হিমুরাইজ = ০১
তোর কত বছর বয়স রে নীল?
হঠাৎ সজিব ভাইয়ের এমন প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হয়ে যায়।অবাক হবার ছেলে আমি নয়।বরং আমিই সবাইকে অবাক করে দেই।অবাক হলাম এ জন্য যে,সজিব ভাই আমার নাড়ি-নক্ষত্র সব জানেন।সজিব ভাই আমার ছয় বছরের সিনিয়র।আমরা এখন বিল্টু ভাইয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি।রোজ বিকালেই আমি আর সজিব ভাই এখানে এক সাথে বসে চা খাই।আমাদের এই মফস্বল শহরে বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকান বিখ্যাত।অত্যাধিক পরিমানে ভিড় লেগে থাকে এখানে সব সময়।কিন্তু আমরা এলে যতই ভিড় লেগে থাকুক বিল্টু ভাই ঠিকই আমাদের কে আগে চা দেন।আমাদের জন্য বিল্টু ভাইয়ের অনেক দুঃখ।শিক্ষিত হওয়া সত্বেও আমরা বেকার।মামু-খালুর অভাবে চাকরি হচ্ছে না।বিল্টু ভাই বলেন,সরকারের কোন চোঁখ নাই আপনাদের মত ইয়ং পোলাপানদের চাকরি দেন না।আমি সরকার হলে আপনাদের কে আগে চাকরি দিতাম।আমি বিল্টু ভাইকে বলি,তুমি সরকার না তাতে কি হয়েছে তবুও তোমার ক্ষমতা আছে আমাদের কে চাকরি দেওয়ার।তুমি আমাদের কে তোমার দোকানে "বয়" পদে চাকরি দিতে পার।আর এ কাজে আমার তিন বছরের অভিজ্ঞতা আছে।আজকাল তো অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন চাকরি হয় না।বিল্টু ভাই একটু হেসে বিনয়ের সাথে বলেন,কি যে কন নীল ভাই আপনি শিক্ষিত মানুষ আপনি এ কাম করবেন ক্যান।আমি বিল্টু ভাইকে বলি,সত্যি সত্যি একদিন দেখবেন পত্রিকায় চাকুরির বিজ্ঞাপনে দেওয়া থাকবে,অমুক চায়ের দোকানে একজন বয় পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হইবে।নূন্যতম যোগ্যতা এইচ এস সি পাশ ও কম পক্ষে দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে।আমি অবশ্য বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরির জন্য অপেক্ষা করছি অনেক দিন ধরে।কিন্তু বিল্টু ভাই এখনও পর্যন্ত আমাকে তার চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরির এপোয়েন্টমেন লেটারটা দেন নি।তবে বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোন দেশে যদি বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানটা হত তাহলে আমি ঘুষ দিয়ে হলেও বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে বয় পদে চাকুরিটা নিতাম।বাংলাদেশে এ পদে চাকুরি করা অনেক বড় বিপদজনক।কোন দিন যদি কোন খরিদ্দারকে ভুলক্রমে ঠান্ডা চা দিয়ে দেই তাহলে সর্বনাশ!শুধু গরম পানি নয় এসিড দিয়ে আমার সারা শরীর ঝলসে দিতে পারে।এর জন্য আমি বিল্টু ভাইকে আর জোর করি নাই।
সজিব ভাই আবার বললেন,কিরে নীল তোকে কি বললাম?তোর বয়স কত জিজ্ঞেস করলাম না।আমি তবুও চুপ করে থাকি।কোন কথা না বলে আকশের দিকে তাকায়।না আকাশে কোন মেঘ নেই।আকাশে মেঘ থাকলে সমস্যা তখন সজিব ভাইয়ের মাথা ঠিক থাকে না।উল্টা-পাল্টা কথা বলেন।আকাশে মেঘ থাকলে সজীব ভাইয়ের মাথা কেন যে খারাপ হয়ে যায় এ নিয়ে আমি অনেক গবেষনা করেছি।তবে সঠিক কোন কারন এখনও বের করতে পারিনি।যে কয়েকটি কারন বের করেছি তার মধ্যে একটি কারন হল-আকাশে যখন মেঘ জমে তখন মেঘের যে ছায়া পড়ে সেই ছায়ার যে চাপ সেটা সজিব ভাইয়ের মাথার উপর পড়ে তাই তখন সজিব ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে যায়।
আর চুপ করে থাকা যাবে না,এবার আমাকে বলতেই হবে আমার বয়স কত।সজিব ভাই কিছুটা ঝাড়ি দিয়েই বললেন,এই গাধা তুই কি মেয়ে মানুষ যে বয়স কত বলতে এত সংকোচ।আমি তো আর তোর কাছে তোর বেতনের কথা জিজ্ঞের করিনি যে বলতে এত আপত্তি।তাছাড়া তুই কোন চাকুরিও করিস না যে তোর কাছে তোর বেতনের কথা জিজ্ঞের করব।এখন তাড়াতাড়ি বল তোর বয়স কত।
তুমি তো জানো সজিব ভাই আমার বয়স কত।
জানি তো তোর কি, তোকে জিজ্ঞেস করেছি তুই বলবি।দিন দিন দেখছি তোর মেয়ে মানুষের স্বভাব পাচ্ছে।লিঙ্গ চেন্জ করবি নাকি?সুবিধাই পাবি তাতে।আমাদের দেশে বর্তমানে মেয়েদের অনেক সুবিধা।সংসদে আলাদা সংরক্ষিত আসন,চাকুরির জন্য আলাদা কোটা,সর্ব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার বেশি।
এবার আমাকে বয়স বলতেই হবে না বলে উপায় নেই।
চব্বিশ বছর সজিব ভাই।
গুড বয়।এতক্ষনে বললেই তো হয়ে যেত,না শুধু শুধু মেয়ে মানুষের মত প্যাচাল পাড়লি।এবার শোন আমি তোর বয়স জিজ্ঞের করলাম কেন।তুই তো বললি তোর বয়স চব্বিশ বছর তাই না?তোর বয়স আসলে বার বছর।
বার বছর!!আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।আকাশ মেঘলা না কোথাও এক টুকরো মেঘ নেই তবুও সজিব ভাইয়ের পাগলামিটা কেন দেখা দিচ্ছে বুঝতে পারছি না।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন যেন ভাল হয়ে গেল।অদ্ভুত নীল আকাশ।শুনেছি শরতের আকাশ সবচেয়ে নীল হয়।এখন আমার মনে হচ্ছে এটা মিথ্যা।বর্ষা কালের আকাশ সবচেয়ে বেশি নীল হয় বর্ষার সময় যখন আকাশে মেঘ থাকে না তখন।
কিরে নীল তোর বয়স বারো বছর বললাম বলে তুই কি মনে মনে হাসছিস?
কই না তো আমি হাসব কেন?তুমি হয়তো কোন যুক্তির মাধ্যেমে দেখতে পাচ্ছ আমার বয়স বারো বছর।
ঠিক ধরেছিস।আচ্ছা নীল আমরা কত বছরই বা বাঁচি বল,ষাট বা পয়ষট্টি বছর।খুব বেশি হলে সত্তর বছর।এই বেঁচে থাকার মধ্যে তো আমরা অর্ধেক সময় বা কেউ কেউ তার বেশি সময় ঘুমিয়েই কাটাই।ঘুমটাও তো একটা মৃত্যু তাই না?তাহলে আমরা যদি গড়ে ষাট বছর বাঁচি তাহলে সেটা ষাট বছর বাঁচা না বরং তাকে বলা যায় ত্রিশ বছর বাঁচা।এখন তোর বয়স চব্বিশ বছর।অর্ধেক বয়স বাদ দিলে কিন্তু তোর বয়স বারো বছরই হয়।
তুই কি বলিস নীল?
তুমি যা বললে সবই ঠিক আছে সজিব ভাই,তোমার মত করে কয় জন ভাবে বল।
এতক্ষনে শিওর হলাম সজিব ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়নি,ভালই আছে।এবার সজিব ভাই আরও জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলতে শুরু করবে।ও সব শক্ত কথা শুনতে আমার ভাল লাগে না।তাই আমি উঠে দাড়ায়।
ক্লাবে যাচ্ছি সজিব ভাই আজ পত্রিকা দেখা হয়নি,দেখি চাকুরির কোন বিজ্ঞপত্তি আছে কিনা।
তুই যা আমি আরেক কাপ কড়া লিকারের চা খেয়ে আসছি।
বিল্টু ভাইয়ের বয় এখন কাপ ধুচ্ছে।বয়স নয় কি দশ বছর।নাম কদর।নামটা ওর কদর কিন্তু কদর করার মত ওর কেউ নেই।আমি কদরকে ডেকে বলি,চাকুরি ছাড়ার আগে আমাকে বলিস তোর পদে আমি চাকরি করব।হলদে দাঁত বের করে কদর শুধু হাসে।ও বোঝে না ওর চেয়েও আমরা কত বড় অসহায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৯