somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষত্ব (একটি অন্য ধাচের গল্প)

১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের মাস খানেকও হয়নি স্ত্রী ডিভোর্স দিতে চায়। ডিভোর্সের কারণ হিসাবে শ্বশুর শাশুড়ীকে বলেছে আমি স্বামী নাকি পুরুষত্ব'হীন। তার দ্বারা নাকি কখনো বাচ্চার বাবা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কথা গুলো শুনে স্বামীর লজ্জায় অপমানে ম'রে যেতে ইচ্ছে করছিলো। স্ত্রী অনুকে নিতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল কিন্তু শ্বশুরের মুখ থেকে পুরুষত্ব নিয়ে কথা শুনতে হবে সেটা কখনো ভাবেনি। শ্বশুরের পাশে বসে থাকা শ্বাশুরীকে বলল,
-মা, অনুকে একটু ডাকবেন? ওর সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
শ্বাশুড়ী সোফায় বসে থাকা অবস্থায় অনুকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু অনু আসলো না। তাই শ্বাশুড়ী উঠে অনুর রুমের দিকে গেলেন। আমার শ্বশুর তখন আমার কাছে নিচু সুরে বললেন,
-" বাবা, শ্বশুর হয়ে তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে তবুও বলছি, তুমি ভালো কোন ডাক্তার দেখাও। তোমার তো টাকা পয়সার অভাব নেই দরকার পড়লে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাও। যদি সুস্থ হও তবেই তোমার সংসারে আমার মেয়েকে পাঠাবো। তা না হলে না"
শ্বশুরের কথা শুনে আমি মাথা নিচু করেছিলাম। উনার কথার কোন জবাব দিতে পারছিলাম না। অপেক্ষা করছিলাম শুধু অনু আসার জন্য। কিছুক্ষণ পর অনু রেগে আগুন হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো। আমি কিছু বলার আগেই ও রাগে চিৎকার করে বললো,
-"আপনি এখনো কোন মুখে এইখানে বসে আছেন? আমি আপনার মতো কোন হিজরার সাথে সংসার করবো না। আপনি চলে যান"
আমি মাথা নিচু রেখেই আমার শ্বশুরকে বললাম,
-" দেশের বাইরে চিকিৎসা করালেও আমার এই অসুখ ভালো হবে না। তারচেয়ে বরং আপনারা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করুন আমি সাইন করে দিবো।"
এই কথা বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি অনু আমার সাথে কেন এমনটা করলো। বিয়ের দ্বিতীয়দিন রাতে আমি যখন ওর কাছে যায় তখন ও মাথা নিচু করে বলেছিলো, " আমায় কিছুদিন সময় দিন। আমি এখনো এইসবের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত না।"
আমি তখন ওর হাতটা ধরে বলেছিলাম, তোমার যতদিন ইচ্ছে সময় নাও। আমার কোন সমস্যা নেই।
সেদিনের পর থেকে আমি কখনো অনুকে স্পর্শ পর্যন্ত করি নি। একই বিছানায় ঘুমিয়েছি অথচ কখনো অনুকে স্বামীর অধিকার দেখিয়ে ওকে কাছে আসার জন্য জোর করিনি। অথচ আজ কিনা ও আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললো। ওকে সময় দেওয়াটা আমার ভুল হয়েছে নাকি ওর সাথে কেন আমি জোর দেখাই নি সেটা আমার ভুল হয়েছে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
বিয়ের ১মাসের মাথায় স্বামীকে ছেড়ে স্ত্রী চলে গেছে এটা সমাজের মানুষ কখনোই স্বাভাবিক ভাবে দেখে না। সমাজের প্রতিটা মানুষের কাছে আমি হাসির পাত্র হয়ে গিয়েছিলাম। রাস্তায় চলাচল করার সময় এলাকার ছোট ভাইরা পর্যন্ত আমায় দেখে মজা করে বলতো,
-"কলিকাতা হারবাল এক ফাইল যথেষ্ট মূল্যমাত্র ১৪৯০ টাকা"
আমি এইসব কথার কোন জবাব দিতে পারতাম না। মাথা নিচু করে চলে যেতাম।
এমনকি আমার নিজের মা পর্যন্ত আমায় বলেছে,
-"বাবা তুই কোন ডাক্তার কিংবা কবিরাজ দেখা। তুই আমার একমাত্র ছেলে। আমি চাই না তোর জীবনটা এইভাবে নষ্ট হয়ে যাক"
আমি আমার মায়ের কথাগুলো শুধু নিরবে শুনলাম। এখন আমি আমার মাকে কিভাবে বলি, মা আমার কোন সমস্যা নেই। সমস্যাটা মেয়ের ছিলো। সে আমার সুযোগ নিয়ে আমায় ধোকা দিয়েছে।
দুই বছর পরের ঘটনাঃ-
রাস্তায় হুট করে আমার প্রাক্তন স্ত্রী অনুর সাথে দেখা। অনুকে দেখে আমি বেশ চমকে গেলাম। এই অনু আর দুইবছর আগের অনুর মাঝে অনেক তফাৎ। চেহেরাটা একদম ভেঙে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অনু আমায় দেখে নিজ থেকেই শুকনো হাসি হেসে আমায় বললো,
-" কেমন আছেন?"
আমি বললাম,
--আমি ভালো কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন?
অনু মাথা নিচু করে বললো,
-"আমি আপনার উপর করা অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি। এই শাস্তিটা আমার সারাজীবন ভোগ করতে হবে"
আমি অবাক হয়ে বললাম,
--মানে!
অনুর চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,
-" আসলে আপনার সাথে বিয়ে হবার আগে থেকেই আমার এক কাজিনের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আমরা ভয়ে কারো পরিবারকে জানাতে পারছিলাম না যেহেতু আমরা মামাতো ভাই বোন হই সেহেতু এটা কেউ মেনে নিবে না। তাই আমরা দুইজনে মিলে প্ল্যান করলাম আমি বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো আর বিয়ের মাসখানিক পরেই বাবা মাকে বলবো ছেলের মাঝে শারীরিক সমস্যা আছে ও পুরুষত্বহীন। বিষয়টা যেহেতু খুব সেনসিটিভ তাই বাবা মা এটা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবে না। সহজেই ডিভোর্স হয়ে যাবে। ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না তখন আমার কাজিন আমাকে বিয়ের কথা বলবে আর বাবা মা আপত্তি করবে না।
আমি তখন বললাম,
--তাহলে এখন কি কোন সমস্যা হয়ছে?
অনু বললো,
-" আপনায় পুরুষত্বহীন অপবাদ দিয়ে আমি আমার কাজিন আরিফকে বিয়ে করি। সে তার পুরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রতিদিন রাতেই আমার উপর নির্যাতন চালায়। তরকারিতে লবণ বেশি হলে আমার গালে থাপ্পড় মেরে তার পুরুষত্ব প্রকাশ করে, জামা কাপড় সময় মতো না ধুলে আমার চুলের মুঠি ধরে পুরুষত্ব প্রকাশ করে। আর কিছু হলেই আমার চরিত্র নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলে। আমি নাকি এক নাম্বারের ধোকাবাজ। অথচ আমি ওকে পাবার জন্যই সব করেছি"
আমার প্রাক্তন স্ত্রীর কথা শুনে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
-- নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে যদি কেউ পুরুষত্ব প্রকাশ করতে চায় তাহলে সে পুরুষ না কাপুরুষ। তোমার প্রতি আমার অনেক রাগ আর ঘৃণা ছিলো। আজকের পর আর কিছুই নেই। তুমি আমায় যতখানি কষ্ট দিয়েছো তারচেয়ে বেশি পাচ্ছো। তাই শুধু শুধু তোমার প্রতি রাগ পুষে রেখে লাভ নেই।
এই কথা বলে আমি চলে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম,
উপরওয়ালা ছাড় দেন... কিন্তু ছেড়ে দেন না।
আজ তোমার প্রতি যদি কেউ অন্যায় করে তবে সে কাল.. নয়তো পরশু সেই অন্যায়ের শাস্তি পাবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:২৪
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×