somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমরা যারা ছাত্রলীগ করো

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বছর খানেক আগে ‘তোমরা যারা শিবির করো’ শিরোনামে শিবির কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি লেখা লিখেছিলেন। শিবির কর্মীরা বাংলাদেশের প্রজন্ম, তারা অতীত একটি প্রজন্মের অপরাধের দায় কেন নিবে? জাফর ইকবাল তার সন্তানসম এ প্রজন্মকে মমতামাখা চমৎকার একটি চিঠি লিখলেন। তারা তার মমতাটা ধরতে পারলো না। চিঠি পড়ে গালি দিল।বলল, তিনি আওয়ামীলীগের দালাল।
জাফর ইকবালকে ছাত্রদলের ছেলেরাও গালি দিতে শুরু করে। ছাত্রদলের আলাদা কোন মাথা নেই। শিবিরের মাথা দিয়ে তারা চিন্তা করে,শিবিরের মাথা দিয়ে রাজনীতি করে, পৃথিবীকে দেখে। তাদের নিজেদের মাথা এক হিসেবে পুরোই অব্যবহৃত পড়ে থাকে। ভাবলাম তাদের মাথাটা একবার অন্তত কাজে লাগাক। জাফর ইকবাল স্যারের অনুকরনে শিরোনামে একটি অনলাইন পত্রিকায় লিখেছিলাম, "তোমরা যারা বিএনপি করো"! আমাকেও তখন বলা হলো- আওয়ামীলীগের দালাল।
প্রিয় ছাত্রলীগ,
সত্যি বলতে কি, আরো আগে এমন শিরোনামে একটি লেখা তোমাদের জন্যও খুবই দরকার ছিল।দরকার ছিল এজন্য যে, তোমরা নীতিচ্যুত হয়েছ। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুনোখুনি, জমি দখল, প্রশ্ন ফাঁস, সেটেলমেন্ট, নিয়োগ-ব্যবসা, এমন কোন কাজ নাই তোমরা করো না? শেখ হাসিনাকে যত ভাবে ডোবানো যায় সবই করেছ! গত রবিবার সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমরা শিক্ষকদের বেদম পিটিয়েছ।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখে দেবতুল্য জনপ্রিয় শিক্ষক ড.জাফর ইকবাল হতবিহবল হয়ে বৃষ্টিতে বসেছিলেন। ছবিটা পত্রিকায় ও অনলাইনে আছে। সন্তানরা যখন পিতাকে পিটায়, সে পিতার রক্তক্ষরণ কত গভীর হয়, কতোটা ঝুম বৃষ্টি হলেও সে রক্ত ধুয়ে মুছে দিতে পারে না, সেটা বোঝার মতো সভ্য কর্মী ছাত্রলীগে আছে? জাফর ইকবাল বলেছেন, গলায় দড়ি দেয়া উচিৎ।এমন কুলাঙ্গার সন্তানদের জন্য গলায় দড়ি দেয়া ছাড়া এক অসহায় লাঞ্চিত পিতার আর কী করার আছে?
ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্বাধীনতার স্বপক্ষে একটি উচ্চকন্ঠই নয় পরোক্ষভাবে আওয়ামী সমমনা একটি শক্তি। জামায়াত শিবিরের কর্মীরা জাফর ইকবালের পুত্র কন্যা স্ত্রী নিয়ে অনলাইনে নোংরা ছবি সাঁটে। মৌলবাদীরা প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দেয়। ড. জাফর ইকবালও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক এরপরও অকুতোভয়, আপোষহীন। কিন্তু মৌলবাদীরা সামনে এসে যা করার সাহস পায়নি, ছাত্রলীগের কর্মীরাই সেই অসভ্য কাজটা করেছ।
আমরা খুবই হতাশ হয়ে দেখছি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এ ছাত্রসংগঠন শেখ হাসিনার সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের চেয়ে পুরনো সংগঠন। আওয়ামীলীগের আগে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়। বিশাল ও প্রাচীন এই সংগঠনটি স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছে। ছাত্রলীগের একটি প্রজন্মই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজ এই ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের লজ্জা। এই ছাত্রলীগকে সামলাতে না পেরে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাকত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়। এরপরও ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বোধ হয় না।
প্রিয় ছাত্রলীগ,
তোমাদের অধ:পতনের মূল কারন হলো- তোমাদের যেটা কাজ, সেটা তোমরা করো না। যেমন: পড়া লেখা। নিকট অতীতে ছাত্রলীগের কোন কর্মী উজ্জ্বল রেকর্ড করেছে তার নজির নেই। ছাত্রলীগের কোন কর্মসূচীতে ছাত্রদের নিয়ে কোন কর্মকান্ড নেই। ছাত্রবান্ধব কোন কর্মসূচী নেই। ছাত্রলীগের কোন কর্মী একটি কবিতা লিখে সুকুমার মনের পরিচয় দিতে পারে তার জন্য কোন ম্যাগাজিন নেই। ছাত্রলীগে কোন পাঠচক্র হয় না। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নিয়ে জেলায়-উপজেলায় পাঠচক্র হতে পারতো। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বিলি করা যেতে পারতো। পড়তে বলা হতে পারতো।
কেউ কি তোমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়েছ?
আমরা জানি পড়নি? সেটা ধারন করার মতো মস্তিষ্ক তোমাদের নেই। তোমাদের প্রগতির বড়ই দুর্গতি চলছে। তোমরা প্রগতির বদলে হাতে তুলে নিয়েছ অস্ত্র। অধ্যবসায়ের বদলে করছ ছিনতাই। এটা খুবই লজ্জার, হতাশার, গ্লানির। তোমরা জয় বাংলার মতো পবিত্র স্লোগান মুখে নিয়ে শিক্ষকদের হামলা করো! মায়ের পেটে থাকা শিশুকে গুলি করো! চুরির অভিযোগে অবুঝ শিশুকে হত্যা করো।
তোমাদের সাথে ছাত্রশিবির বা অন্য জঙ্গী সংগঠন এর অমিল কোথায় সেটা কি বলতে পারো? তারা নারায়ে তাকবীর বলে আক্রমন করে, তোমরা জয় বাংলা বলে করছ। তারা দা বটি নিয়ে মুক্তমনাদের মারছে, তোমরা মুক্ত মনে যাকে পারছ মারছো। তোমরা কি তাদের সাথে নিজেদের কর্মকান্ডে কোন সুষ্পষ্ট পার্থক্য রাখতে পারছো? না, পারছো না।

তোমরা কি বলতে পারো, নতুন প্রজন্মের একটি ছেলে কেন সানন্দে ছাত্রলীগে যোগ দিবে? যারাই যোগ দিচ্ছে তাদের ভেতর টাকা রোজগার, হল দখল, টেন্ডারবাজি, চাদাবাজি করার আকাংখা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য আছে কি? আমরা জানি, এর উত্তরে “হ্যা” বলার শক্তি তোমাদের নেই। তোমরা ছাত্রলীগকে ভয়ংকর রুপে নিয়ে গেছো। গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে ছাত্রলীগ মানে কি ত্রাস নয়? তোমরা কি কখনো এটা ভেবেছো কেন আমাদের ছেলেরা বয়োবৃদ্ধদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে, কথায় কথায় নিরীহ মানুষের গায়ে হাত তুলবে ? কেনই বা সবাই ছাত্রলীগকে ভয় পাবে? ছাত্রলীগের ছেলেরা কেন ভদ্র, নম্র, শালীন আচরন করতে পারছে না?

এর কারন ছাত্রলীগের আদর্শ বিচ্যুতিতো বটেই। অছাত্র, আধাছাত্র ছাত্রলীগে ঢুকে পড়া একটি বড় কারন। সেটা কি তোমরা ভেবেছ? আদর্শ ধারন করার মতো মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগে খুবই কম। নতুন প্রজন্মের মেধাবী তরুনরা ছাত্রলীগে ঢুকতে, সক্রিয় রাজনীতি করতে লজ্জাবোধ করে। নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা কেন মহান বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সক্রিয় অনুসারী হতে বিব্রত হচ্ছে তা তোমাদের খুজে বের করতে হবে । তোমরা কি কখনো ভেবেছ, কেন এমন হচ্ছে? তোমরা যারা ছাত্রলীগ করো এটা তোমাদের ভাবতে হবে। তোমাদের খুজে বের করতে হবে কেন ছাত্রলীগের এই সংকট? কোন কর্মীর কু কর্মের দায় নিবে না বললে দায় মুক্তি হয় না, এটা তোমাদের বুঝতে হবে। তোমাদের বুঝতে হবে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তোমরা উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছ, ঠিক সভ্যতার বিপরীতে। সবার আগে এটা তোমাদের মাথায় রাখতে তোমরা একজন মহান নেতার অনুসারী।

প্রিয় ছাত্রলীগ,
স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিগুলো এখনো বিশ্বাস করে তোমরা এখনো তাদের আশা ভরসার প্রতীক হতে পারো। তারা বিশ্বাস করে একটি জায়গায় তোমরাদের পচন ধরেনি। পচন ধরেনি বলেই, তোমরা স্বাধীনতা বিরোধীদের মোকাবেলা করতে দ্বিধাহীন ঝাপিয়ে পড়ো।এ ব্যাপারে তোমাদের কোন কার্পন্য নেই। তোমাদেরই সহকর্মী সংগঠন ছাত্রদল জামাতী চেতনায় বিলীন হয়েছে। তোমরা তেমনটি হওনি বলে অন্যরা এখনো তোমাদের জেগে উঠার প্রার্থনা করে। দয়া করে তোমরা শুদ্ধ হও। সু-সভ্য হও।

তোমরা শেখ হাসিনার নৌকা ডুবিয়ে দিও না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×