আমার কাছে দুটি সংবাদ আছে। এর মধ্যে একটি সুসংবাদ এবং অপরটি দুঃসংবাদ। কোনটা আগে দিব ঠিক বুঝতে পারছি না। শুনেছি কথায় বলে প্রথমেই নাকি সুসংবাদটাই দেয়া উচিত, তাই সু সংবাদ এর খবর দিয়েই লেখা শুরু করছি।
সুসংবাদটি হলো, যারা অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করতে চান, তারা প্রথম আলো ব্লগে র সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে 'বদলে যাও, বদলে দাও' স্লোগানের পাশাপাশি 'কপি করো, নিজের নাম দাও' স্লোগান বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুইস ব্যাংকের আদলে সেই ব্লগে লেখা জমা নেয়া হয়। সুইস ব্যাংক গুলোতে যেমন টাকা কোথা থেকে এলো, তা সাদা না কালো ইত্যাদি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথ্য নেই তেমনি প্রথম আলোর এই বদলে যাও, বদলে দাও ব্লগে, কে কি লিখেছে বা কোথা থেকে কপি করেছে সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। যদি কেউ ভূলবশত তা চিহ্নিত করেন, তাহলে উল্টা তাকে সুশীলতা সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয়। যদিও সেই ব্লগের সচেতন এবং মেধাবী ব্লগারা এহেন স্লোগানের বিরোধীতা করেছেন। তারপরও সেই ব্লগের মডারেটর একটি সুশীল সমাজ তথা উট পাখির জীবনে বিশ্বাসী হতে অনুরোধ করেছেন।
এবার আসি দুঃসংবাদ প্রসংগে। যারা কষ্ট করে রাত দিন খেটে একটি ভালো লেখা বা পোষ্ট তৈরী করেন, তাদের লেখা যে কোন সময়ে চুরি হয়ে প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত হয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি উপযুক্ত প্রমানসহ তাদের মডারেশন টীম বা মডারেটরের কাছে পাঠান, তারা আপনাকে একটি উট পাখি বড় জোড় একটি উট পাখির ডিম দিয়ে সান্তনা দিবে। এই অবস্থায় যারা টুকটাক কিছু লেখার চেষ্টা করেন, তারা তাদের ‘হাবিজাবি’ লেখা নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।
প্রিয় পাঠক, এটা মোটেই কোন স্যাটায়্যার বা রম্য লেখা নয়। এটা একটি বাস্তব ঘটনা এবং যা সম্প্রতি ঘটেছে। কিছুদিন পূর্বে ব্লগার অপূর্ন বাংলাদেশের নদী নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন। আমরা সবাই দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। গতকাল তিনি সামুতে একটি পোষ্টের মাধ্যমে জানালেন, তার এই লেখাটি প্রথম আলো ব্লগ বদলে যাও বদলে দাও এ কে যেন অন্য নামে প্রকাশ করেছে। তার কাছ থেকে জেনে সেই ব্লগে গিয়ে দেখি জনৈক ফারজানা লিমা নামক একজন ব্লগার টপ টু বটম ফটোকপির স্টাইলে লেখাটা কপি করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি ব্লগার মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, আর্ফিয়াস, শ।মসীর এর লেখাগুলোও নিজের নামে চালিয়েছেন। সেই লেখাগুলোতে সাধারন ব্লগার সহ মডারেটরের শুভেচ্ছা পর্যন্ত তিনি নিচ্ছেন। কি চমৎকার ভাবে যে তিনি মিথ্যে গুলো বলেছেন, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। একজন ব্লগার এতটা মেধাশুন্য হবে এটা ভাবতেই লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে আসছে।
স্বাভাবিক ভাবেই আমি এই লেখা চুরির প্রতিবাদ জানালাম। প্রতিবাদের ভাষা যেমন হওয়া উচিত আমি তেমন ভাবেই প্রতিবাদ করলাম। কিছুক্ষন পর সেই লেখক এসে কি এক অদ্ভূত জগাখীচুড়ী ভাষায় কি যেন বললেন। আমি আমার দৃষ্টি শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যা পড়তে পারলাম, তাতে বুঝা গেল, তিনিই আমাকে উল্টা কথা শুনালেন। এরপর মডারেটর আসলেন। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে যা বললেন তাতে বেশ বড় অংশ জুড়েই ছিল আমিই নাকি ব্যক্তি আক্রমন করেছি এবং এটা নাকি শিক্ষিত লোকের ভাষা নয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে আরো অনেকে এটার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু মডারেটর সেগুলোর কোন জবাব দেননি। সেগুলোকে পাস কাটিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই ব্লগের সাধারন ব্লগাররা প্রতিবাদী হয়ে উঠাতে জনাবা ফারজানা লিমা দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এক পর্যায়ে পোষ্ট ডিলেট করতে চান । কিছুক্ষন পর মডারেটর এসে তাকে ধন্যবাদ জানালেন কারন তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এও আশা করেন লিমাকে আর কেউ কোন বিরুপ মন্তব্য করবে না। সবচেয়ে আর্শ্চযের বিষয়, এই ধরনের একটি নেক্কার কাজ করার জন্য উক্ত ব্লগারকে কোন রুপ সর্তক বার্তা তিনি তো দিলেনই না বরং উৎসাহ দেয়ার মত করে বলেছেন, “এই কাজটি পৃথিবীর অনেক খ্যাতিমান মানুষরাও করেছেন। আপনি প্রথম নন। আমাদের দেশেও অনেকে অন্যের থিসিস নিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি পর্যন্ত অর্জন করেছেন।” লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কি হাস্যকর উদহারন এবং কি অদ্ভুত যুক্তি! ভাগ্য ভালো তিনি সামুর মডারেটর নন। তিনি সামুর মডারেটর হলে নির্ঘাত এতক্ষনে ‘লুল মডারেটর’ হিসেবে খেতাব পেতেন।
লিংকঃ Click This Link
সবচেয়ে হতাশা এবং লজ্জাজনক ব্যাপার হচ্ছে হাতে নাতে এত প্রমান সহ ধরা খাবার পরও সেই লেখাগুলো এখনো সেই ব্লগারের নিজ নামেই আছে এবং মূল লেখার কোন লিংক বা মূল স্বত্তাধিকারীর কোন নাম সেখানে উল্লেখ্য করা হয় নি। এটা কেমন ধরনের মডারেশন আমার মাথায় তা আসছে না। আমি জানি না অন্যের লেখা প্রকাশ করার ব্যাপারে তাদের নীতিমালাই বা কি?
ধরে নিচ্ছি, কেউ লিখতে পারেন না। ভালো কথা। আমরা অনেকেই লিখতে পারি না। আমাদের সামুতে আমরা অনেকেই যা হয়ত লিখি তা সাহিত্যের হয়ত কোন মানদন্ডেই পড়ে না। কিংবা যে সকল তথ্য আমরা সবার সাথে শেয়ার করছি, সেগুলোও হয়ত এমন কোন আহামরি তথ্য নয়। ইন্টারনেটে খুঁজলে হাজারো তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সেই হাজারো তথ্য থেকে কিছু কাজের তথ্য বাছাই করে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করাটা একে বারে সহজ কোন কাজ নয়। যথেষ্ট মেধা এবং পরিশ্রমের ব্যপার। তাই অন্যের লেখা কখনও আপনি বা আমি নিজের নামে চালাতে পারি না। অন্যের লেখা দেখে অনুপ্রানিত যে কেউ হতেই পারে। যেমন হুমায়ূন আহমেদের লেখা। অনেকে আছেন হুমায়ূন আহমেদের মতই লেখার চেষ্টা করেন। এতে কি কোন খারাপ কিছু হচ্ছে? হচ্ছে না। খারাপ হবে তখনই যখন আপনি হুমায়ূন আহমেদের কোন লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন । কিংবা আপনি যদি উল্লেখ্য করেন, আপনি হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে লিখেছেন, আপনার লেখা কি কেউ পড়বে না? অবশ্যই পড়বে বরং আগ্রহ নিয়েই পড়বে।
ব্লগ হচ্ছে স্বাধীন মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। এটা হচ্ছে ইচ্ছামত লেখার কোন এক হিজিবিজি খাতা। কিন্তু তাই বলে অন্যের লেখা চুরি বা মেধা চুরি কোন ভাবেই সুস্থ ব্লগিং এর মধ্যে পড়ে না। এটি কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা লেখা চুরি বা অন্যায় ভাবে প্রকাশ করার ব্যাপারে প্রথম আলো ব্লগের নীতিমালা জানতে চাই এবং এই ব্যাপারে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করি। সেই সাথে আমরা এও আশা করি, প্রথম আলো ব্লগে সামুতে প্রথম প্রকাশিত যে সকল লেখা অন্য কেউ অন্যায় ভাবে নিজের নামে চালাচ্ছেন, তা যেন অবিলম্বে মুছে ফেলা হয় অথবা, সেই লেখা গুলো যদি প্রকাশ করতেই হয়, লেখাগুলোর মূল স্বত্তাধিকারীর কাছ থেকে অনুমূতি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হোক। যেখানে মূল স্বত্তাধিকারীর নাম এবং মূল লেখার লিংক থাকবে। আর যেই ব্লগার এহেন ন্যাক্কার জনক কাজ করেছেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক।
অন্য ব্লগের এই অবস্থা দেখে অনেক অভিযোগ থাকা স্বত্তেও আমাদের সামুর মডারেটরদেরকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। এই সব ক্ষেত্রে তারা অন্তত অভিযোগ পেলে এবং তার প্রমান পেলে ব্যবস্থা নিতে দেরি করেন না।
তবে কিছুক্ষন আগে প্রথম আলো ব্লগের মডারেটর একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সামুতে সমস্যার কারনে কোন লিংকই দিতে পারছি না। তাই পেষ্ট করে লিংকটা দিলাম। তিনি বিব্রত প্রকাশ করেছেন। তিনি তার মত করে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার গ্রহন যোগ্যতা বিচারের ভার আপনাদের সবার।
লিংকঃ http://www.bodlejaobodledao.com/archives/29084
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




