somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বাথরুমে গণতন্ত্রের পতনে শ্যাওড়াপাড়ার মানুষেরা যা করে

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনার নীল শার্টের বগলে ঘাম শুকিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র উৎপন্ন হয় বলেই ভাববেন না- খুব দেশপ্রেমিক হয়ে গেছেন।

আয়নার নিজেকে দেখেছেন, কিন্তু আয়নার সামনের মানুষটিকে লক্ষ্য করেছেন কোনদিন? শ্যাওড়াপাড়া ওভার-ব্রিজের নীচে বাসের হাতলের জন্য খামচা-খামচি করে- যে আপনি আঙ্গুল ক্ষয় করে ফেলেছেন, তাকে চিনতে আপনার কষ্ট হবারই কথা। যখন বা-কান, আর ডান-হাটুর যন্ত্রণায় জাতি কোমর সোজা করতে পারছে না, তখন মেরুদণ্ডের ষোল না-কি ছাব্বিশ নম্বর হাড়ের স্থানচ্যূতির সংবাদে জাতীয়তাবাদী চেতনা খাড়া হয়ে উঠলে- আপনি নিজের মাজা-ব্যথার কথা ভুলে গেছেন; তারপরেও আপনি বাস ধরতে পারেননি।

আপনি যখন প্যাণ্টের পকেটে হাত দিয়ে বে-সাইজ জাঙ্গীয়ার নীচে কুচকি চুলকাচ্ছেন, আর নিজেকে জুয়েল আইচ ভাবছেন, তখনো খেয়াল করেননি- জুলফি বেয়ে চিড়বিড় করে যে ঘাম নামছে, তা আপনার গ্রামের কুমার নদের মতোই দেখতে; যার একপাশে চকবাজারের মুসুল্লিরা ওজু করে, অন্যপাশে হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারের বেশ্যারা গতর ডলে। লাইফ বয় সাবানে মুসুল্লি আর বেশ্যাদের গন্ধ দূর করলেও- সকাল আটটায় শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যাণ্ডে আসলেই আপনার পিঠে ঘামের গন্ধে আগরবাতি-টুপি-দাড়ি জন্ম নিবে। আমি নিশ্চিত না- পিঠে টুপি-দাড়ি জন্মে কি-না! তবে আপনার ঘামের ধারায়- ঢাকা ওয়াসা শংকিত হয়ে বহুবার মিরপুর ত্যাগ করেছে, এমন প্রমান আছে। আপনার স্ত্রী শ্যাওলা-জমা ড্রামে ক্ষণিকের জলস্রাব ধরে রাখেন, তাই আপনি হরতালের দিনে দিগম্বর আলমের হাতে ঠিকসময়ে পৌঁছাতে পারেন। আর বিবস্ত্র আপনি, ক্যামেরাবন্দি হন বলেই, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বেঁচে যায়।

বাসযাত্রীদের বাড়ন্ত লেজে দাঁড়িয়ে, আপনি স্ফিত মূত্রথলিকে ভুলে থাকার কৌশল রপ্ত করেছেন বলেই জানেন না, ন্যাম-ফ্লাটের বহুমূত্র-রোগীদের কত শর্করা জমেছে শ্যাওড়া পাড়ার ড্রেনে। ম্যানহোলের হা-করা মুখে ভাসমান কনডোমের মিছিল দেখে প্রীত হয়েছেন জেনেই- বিশ্বব্যাংক আপনার পিঠ চাপড়ে দিয়েছে। রাতে ঘুমানোর আগে, বাসের দুর্লভ পাদানির কথা ভুলে গেলে- আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে ওঠেন; এবং ফি-বছর নৌকা আর ধানেরশীষের ভোটার উৎপাদন নিশ্চিত করেন। এতকিছুর পরেও আপনি নিশ্চিত হতে পারেন না, আজ বাথরুমে কেউ আছাড় খাবে কি-না! নৌকা-লাঙ্গল-দাড়িপাল্লা-ধানেরশীষ টাট্টিখানায় পিছলে পড়লে, স্ত্রীর কপাল পুড়বে জেনেও আপনি শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে আছেন!

আপনি ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানির গল্প শুনে ভেবেছেন- রাজনীতির ডিসকোর্স বুঝে গেছেন! আপনি বৈশ্বিক-রাজনীতি বুঝলেও- শ্যাওড়াপাড়া থেকে মতিঝিলে যাওয়ার উপায় জানেন না। কোলগেট টুথপেষ্টে যতো ফেনা তৈরী হয়, আপনার কর্পোরেট, কর্পোরেট জিকিরে তারও বেশী ফেনা উঠেছে। জেনে রাখুন, রাজনীতির নর্দমায়- কর্পোরেট-ভূত আপনার দাম্পত্যক্রিয়ার সময়টাকে সংক্ষিপ্ত করেছে মাত্র।

আপনি কর্পোরেট আতংকে ভুগছেন, কারণ, রাষ্ট্রকে মালিকানাহীন মুদি দোকানের চেয়ে বেশী কিছু ভাবতে পারেননি আজ অব্দি। সত্যি কথা বলতে কি, রাষ্ট্রকে আপনি মুদিদোকানও ভাবেন নি; গনিমতের মাল ভেবেছেন। গনিমতের রাষ্ট্রে চৌর্যবৃত্তিকে ন্যায্য রাজনৈতিক দাবী জেনেছেন বলেই, নিজের আমবাতের কথা ভুলে দেশপ্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন; আর আশা করেছেন, সকাল নয়টার আগেই অফিসে পৌঁছাতে পারবেন।

পাইকপাড়ার রিক্সাওয়ালাকে ধমক দিয়ে শ্যাওড়াপাড়ায় আনা যায়, কিন্তু পায়ে ধরেও শ্যাওড়াপাড়ার স্কুটারকে মতিঝিলে নেয়া যায়না, আপনি ভালোই জানেন। আপনি আরো জানেন, পরিবহন মালিক সমিতি আপনার সরকারের চেয়ে শক্তিশালী। আপনি নিজেকে যেমন প্রতারিত ভাবেন, আপনার রাষ্ট্র তেমনি নিজেকে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার মনে করে এবং আপনি তা বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশ সরকারকে মাফিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেনেও আপনি ঘণ্টাখানেক ধরে বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে আছেন এবং গণতন্ত্র ছিঁড়ে আঁটি বাঁধছেন।

আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে ইতিউতি করছে, জানেন কি- মতিঝিল যাওয়ার তার কোন ঠেকা পড়েছে আজ? অন্ততঃ আজকে- টয়লেটে গণতন্ত্রের মাথাঘুরে পড়ে যাওয়ার এই দিনে! লুঙ্গিপরে কারা মতিঝিলের ভীড় বাড়ায়, তা জানেন?

রাস্তার পাশে ঝপ করে বসেই- মূত্রত্যাগে লুঙ্গির কোন বিকল্প পোষাক তৈরী হয়নি দেশে; কার্যকর ব্যবস্থাও নয়। বাংলাদেশে কয়টা পাকা-পায়খানা দরকার, সে হিসাব এডিবি জানলেও- জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ব্যুরো জানে না। শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যাণ্ডে পেটফাটা প্রশ্রাব নিয়ে মানুষ কি করে? ওই লুঙ্গিপরা লোকটা মুখে বিড়ি ঝুলিয়ে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না- বিড়ি ধরাবে কি ধরাবে না, আর তাতেই আপনার উসখুস দ্বিগুন হয়েছে। না-কি একই রকম মধ্যচাপে আপনিও আক্রান্ত?

'ভাই আমার জায়গাটা দেইখেন', বলে লোকটা হাতখানেক দূরে, ড্রেনের পাশে বসে পড়ে। আপনি কিছু শোনেননি ভাব নিয়ে শ্যাওড়াপাড়া মসজিদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও, লুঙ্গিপরা লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে নিশ্চিত হতে চায়- তার জায়গাটা বেদখল হয়নি। প্রশ্রাব শেষ করে লোকটা বিড়ি ধরায়, আপনার দিকে তাকিয়ে হাসে। যান না, আপনিও বসে পড়ুন! পৃথিবীর তিনভাগ জলে ক' ফোটা মূত্র যোগ করে, গোল্ডলিফে টান দিন- ভাল লাগবে।

আপনি জানেন, ঢিলা-কুলুপ না করেই লোকটা লাইনে ফিরে আসবে, খাজুরে গল্প শুরু করবে। আরো একটা বিআরটিসি ফোঁস করে বেড়িয়ে গেলে, আপনাকে অব্যর্থ প্রমান করে সে বলে ওঠে, 'যা দিনকাল পরছে!' এইসব লুঙ্গিপরা লোকজন ব্যারেল প্রতি ডিজেলের দাম জানেনা, রাজনীতির জ্যামিতিতে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্থান চেনেনা, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বোঝেনা, বোঝে খালি নাজিরশাইল চালের দাম। এদের সাথে কথা বলা বৃথা জেনেও, আপনি নাক দিয়ে ভোঁশ করেন; আর তাতেই লোকটা আস্কারা পেয়ে যায় এবং বলে, 'কাঁচামরিচেরও দাম ডাবল হয়ে গেছে!' কী মুশকিল! কাঁচামরিচ কী অন্যায় করেছে যে, এর দাম বাড়তে পারবেনা! সকাল পৌনে নয়টায় এসব খুচরা পিরিতের আলাপ আর যার সাথেই হোক, শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যাণ্ডে হাটুঅব্দি লুঙ্গি টেনে রাখা লোকের সাথে হয়না। 'আরে মিয়া, সারা দুনিয়াতেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে', লাইনের আগা-না-মাথা থেকে কে একজন উত্তর দিলে, আপনি ভাবেন- লুঙ্গিপরার হাত থেকে বেশ মুক্তি পেয়ে গেলেন!

এই শ্যাওড়াপাড়ায় পৌঁছেই আপনি ভুলে যান- যুদ্ধাপরাধীনামক চর্মরোগের কথা। শীতকালে, আর নির্বাচনের আগে এই রোগের প্রকোপ এতোই প্রবল হয় যে, আপনি নিজের পিঠ বাঁচানোর ভুলে- খ্যাস খ্যাস করে দেশের চামড়া তুলে ফেলেন; নিজেকে দেশপ্রেমিক ভাবেন। নৌকা-দাড়িপাল্লার কোলাকুলিকে লুঙ্গিপরা লোকজনের কাছে রাজনৈতিক কৌশল বলে প্রচার করেন বলেই, আপনার পিঠে স্বাধীনতাবিরোধীরা লাথি মেরে মজা পায়।

আপনি জানেন না, ইসলামী-জোশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে আপনার ঘরে ঢুকেছে বলেই, জানালা দিয়ে ধর্ম পালিয়ে গেছে। আপনি এখনো বিশ্বাস করেন না, বায়তুল মোকাররম মূলতঃ নিমের মেছওয়াক, আর আতর বেপারীদের জন্য তৈরী করা হয়েছিল, ইদানিং যারা কিস্তিটুপিও বিক্রি করে। আবার আপনার রাজনীতির ডিসকোর্সে টান পরলো, তাইনা? আপনার ধর্ম বিশ্বাস আর রাজনীতি এতো সহজে টান খায় বলেই, শরম ভুলে আপনি ড্রেনের পাশে শিশ্ন ঝুলিয়ে দেন; আর প্রকৃতির ডাক আধা-আধিতে পৌছালে বুঝতে পারেন- এত নির্ভার শান্তি পরস্ত্রীতেও লাভ করেননি। আপনি সিগারেটে টান দিতেই লুঙ্গিওয়ালা ময়লা দাঁতে হাসে এবং আর্কিমিডিসের মতো উল্লম্ফ আনন্দবার্তা ঘোষনা করে, 'ভাইজান, বাস আইছে।' আপনি ক্ষয়ে যাওয়া খাটো আঙ্গুলে বাসের হাতল ধরার আগেই আরো সুসংবাদ শুনতে পান, 'পিছে বাড়েন, সিট খালি।' বাসযুদ্ধে রাজ্য আর রাজকণ্যা লাভের আনন্দ নিয়ে আপনি আর লুঙ্গিপরা পাশাপাশি বসে থাকেন।

'ভাইজানের কোন অফিস?' লুঙ্গিওয়ালার পিতলা খাতির জমানোর চেষ্টায় আপনি বিরক্ত হলেও উত্তর দেন। কেন দেন উত্তর? আপনারা দু'জন একসাথে শ্যাওড়াপাড়া থেকে মতিঝিলে যাচ্ছেন বলে? না-কি কলেজে উঠে কার্ল মার্কস অধ্যয়ন করেছেন, সেজন্যে? মনে রাখবেন, মার্কস-এঙ্গেলস আপনার ফার্মগেটের ট্রাফিক পুলিশ না যে, আপনি না-ফস্কানো ট্রাফিক-জ্যামের আটকা গেঁড়োতে পড়বেন না। অবস্থাটা এমনই যে, কমরেড মণি সিংহ আর ভ্লাদিমির লেনিন বেতিয়েও ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাকে মানুষ বানাতে পারবেন না। কোথায় লুকাবে দেঢ় কোটি পাকস্থলিওয়ালা এই শহর? এতকিছু ভাববেন না। শুধু মনে রাখুন, এই যান-সমাবেশ আগারগাঁও থেকে কান্দুপট্টিতে বিস্তৃত। সুতরাং লুঙ্গিপরার সাথে কথা বলুন, সময় কেটে যাবে।

'সিএনজি'র একটা লাইসেন্স বাইর করছি। নগদ ক্যাশ-টাকা দিলে আইজ-ই হাতে পামু।' লুঙ্গিওয়ালার গল্পের দানা পরতে শুরু করেছে মাত্র। আপনিও চালিয়ে যান; জীবনের কোনো অভিজ্ঞতা ফেলনা নয়। এই যে লোকটা কথা বলতে বলতে কোমরে হাত দিল, কি যেন খোঁজার চেষ্টা করল; আর কিছু একটাতে নিশ্চিত হয়ে আইডিবি ভবনের দিকে তাকিয়ে রইল- কি বুঝলেন এই ঘটনায়? যে লোক নগদ টাকা দিয়ে স্কুটার চালানোর লাইসেন্স আনতে যাচ্ছে, তার কোমরে টাকা থাকতেই পারে। লুঙ্গিপরা লোকজন ডঃ ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তির খবর না শুনতে পারে, সৌদি যুবরাজ রূপালি ব্যাংক কিনলো কি কিনলো না- তাও না জানতে পারে; কিন্তু ঘুষের টাকা কোমরে বেঁধে মতিঝিলে যেতে পারবেনা, তাতো নয়!

আপনি বুঝে গেছেন, ডারউইনের লেজ-খসা বানরেরা- জনগণের মাথায় বসে কলা ছিলছে। কিন্তু এই লুঙ্গিপরাদের মতোই আপনিও বুঝেননি, রাজনীতিতে কে কার চামড়া ছিলে কতটুকু লবন ঘষছে; আর সে লবন আয়োডিনযুক্ত কি-না! আপনিতো রাজনীতির বাতচিতে হেরে গেলে ঘোষনা করেন, 'আমি কোন দল করি না।' তাহলে কি করেন আপনি? আপনি কি আব্দুল গাফফার চৌধুরী; রাজনীতির বিবেক? জানবেন যে, রাজনীতির বিবেকেরা টাইফয়েড আক্রান্ত, ডায়রিয়াগ্রস্ত এবং বাথরুমে পতনশীল। আপনার সাথে তাদের পার্থক্য এই, আপনার দারা-পুত্র-পরিবার এইসব রোগে ভুগলে দেশের গণতন্ত্রে বিদেশী সাহায্য জোটে এবং ওরা ক্বচিৎ আক্রান্ত হলে- মানুষ খুন হয়, দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয়। সেহেতু, সমাধান একটাই বিদেশী সাহায্য নিশ্চিত করুন এবং রাজনীতির বাথরুম অপিচ্ছিল রাখুন।

'ভাইজান কি টিফিন নিয়া অফিসে যান?' রাস্তার পাশে বস্ত্রবালিকাদের স্রোত এবং সাতদিনে মালয়েশিয়ার ভাষা শেখার বিজ্ঞাপন পাঠের চাইতে- লুঙ্গিপরা লোকটির আগ্রহ আপনার টিফিন-বক্সে গেল বলে অবাক হবেন না। দুনিয়ার অনেক মানুষই সকাল সোয়া-নয়টায় ভাত খায়, আর তাদের আগ্রহ ভাতকেন্দ্রিক জীবনযাপনে। আপনি এই কথার উত্তর না-দিন, অন্ততঃ টিফিন-বক্সটিকে লোকটির চোখের আড়াল করুন। খাবারে অন্যের চোখ গেলে পেট-খারাপ হয়, ভুলে যাবেন না। তার ওপর আপনি আমাশয়ের রোগী। শ্যাওড়াপাড়ার কোন মানুষটি আমহীন-প্রাতঃকৃত্য সারে, বলতে পারেন? জেনে আনন্দিত হবেন, দেশের মেজর জেনারেলরাও আপনার মতোই ফ্লাজিল ভক্ত।

বিজয় স্মরণীর মোড়ে মিছিল না-কি! না-কি পশ্চিম নাখালপাড়ার গার্মেণ্টস কর্মীরা দেলোয়ার হোসেন ঝণ্টুর ছবি দেখতে যাচ্ছে? এ শহরে যা-ই হোক, মিছিল জন্ম নেয়। এইসব মিছিল দেখে দেখে অভ্যস্ত বলেই- ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ীতে শেখ মুজিবের লাশ পরে থাকে; চট্টগ্রামের কোন এক টিলায় মেজর জিয়াকে পুতে রাখা হয়। আপনি জানেন, কিন্তু মানতে চান না, নিজের বউয়ের জন্য যে কারণে কেউ জামাই খোঁজেনা, সে কারণেই এদেশে কোন খুনের বিচার হয়না। আবার এটাও ভালোই বোঝেন, এসবের বিচার হলে রাজনীতি করবেন কি নিয়ে? তারচেয়ে বরং বঙ্গবন্ধুর লাশের ওজন জাতির জন্য বহনযোগ্য কি-না, আর শহীদ জিয়ার মাজারে কার কংকাল আছে- তা নিয়ে গবেষণা করুন, বিনোদন পাবেন। কার উঠানে কতো টিন লুকানো, কার ঘোড়া রিলিফের বিস্কুট খেয়ে মানুষ হয়েছে- এসব গল্প আপনি একদিন ভুলে যাবেন; কিন্তু জেলের ভেতরে খুন হওয়া চার নেতা- রম্বস হয়ে ঠিকই ঝুলে থাকবেন হাইকোর্টের দাড়িপাল্লায়।

'ভাইজান মিছিল আসে', লুঙ্গিওয়ালা আপনার চোখকে মিছিলে টেনে আনে বলেই- আপনি শংকিত হন। ইত্তেফাকের আট-কলামের হেডিংয়ে- মিছিলের মুখ ভালোই লাগে আপনার। কিন্তু সংবাদ শিরোনাম হওয়ার আতংক বড় করুণ, বড় দুঃসাহসের। সে সাহস নেই বলেই, আপনিও লুঙ্গিওয়ালার মতো পালাবার পথ হাতড়ান। পালাবেন কোথায় আপনি? সংসদ ভবনতো আপনার জন্য সংরক্ষিত নয়, চন্দ্রিমা উদ্যানো না। বরিশালের মাহবুবের মতো- প্লেনের চাকার খোলে লুকাবেন? সে পথও বন্ধ; ঢাকার উড়োজাহাজ কুর্মিটোলা পরিত্যাগ করেছে। সেহেতু, আজকের দিনের তাজা-খবর হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিন।

দেশের গণতন্ত্র আজো বুঝি বাথরুমে আছাড় খেয়েছে! লুঙ্গিপরা লোকটি আপনার আগেই এ দুঃসংবাদ আন্দাজ করে- জানালা দিয়ে লাফিয়ে নেমেছে রাস্তায়। কারা লুঙ্গিপরে মতিঝিলে যায়, জানেন না-কি? এসব লোকেরা জান হাতে নিয়ে পালিয়ে বাঁচে বলেই, বাসের সিটে হাজার তিনেক টাকা পড়ে থাকে। তুলে নিন না টাকাটা! ধরা পরে গেলে ট্রুথ-কমিশনে ফেরত দিয়ে দেবেন।

শুনুন, সময়মতো সীদ্ধান্ত না নিলে- আধলা ইট আপনার কপালে সুড়কি হবে। পালান। টাকাটা নিয়েছেন তো? আবার কি হলো? টিফিন বক্সটা খুঁজে পাচ্ছেন না! ওটা লুঙ্গির সাথে জানালা গলে পালিয়েছে। অবাক হবেন না, শ্যাওড়াপাড়ার লুঙ্গিওয়ালারা ভাতই চিনেছে শুধু।
৯৬টি মন্তব্য ৮৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×