somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতাকে আর দিদি নয়

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সবকিছুতে নাচানাচি করার অভ্যাস। কলকাতার মমতা বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে আমরা খুব নেচেছিলাম। মমতার নির্বাচনে বিজয়ের পর দিদি দিদি বলে গলা ফাটিয়েছিলাম। আমাদের পত্রিকাগুলো লাল রঙে শিরোনাম করেছিল। মমতার বিজয়ের পর কয়েকজন কলামিষ্ট বেহুদা আগ বাড়িয়ে পরাজিত বামফ্রন্টের চৌদ্দগুষ্ঠিও উদ্ধার করেছেন। আমরা মমতার জন্য জামদানী শাড়ি, ইলিশ মাছ, পাটিসাপটা পিঠা পাঠিয়েছি। শুধু শাড়ি বা মাছই নয়, মমতা চাইলে তখন আমরা চুল বাধার ফিতা, মাথার বেনী, টাকি মাছের ভর্তা, শিং মাছের ঝোল সবই পাঠাতাম। বেশী নাচানাচির ফল কখনোই ভালো হয় না। মমতার এখন আমাদের কোমর ভাঙছেন। লোহার শিক দিয়ে কোমরের উপরের বাইড়ালে যেমন মাগো, মাগো চিৎকার করে আমাদের অবস্থাও তেমন।

মমতা তিস্তা চুক্তিতে বাধ সেধেছেন। তাঁর ভরা তিস্তা লাগবে। বাংলাদেশকে পানি দিলে ভারতের তিস্তা খালি হয়ে যাবে তাই তিনি পানি দিবেন না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বছরের পর বছর গবেষনার পরও তাদের রিপোর্ট মমতার পছন্দ হয় নি। তিস্তার পানি তিনিতো দেনই নাই, এখন নতুন করে আপত্তি করেছেন ফারাক্কার পানি বাংলাদেশে বেশী চলে আসছে। সেখানে নতুন করে বাধ দিতে হবে। বাংলাদেশকে এতো পানি দেওয়া যাবে না- মমতার সাফ কথা। পত্রিকায় দেখলাম তিনি সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তিটির বিরোধিতা করছেন। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ভাগে বেশী জমি চলে যাচ্ছে- তার দাবী। বাংলাদেশের প্রতি মমতা ক্ষমতায় মমতাহীন। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকারও হরন করছেন।

এমন আচরনে ইতিমধ্যে তিনি ভারতে ব্যাপক দুর্নাম কুড়িয়েছেন। গত ১০ জানুয়ারী আইএনটিইউসির সর্ব ভারতীয় সাধারন সম্পাদক ও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সঞ্জীব রেড্ডি বলেছেন, "মমতা বন্দোপাধ্যায় অহংকারী ও উদ্ধত মুখ্যমন্ত্রী"। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন- কোনো গোড়ামী থাকা ঠিক না। দু দেশের স্বার্থ ও সম্পর্ক যাতে ঠিক থাকে তা দেখতে হবে।

আমার যেটা মনে হয় তা হলো, মমতা বহুবছর বামফ্রন্টের বিরোধী রাজনীতি করেছেন। বামফ্রন্টের প্রতি অসহযোগ আন্দোলন করেছেন। স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তকে চটকদার ইস্যু বানিয়ে সাংঘর্ষিক রাজনীতি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে টাটাকে জমি বরাদ্দ দেওয়ায় সেখানে হতাহতকর আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছেন। সর্বক্ষেত্রে না না বলে আপোষহীন নেত্রী হয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নিয়েছেন। এখনো তিনি সেই না বলার মানসিক বৃত্ত থেকে বেরুতে পারেন নি। কোনটি পশ্চিম বঙ্গের ইস্যু, আর কোনটি জাতীয় ইস্যু এখনো তিনি তাই বুঝতে পারেন নি। আন্তার্জাতিক পরিমন্ডলতো খোদ দূরের কথা। ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় এনিয়ে তার সমালোচনা হয়েছে অনেক।

তবু তিনি গোড়ামী করে চলেছেন। সর্বশেষ মনমোহন সিং বিশেষ দূত পাঠিয়েছেন মমতাকে তিস্তার ব্যাপারে রাজী করাতে, সর্বোপরি বাংলাদেশের প্রতি এমন আচরনের বিরুপ প্রভাব বোঝাতে। কেননা, বাংলাদেশে হাসিনা সরকার বিপদে পড়লে মৌলবাদীরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে। পূর্বের মতো আবারো ভারতীয় সীমান্তে আইএসআই ও ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয় জঙ্গীদের তৎপরতা বেড়ে যাবে। পরেশ বড়ুয়া ও রাজখোয়ার অনুসারীরা আবারো প্রশ্রয় পাবে। বিজ্ঞ মনমোহন সরকার এটা ভেবে ভয়ে মেরুদন্ডে শীতলতা অনুভব করলেও অনভিজ্ঞ মমতা এখনো সেটা বুঝতে পারছে না। তিনি এখনো বিরোধীদলীয় নেত্রীর গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আন্দোলনমুখী না না করছেন। মমতার বোঝা উচিত- এখন তিনি না নয়, হ্যা বলবেন। এখন তিনি সিদ্ধান্ত দিবেন। তার সিদ্ধান্তেই তার রাষ্ট্র বিরাট ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে পারে।

যাই হোক, আবার পূর্বের বক্তব্যে ফিরে আসি। আমরা মমতার জন্য নাচানাচি করেছি আবেগ থেকে। এখানে কোন কৃত্রিমতা ছিল না। স্বার্থ ছিল না। দিদি বলেছিলাম। কিন্তু মমতা বাংলাদেশীদের কাছে দিদি হয়ে উঠতে পারেন নি। বাংলাদেশীদের ন্যায্য অধিকারকে তিনি হরন করছেন। সত্যিকারের কোন "দিদি" তা করে না। মমতার ব্যাপারেও আমাদের আবেগ পরিহার করতে হবে। তাকে আর দিদি বলা ঠিক হবে না।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×