাকে ক্লায়েন্ট বলে। সুতরাং, একটি রিসোর্স শেয়ার করার জন্যে অবশ্যই অন্তত একটি কম্পিউটার লাগবে যেটি সার্ভার হিসেবে রিসোর্স শেয়ার করবে এবং আরেকটি কম্পিউটার লাগবে যেটি ক্লায়েন্ট হিসেবে সেই রিসোর্স ব্যবহার করবে।
একটি নেটওয়ার্ক সার্ভার তৈরীর জন্যে কোনো বাড়তি হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয়না তবে সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। যে কোনো কম্পিউটার যেটি এর রিসোর্স শেয়ার করতে চায়, তার অবশ্যই একটি সার্ভিং প্রোগ্রাম থাকতে হয়। ঠিক একই রকমভাবে ক্লায়েন্ট কম্পিউটারেরও রিসোর্স ব্যবহার করার জন্যে ক্লায়েন্ট প্রোগ্রাম থাকতে হয়।
মনিরুল হাসান,
ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র।