somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

** হিমুরাইজ ** = ০১

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হিমুরাইজ = ০১

তোর কত বছর বয়স রে নীল?

হঠাৎ সজিব ভাইয়ের এমন প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হয়ে যায়।অবাক হবার ছেলে আমি নয়।বরং আমিই সবাইকে অবাক করে দেই।অবাক হলাম এ জন্য যে,সজিব ভাই আমার নাড়ি-নক্ষত্র সব জানেন।সজিব ভাই আমার ছয় বছরের সিনিয়র।আমরা এখন বিল্টু ভাইয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি।রোজ বিকালেই আমি আর সজিব ভাই এখানে এক সাথে বসে চা খাই।আমাদের এই মফস্বল শহরে বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকান বিখ্যাত।অত্যাধিক পরিমানে ভিড় লেগে থাকে এখানে সব সময়।কিন্তু আমরা এলে যতই ভিড় লেগে থাকুক বিল্টু ভাই ঠিকই আমাদের কে আগে চা দেন।আমাদের জন্য বিল্টু ভাইয়ের অনেক দুঃখ।শিক্ষিত হওয়া সত্বেও আমরা বেকার।মামু-খালুর অভাবে চাকরি হচ্ছে না।বিল্টু ভাই বলেন,সরকারের কোন চোঁখ নাই আপনাদের মত ইয়ং পোলাপানদের চাকরি দেন না।আমি সরকার হলে আপনাদের কে আগে চাকরি দিতাম।আমি বিল্টু ভাইকে বলি,তুমি সরকার না তাতে কি হয়েছে তবুও তোমার ক্ষমতা আছে আমাদের কে চাকরি দেওয়ার।তুমি আমাদের কে তোমার দোকানে "বয়" পদে চাকরি দিতে পার।আর এ কাজে আমার তিন বছরের অভিজ্ঞতা আছে।আজকাল তো অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন চাকরি হয় না।বিল্টু ভাই একটু হেসে বিনয়ের সাথে বলেন,কি যে কন নীল ভাই আপনি শিক্ষিত মানুষ আপনি এ কাম করবেন ক্যান।আমি বিল্টু ভাইকে বলি,সত্যি সত্যি একদিন দেখবেন পত্রিকায় চাকুরির বিজ্ঞাপনে দেওয়া থাকবে,অমুক চায়ের দোকানে একজন বয় পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হইবে।নূন্যতম যোগ্যতা এইচ এস সি পাশ ও কম পক্ষে দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে।আমি অবশ্য বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরির জন্য অপেক্ষা করছি অনেক দিন ধরে।কিন্তু বিল্টু ভাই এখনও পর্যন্ত আমাকে তার চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরির এপোয়েন্টমেন লেটারটা দেন নি।তবে বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোন দেশে যদি বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানটা হত তাহলে আমি ঘুষ দিয়ে হলেও বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরিটা নিতাম।বাংলাদেশে এ পদে চাকুরি করা অনেক বড় বিপদজনক।কোন দিন যদি কোন খরিদ্দারকে ভুলক্রমে ঠান্ডা চা দিয়ে দেই তাহলে সর্বনাশ!শুধু গরম পানি নয় এসিড দিয়ে আমার সারা শরীর ঝলসে দিতে পারে।এর জন্য আমি বিল্টু ভাইকে আর জোর করি নাই।

সজিব ভাই আবার বললেন,কিরে নীল তোকে কি বললাম?তোর বয়স কত জিজ্ঞেস করলাম না।আমি তবুও চুপ করে থাকি।কোন কথা না বলে আকশের দিকে তাকায়।না আকাশে কোন মেঘ নেই।আকাশে মেঘ থাকলে সমস্যা তখন সজিব ভাইয়ের মাথা ঠিক থাকে না।উল্টা-পাল্টা কথা বলেন।আকাশে মেঘ থাকলে সজীব ভাইয়ের মাথা কেন যে খারাপ হয়ে যায় এ নিয়ে আমি অনেক গবেষনা করেছি।তবে সঠিক কোন কারন এখনও বের করতে পারিনি।যে কয়েকটি কারন বের করেছি তার মধ্যে একটি কারন হল-আকাশে যখন মেঘ জমে তখন মেঘের যে ছায়া পড়ে সেই ছায়ার যে চাপ সেটা সজিব ভাইয়ের মাথার উপর পড়ে তাই তখন সজিব ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে যায়।

আর চুপ করে থাকা যাবে না,এবার আমাকে বলতেই হবে আমার বয়স কত।সজিব ভাই কিছুটা ঝাড়ি দিয়েই বললেন,এই গাধা তুই কি মেয়ে মানুষ যে বয়স কত বলতে এত সংকোচ।আমি তো আর তোর কাছে তোর বেতনের কথা জিজ্ঞের করিনি যে বলতে এত আপত্তি।তাছাড়া তুই কোন চাকুরিও করিস না যে তোর কাছে তোর বেতনের কথা জিজ্ঞের করব।এখন তাড়াতাড়ি বল তোর বয়স কত।

তুমি তো জানো সজিব ভাই আমার বয়স কত।

জানি তো তোর কি, তোকে জিজ্ঞেস করেছি তুই বলবি।দিন দিন দেখছি তোর মেয়ে মানুষের স্বভাব পাচ্ছে।লিঙ্গ চেন্জ করবি নাকি?সুবিধাই পাবি তাতে।আমাদের দেশে বর্তমানে মেয়েদের অনেক সুবিধা।সংসদে আলাদা সংরক্ষিত আসন,চাকুরির জন্য আলাদা কোটা,সর্ব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার বেশি।

এবার আমাকে বয়স বলতেই হবে না বলে উপায় নেই।

চব্বিশ বছর সজিব ভাই।

গুড বয়।এতক্ষনে বললেই তো হয়ে যেত,না শুধু শুধু মেয়ে মানুষের মত প্যাচাল পাড়লি।এবার শোন আমি তোর বয়স জিজ্ঞের করলাম কেন।তুই তো বললি তোর বয়স চব্বিশ বছর তাই না?তোর বয়স আসলে বার বছর।

বার বছর!!আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।আকাশ মেঘলা না কোথাও এক টুকরো মেঘ নেই তবুও সজিব ভাইয়ের পাগলামিটা কেন দেখা দিচ্ছে বুঝতে পারছি না।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন যেন ভাল হয়ে গেল।অদ্ভুত নীল আকাশ।শুনেছি শরতের আকাশ সবচেয়ে নীল হয়।এখন আমার মনে হচ্ছে এটা মিথ্যা।বর্ষা কালের আকাশ সবচেয়ে বেশি নীল হয় বর্ষার সময় যখন আকাশে মেঘ থাকে না তখন।

কিরে নীল তোর বয়স বারো বছর বললাম বলে তুই কি মনে মনে হাসছিস?

কই না তো আমি হাসব কেন?তুমি হয়তো কোন যুক্তির মাধ্যেমে দেখতে পাচ্ছ আমার বয়স বারো বছর।

ঠিক ধরেছিস।আচ্ছা নীল আমরা কত বছরই বা বাঁচি বল,ষাট বা পয়ষট্টি বছর।খুব বেশি হলে সত্তর বছর।এই বেঁচে থাকার মধ্যে তো আমরা অর্ধেক সময় বা কেউ কেউ তার বেশি সময় ঘুমিয়েই কাটাই।ঘুমটাও তো একটা মৃত্যু তাই না?তাহলে আমরা যদি গড়ে ষাট বছর বাঁচি তাহলে সেটা ষাট বছর বাঁচা না বরং তাকে বলা যায় ত্রিশ বছর বাঁচা।এখন তোর বয়স চব্বিশ বছর।অর্ধেক বয়স বাদ দিলে কিন্তু তোর বয়স বারো বছরই হয়।

তুই কি বলিস নীল?

তুমি যা বললে সবই ঠিক আছে সজিব ভাই,তোমার মত করে কয় জন ভাবে বল।

এতক্ষনে শিওর হলাম সজিব ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়নি,ভালই আছে।এবার সজিব ভাই আরও জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলতে শুরু করবে।ও সব শক্ত কথা শুনতে আমার ভাল লাগে না।তাই আমি উঠে দাড়ায়।

ক্লাবে যাচ্ছি সজিব ভাই আজ পত্রিকা দেখা হয়নি,দেখি চাকুরির কোন বিজ্ঞপত্তি আছে কিনা।

তুই যা আমি আরেক কাপ কড়া লিকারের চা খেয়ে আসছি।

বিল্টু ভাইয়ের বয় এখন কাপ ধুচ্ছে।বয়স নয় কি দশ বছর।নাম কদর।নামটা ওর কদর কিন্তু কদর করার মত ওর কেউ নেই।আমি কদরকে ডেকে বলি,চাকুরি ছাড়ার আগে আমাকে বলিস তোর পদে আমি চাকরি করব।হলদে দাঁত বের করে কদর শুধু হাসে।ও বোঝে না ওর চেয়েও আমরা কত বড় অসহায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×