somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলধর মাঝি ও একটি গল্পের পুনরাবৃত্তি

০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এলোমেলো নদী। পালতোলা নদী। ভৈরবী রাগে বয়ে চলা। ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল। দাঁড় টানা নাও তোমার-তেমন কই? কর্কশ চিৎকার নাওয়ের এঞ্জিনের, পালতোলা নাও, তোমার তেমন কই? মাঝি- ওহে মাঝি; নবারুণ সেই কবে, কোন দেশে কোনকালে তোমায় ছেড়েছিল- মানে সেই যে নবারুণ দাশ কবে থেকে উধাও; সেই যে- সেবার বুঝি সবার ঘরে ঘরে ফসল ধান- খুব ভাল আর উদ্দাম আনন্দ মনে... অথচ ঘরে তার যৈবতী বউ আর তিন বছরের ছেলে শিশু- নবারুণের। ঘরে বৈশাখের দাওয়ার ধান সাথে মনানন্দ। সেই বছরেই তো নবারুণ দাশ- গাতক নবারুণ; কবি নবারুণ দাশ ছেড়ে ছিল, মানে সেই যে তার হদিস মিলেনি; ও মাঝি; এ ঘটনাতো তোমার মুখে কত শুনেছি - মাঝি জলধর; এখন বুঝি তোমার মনে নেই? নবারুণের গান- যে লিখতো উইজ্জার মাছের মতো স্বপ্ন, লতা আর গান। সেই যে নবারুণ বিষ্যুদবারের হাটে চোখের জল বেচতো- হ্যাঁ গো হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে তোমার, জলধর মাঝি, তো শোন- সেই এক রাতে সে শুয়েছিল ঘরে; একা- বউ গিয়েছিল বাপের বাড়ি, নাইওর- সেবার ছিল তা আষাঢ় মাস। আকাশে মেঘ ছিল; মনভারী আকাশ- সেই রাতে তখন দ্বিপ্রহর হঠাৎ তার ঘুম যায় ভেঙ্গে- তখন সুনসান চারিধার, রাতটা তরল ছিল অথচ কেমন যেন জটিল- সেই সময় নবারুণের কানে এল পায়ের আওয়াজ। সে পায়ের কিগো খড়ম পায়ের আওয়াজ। সেই পায়ে ছিল ঘুঙরু বাঁধা। খট-ঝুম, খট-ঝুম, খট-ঝুম আওয়াজ হচ্ছেই- তখন নবারুণ বিছানায় শুয়ে- ঘুম ভাঙা নবারুণ দাস। বারান্দার বেঞ্চিতে বসে সেই আওয়াজ। পা দু'টো দোলাতে থাকে। ঝুমঝুম; ঝুমঝুম- আবার কিছু পরে সেই খট-ঝুম, খট-ঝুম স্পষ্ট বোঝে নবারুণ। আওয়াজটা আস্তে আস্তে সরেও যায় খেজুর গাছের দিকে, তারপর ঘাটে বাঁধা নাওয়ে। গলুই থেকে গলুইয়ে লাফাচ্ছে সেই আওয়াজ। পরে আর কিছুই শোনেনি সে ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টির ছন্দে।

ওহ্ শোন মাঝি জলধর, যদি আমার ভুল হয় তবে ধরিয়ে দিও। তোমার গল্প আজ আমি তোমার কাছেই করতে বসেছি। কি বললে; ফাঁদ পেতেছি? হয়তো তাই। তা মাঝি জলধর সেই যে নবারুণ তোমায় ছেড়েছিল- সেই কি তোমাদের শেষ দেখা? এই যে নদী যার পালতোলা মন সে কি ধরে রাখতে পারেনি নবারুণ দাশেরে। তো সেই দিন ভোরেই নবারুণ নাও নিয়ে ছুট দিল বউয়ের কাছে। বড় আদরের ছিল কিনা সে। পথে শুধু সেই বিষ্যুদবারের হাট- নাও ভিড়িয়ে হাটে আবার নবারুণ বেচে চোখের জল। সেইতো নবারুণের উধাও হওয়া তাই নাগো মাঝি জলধর?

নবারুণ দাশ কবি ছিল- বউকে পায়নি; শ্বশুর বাড়িতে শুধু ছেলেটা ছিল। তিন বছরের ছেলে- শিশু দাশ। নবারুণ দাশ- বউ তাকে ছেড়েদিয়েছে; শিশু দাশ মাকে তাকে ত্যাগ করেছে। যৈবতী মনে সে ঘর ছেড়ে ঘর বেঁধেছিল বাপের গাঁয়ের রহমত ব্যাপারির ছেলে শামছুর সাথে। আর সেই যে নাও নিয়ে নবারুণ দাশ গিয়েছিল সে নাও বাইতে থাকলো তো থাকলো- ছেলেটার দিকে ফিরেও তাকাল না। তাইনাগো জলধর মাঝি? নবারুণের সেই যে উধাও হওয়া তারপর তো তাকে কেউ আর দেখেনি- সেই তো সে বছর- ধানের বছর নবারুণ তোমাকে ছেড়েছিল। সেই নবারুণ দাস, যে কিনা চোখের জল বেচে বেচে আকাশ কিনতো মুঠো ভরে আর তার সেই তিন বছরের ছেলে শিশু দাশ- সে এখন বিষ্যুদবারের হাটে তার সমস্ত বুকখোলে গেরস্থালি বেচে আর মুঠো ভরে বাপের মতো সমস্ত আকাশ জমিয়ে রাখে।

তাই নাগো মাঝি জলধর?
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×