somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ: মরিবার হলো তার সাধ এবং কোন এক আবুল হাসেন

১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাদিন সূর্যলাগা খইভাজা ততা বালুচর অনেক আগেই তার ক্রোধ স্বাভাবিক করে নিয়েছে। চাঁদলাগা বালুচর এখন ক্রোধহীন। চাঁদ মেঘের পিছনে নিভু নিভু। নদীর স্বাভাবিক বেগে বয়ে চলা পানির শব্দ পাড়ের বালুচরে প্রভাব ফেলে কিনা তা খুব একটা বোঝা যায় না। শুধু ঠান্ডা বাতাস তীরে গাছগুলোতে নাড়িয়ে যায় আর গাছে বসা পেঁচা কয়টি মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটায়। কখনো একটু উড়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়ে ফিরে আসে কিছু পর। মাঝে মাঝে নদীতে হানা দেয় এঞ্জিনের শব্দ। নৌকা এলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় খুব দ্রুত। এঞ্জিনের ককর্শ শব্দ বালুচরের গাছবাড়ির পাখিদের জীবনে কোন ডানা ঝাপটানো তোলে না। বালুচর খেকে দূরে ব্রীজের উপর তারার মতো নিভু নিভু গাড়ির মাথার বাতি চলে যায় । গাড়ির এঞ্জিনের শব্দ বালুচরকে ছোঁয় না।

আবুল হাসেন খুব আস্তে চাঁদলাগা ক্রোধহীন বালুচরে নেমে আসেন। খালি পা। লুঙ্গি-গেঞ্জি গায়ে। নদীর পাড়ে আবুল হাসেন দাঁড়িয়ে থাকেন, বালুতে পা ডুবান। কোমরের গাঁট থেকে একটা সিগারেট বের করেন। মোচড়ানো আর ভাঁজ পরা সিগারেটটি হাতের দু’আঙ্গুলের ফাকেঁ আটকে রাখেন আবুল। অনেক দিন পরে নদী তীরে আসা হোসেনের। প্রায় দশ বছর।

এমনিতে সকাল সন্ধ্যা অফিস করেন আবুল। গত দশ বছরে কোনদিন দেরিতে অফিসে ঢুকেন নি।এ নিয়ে অফিসের বস সব সময়ই বাহবা দেন তাকে। অবশ্য এ বিষয়টির জন্যই অনেক সহকর্মীর বাঁকা নজরও আছে তার উপর। যদিও তার এই নিয়মানুবর্তিতা চাকুরির পদন্নোতির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেনি। বিশ বছর চাকুরি জীবনে এই প্রথম ৬মাস পূর্বে একটি প্রমোশন পেয়ে উপ সহকারি অফিসার হয়েছেন তিনি।উপ-ই হোক আর সহকারি-ই হোক তার পদবির শেষে কর্মকর্তা শব্দটি যোগ হয়েছে। ২০ বছর ধরে চাকুরিরত ক্লার্ক কাম অফিস সহকারি আবুল হোসেন এখন উপ সহকারি কর্মকর্তা আবুল হোসেন। সেই একই চেয়ার, একই কাজ শুধু ৭৫০ টাকা বেশি বেতন আর পদবিটা লম্বা।

মানুষ হিসেবে আবুল হাসেন বেশ নিরীহ প্রকৃতির। পাড়া প্রতিবেশির সাথে কোন রকম সম্পর্ক কিংবা অসম্পর্ক কিছুই নাই তার। সকালে বাসা হতে অফিস আর রাতে কিংবা মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় অফিস হতে বাসায়…

স্ত্রীর সাথে আবুল হাসেনের সম্পর্ক খুব একটা খারাপ না। মাঝে মাঝে আর দশটা নিম্নবিত্ত পরিবারের মতো মিসেস আবুল হাসেন কন্ঠস্বর উঁচুতে তুললেও জনাব আবুল হাসেন কখন প্রতি উত্তর করেন নি বলেই চলে। হয়তো বিয়ে পরবর্তী স্ত্রীর প্রত্যাশা সাথে নিজের সেই প্রত্যাশা পুরনের সামর্থই আবুল হাসেনকে সবসময় নির্বাক রেখেছে।যদিও এ বিষয়ে মিসেস আবুল হাসেন কোনদিন কোন কথা বলেন নি বরং বিষয়টি নিয়ে যতটা সম্ভব কথা না বলা যায় তাই করেছেন। ফলে জনাব আবুল হাসেন ও মিসেস আবুল হাসেন-এর সংসার জীবন খুব একটা খারাপ কাটছে না-এই সনদটুকু দেয়াই যায়।পূর্ণতা আর অপূর্ণতায় তিন সন্তানের জন্ম দিয়ে কেটে গেছে দাম্পত্য জীবনের ১৫টি বছর।


এক জীবনে আবুল হাসেন কবি কিংবা লেখক হতে চেয়েছিলেন। ২০ বছর পুরানো লেখার খাতাটি এখনও যত্ন মিশ্রিত অবহেলায় তার ড্রয়ারে সংরক্ষিত আছে। মাঝে মাঝে খাতাটির পাতা উল্টাতে উল্টাতে আবুল চলে যান তার সেই পুরানো সময়ে।

গত ১৫ বছর ধরে একই রকম ভাবে বাসা আর অফিস অফিস আর বাসা করে গেছেন আবুল হাসেন। জীবনের প্রতি কোন খেদ নেই তার। জীবনে কোন দিন পূর্ণতা খোজেঁননি। অপূর্ণতাও অনুভব করেন না কোন। তবুও…

নদীটির তীরে দাঁড়িয়ে আবুল হাসেন পেঁচাদের ওড়াওড়ির মাঝে ঘরের দিকে মন নিতে চাইলেন। স্ত্রী-সন্তানের কথা মনে করতে চাইলেন। পারলেন না। শুধু বুকের ভিতরে একটা নদী কিংবা স্রোত অনুভব করলেন। পেঁচাদের ওড়াওড়ির সাথে মিশে যেতে থাকলেন। আত্মসমর্পন করতে চাইলেন নদীর কাছে। ভেবে নিলেন, আর তাকে কোথাও দেখা যাবে না। শুধু রাত গভীর হলে, পেঁচাদের ওড়াওড়িতে নিজেকে খোঁজে নিবেন।

এইভাবে অসংখ্য আবুল হাসেনের মধ্য থেকে কোন এক আবুল হাসেন কোন এক রাতের শেষ প্রহরে চাঁদের আলো থাকুক আর না থাকুক পেঁচাদের ওড়াওড়ির মাঝে নদীর স্রোতে মিশে গেলেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×