খালেদা জিয়ার রায়ের আগেই শফিক রেহমান পালিয়ে গেছেন লন্ডনে। ২০০৭ সালে আমাদের সময় পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি পুন:প্রকাশিত হল।
লিখেছেনঃ গৌড়জন
তিনি রসময় গুপ্ত! তিনি সমকামী!
তিনি স্বৈরাচার বিরোধী দিবসে ভালবাসা দিবস চালুর উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর প্রকাশ করেছেন তার এক সময়ের সহযোগী সাংবাদিক।
শফিক রেহমান এর পেশা-জীবন শুরু হয় একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিসেবে। পরবর্তীতে লন্ডনে বাংলা রেডিও স্টেশন চালুসহ বিবিসি, ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
রসময় গুপ্ত!
তার এক সময়ের সহকর্মী জানায় ভালবাসা দিবসের আগে নেপথ্যে থেকে বাংলাদেশে পর্ণো-সাহিত্য প্রকাশ শুরু করেন আর সেই বইগুলোর লেখক হিসাবে ছদ্দনাম ব্যবহার করতেন রসময় গুপ্ত। লন্ডন থেকে বিভিন্ন নগ্ন/পর্ণো ছবি সংগ্রহ করে বাংলাদেশে রসময় গুপ্ত নামে প্রচলিত ভাষায় "চটি" প্রকাশ করে অনেকদিন একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। পরবর্তিতে একই নাম দিয়ে অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকাশকরা প্রকাশ শুরু করলে ব্যক্তিগত সুনাম রক্ষার্থে ব্যবসা থেকে হাত গুটাতে হয়। ১৯৮৪ সালে শুরু করেন সাপ্তাহিক যায়যায়দিন যেখানে লুকিয়ে থাকা গুপ্তের সামান্য ছায়া পড়তো।
যায়যায়দিন
বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্ভবত সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ছিল যায়যায়দিন। মূলত এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী ক্ষুরধার লেখনী পাঠকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা সক্ষম হয়। ৯১ পরবর্তীতেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ সকল মতের সংবাদ/কলাম প্রকাশ, যুক্তি উপস্থাপন করে সংবাদ বিশ্লেষণ এবং সৎ ও নির্ভিক সাংবাদিকদের সহযোগিতায় যায়যায়দিন'এর অবস্থান সুসংহত থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেকে রাজনৈতিক মেরুকরণে আবদ্ধ করে বিতর্কিত হয়ে পড়েন।
জানা যায় ৯৮ সাল থেকে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়ানো শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা বেশী হওয়ায় বিএনপির দিকে ঝুকে পড়েন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে "১ কোটি ভোটারের কাছে আবেদন" শিরোনামে সংখ্যা প্রকাশ করার মাধ্যমে দলীয় সাংবাদিক হিসেবে হাতে খড়ি দেন। এ থেকেই কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি-বিরোধী বা আওয়ামী লীগ সমর্থন পাবে এ ধরনের লেখার প্রতি সেন্সর জারী করায় অনেক সাংবাদিক/লেখক সরে আসেন সে পত্রিকা থেকে। পাঠকদের কাছে মৃত্যু হয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের।
দৈনিক যায়যায়দিন
সাকা চৌধুরীর পরামর্শে হাওয়া ভবনের নূরুল ইসলাম ছোটন এর টাকায় যায়যায়দিন দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত করতে তেজগাঁর খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে, সরকারি রাস্তার নাম পাল্টে 'লাভ রোড' রেখে বসুন্ধরা গ্রুপের টাকা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে আলিশান অফিস তৈরির কাজ চলে। আবার কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে যাযাদি দৈনিক হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে -- এমন সাজ সাজ রব পড়ে মিডিয়া জগতে। বছর দেড়েক ধরে শুধু অফিস নির্মাণ, অত্যাধুনিক প্রেস এবং নিজস্ব পাওয়ার স্টেশন বসানো, বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া থেকে বাছাই করে সংবাদ কর্মী নিয়োগের কাজও চলে। ২০০৬ সালে দৈনিক যায়যায়দিন প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়। ২০০৬ সালের একতরফা নির্বাচন করতে বিএনপির এই পরামর্শদাতা ১/১১ পট পরিবর্তনের পর তার নাটের গুরু নূরুল ইসলাম ছোটন গা ঢাকা দিলে দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায়।
চার মাসের মাথায় ২০০৬ সালের অক্টোবরে বসুন্ধরা গ্রুপের চাপে শফিক রেহমান গার্মেন্টস শ্রমিক ছাঁটাই করার কায়দায় একসঙ্গে ছাঁটাই করেন শতাধিক সংবাদকর্মী। কোনো রকম আগাম নোটিশ এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ ছাড়াই ঈদের ছুটির পর এই ছাঁটাই কার্যকর করা হয়। এক সকালে সাংবাদিকরা যাযাদির অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন অফিস গেট বন্ধ; প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাঁটাই নোটিশ!
ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা খবর পান, শফিক রেহমান পত্রিকাটি বন্ধ করে তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা ছাড়াই লন্ডন পাড়ি জমাচ্ছেন! তারা ধাওয়া করেন বিমানবন্দরে। পরবর্তীতে আর্থিক কেলেংকারী সংশ্লিষ্টতার কারণে গ্রেফতার হন এবং ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার সংশ্লিষ্ট চিঠি
কামুক ও সমকামী : শফিক রেহমান
হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে একাউন্টেন্ট হিসাবে কর্মরত থাকতে শফিকের বিরুদ্ধে এক কর্মচারী সমকামীতার অভিযোগ তোলে বলে জানা যায়। ৯১ পরবর্তীতে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে নবীন লেখকদের লেখার সুযোগ দেয়ার নামে নবীনরা এবং ডেমোক্রেসীওয়াচের ছাত্রছাত্রী/সার্ভেয়ারদের মধ্যে অনেককেই সে ফাদে আটকে যৌন-সম্পর্ক গড়ে তুলতো। এ নিয়ে কয়েকবার তার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কাছেও বিরাগভাজন হয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিস্ট
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান লবিং গ্রপের সাথে এক সময় সুসম্পর্কের কারণে শফিক রেহমান বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসাবে কাজ করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের আইএসআই এবং তাদের সমর্থিত সাংবাদিক গ্রুপের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হয়। বর্তমানে দৈনিক আমার দেশ এবং নয়াদিগন্তে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে পাকিস্তান ডেইলি'তে সংবাদ প্রেরণ ও প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা/ব্যক্তিত্বদের কাছে প্রেরণ করছে যার বিষয়বস্তু : বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সিভিল ওয়ার কায়েম করেছে এবং ভারতের নির্দেশে সব চলছে।
শফিক রেহমান সকলের পরিচিত একটি নাম। এক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু তার মতো একজন ব্যক্তিত্বের পূর্ব ইতিহাস এমনকি বর্তমান কার্যক্রমও অনেককেই আহত করেছে বা করবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


