somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

কিছু সত্য এবং সহজ কথা।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ অনেক বছর, একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে হয়ত অনেক কম। কিন্তু এই কমের মধ্যেও যা আমাদের প্রাপ্য ছিল তার সব কিছু কি আমরা পেয়েছি? পাই নি। এই কয়টি বছরে আমরা কি পারতাম না একটি স্থিতিশীল দেশ গড়তে? সব কিছু না হোক, কিছু বিষয়েও অন্তত এগিয়ে থাকতে? বরং আমরা এই কয়টি বছর দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার জন্য নিলর্জ্জ হানাহানি, দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা, নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দেয়া। কষ্টের বিষয় আমাদের নতুজান পররাষ্টনীতি, বিদেশীদের প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্য, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের অভাব এবং সর্বপরি আমাদের সচেতনতাই আমাদের দেশের এই অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য দায়ী।

আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই হচ্ছে মূদ্রার এপিঠ আর অপিঠ। রাজনীতির নামে চলছে দূর্নীতির চর্চা। তাদের এই দূর্নীতির কারনে, রাজনীতি বাংলাদেশে একটি বিনা পুঁজির লাভজনক পেশা। নতুন প্রজন্ম যখন রাজনীতিতে আসতে চায় তখন তাকে শেখানো হয় টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, হত্যাসহ আরো নানা রকম বিষয়। এরা নতুন প্রজন্মকে শেখায় না কিভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে, কিভাবে ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। এরা শিখায় কিভাবে মানুষকে ভয় দেখাতে হয়, কিভাবে অস্ত্রের মুখে প্রতিবাদী কাউকে থামিয়ে দিতে হয়। ফলে এই রাজনীতি বা রাজনীতিবিদরা সাধারন মানুষের কাছে একটি আতংকের নাম এবং ক্ষেত্র বিশেষে একটি গালিও।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, দীর্ঘদিন দূর্নীতির সাথে বসবাস করে আমাদের মনের নৈতিক শক্তিও অনেক অধপতন হয়েছে। আমরা সব কিছুতেই শুধু অন্যদের উপর দোষ চাপাই, দোষ স্বীকার করার ক্ষমতা আমাদের প্রায় নষ্টই হয়ে গিয়েছে। তাই তো একজন মন্ত্রী ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরার বিরোধীদলের ষড়যন্ত্রের কথা বলে নিলর্জ্জের মত পদ আঁকড়ে বসে থাকেন, আরেকজন দূর্নীতিবাজ দেশপ্রেমিক খেতাবে ভূষিত হয় এবং দেশবরন্য একজন নেত্রী তার ছেলের দূর্নীতির কথা অস্বীকার করে উল্টা তাকে সৎ এবং মহান বলে অখ্যায়িত করেন। ভাবতে লজ্জা লাগে, আমাদের সাধারন মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এইসব আবার সমর্থনও করেন। এটা কি আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক নয়? অবশ্য জামাত শিবিরের মত একটি দলের যদি অনুসারী থাকতে পারে তাহলে এইসব কাজের সমর্থক থাকা বিচিত্র কিছু নয়।

ইদানিং পত্রপত্রিকায়, নানারকম টেলিভিশন চ্যানেলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দৈন্যদশা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিজিএম, রাজনৈতিক দল এবং বিশেষ করে বিদেশীরা অনেক কথাই বলছেন। বাংলাদেশে শ্রমিক হওয়া এমনিতেই পাপ, তার উপর যদি হয় আরো গার্মেন্টসকর্মী তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশে একজন মানুষ যখন নিজেকে মানুষ হিসেবে আর পরিচয় দিতে চান না, তখন সে নিজেকে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকে রুপান্তরিত করে। গ্রার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে বিদেশীদের উৎকন্ঠা চোখে পড়ার মত। যখনই আমাদের দেশে কোন দূর্ঘটনা ঘটে তখনই দেখি তারা কত আহা উহু করছে। আমরা আমাদের দেশের শ্রমিদের মর্যাদা দিতে পারি না, ন্যায্য মুজুরী দিতে পারি না, নিরাপত্তা দিতে পারি না ইত্যাদি আরো অনেক অভিযোগে অভিযুক্ত হই। আমরা তাদের আবেগীয় আহা উহু এবং অভিযোগ শুনে নিজেরাই লজ্জাবোধ করি আর দেশের সরকার, মালিক এবং সিস্টেমের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করি। তবে মজার বিষয় এই আহা উহু করা বিদেশীরাই বাংলাদেশ থেকে পন্য কিনার সময় একজন হিসেবী ক্রেতায় অবতীর্ন হন। আমাদের দেশের মেয়েরা যেভাবে বাজারে কিছু কিনতে যায়- অনেকটা সেই রকম। একই মানের পন্য তারা যে দামে চায়না, ভারত কিংবা ভিয়েতনাম থেকে কিনেন, সেই একই পন্য বাংলাদেশ থেকে কিনলে তার অর্ধেকও ঠিকভাবে দিতে চান না। কারন তারাও জানেন, আমাদের এইখানে শ্রমের বাজার সস্তা, আমাদের দেশে শ্রম আইনের তেমন কঠোর প্রয়োগ নেই

তাই আমি মনে করি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে বিদেশীদের এই সকল আবেগ এবং উৎকন্ঠা একটি সুন্দর অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়। যে দামে তারা চায়না, ভারত কিংবা ভিয়েতনাম থেকে পন্য কিনেন, তার অর্ধেকও তারা বাংলাদেশকে দিতে চান না। কেন রে বাবা? বাংলাদেশ কি মন্দিরের ঘন্টা নাকি যে যার ইচ্ছে মত বাজিয়ে যাবে? ভাবতে অবাক লাগে এরাই আবার মানবতার কথা বলে এবং মানবিকতার জন্য নাকি যুদ্ধ করে।

শ্রমিকদের এই দূর্গতি শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিদেশেও হচ্ছে। অনেক বেশি কঠিন পরিশ্রম করা স্বত্তেও আমাদের দেশের শ্রমিকরা বিদেশে তার সঠিক শ্রমের মূল্যায়ন পান না। একজন ভারতীয় শ্রমিকের বেতন প্রায় আমাদের দেশীয় একজন শ্রমিকের দ্বিগুন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তখন সেই বিদেশীদের এই সব মানবিকতার প্রশ্ন কোথায় থাকে? তারা দেখেন না আমাদের শ্রমিদের বড় একটি অংশ কিভাবে অবহেলার স্বীকার হচ্ছেন? উত্তর হচ্ছে, আরে ভাই আমরা নিজেরাই নিজেদের দেখি না, অন্যদের কি ঠেকা পড়েছে।

তাই নিরাপত্তা কিংবা ন্যায্য মুজুরী কিংবা সাধারন মানুষের জীবনের তথাকথিত উন্নতি নিয়ে আমাদের নেতাদের বড় বড় আশ্বাস যখন শুনি তখন আমার বড্ড হাসি পায়। তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, মানুষের অধিকার আদায় হবে, এই কথা আর যাই হোক বিশ্বাস অনেক কষ্টের। আমি একজন দূর্বল মানুষ। আমার হৃদয় আরো বেশি দূর্বল। তাই ইচ্ছা করেই কোন চাপ নিতে চাই না।

তবে আমি বিশ্বাস করি, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, নতুন প্রজন্মই হয়ত এই অবস্থা পরিবর্তন ঘটাবে। তাদের কোন ভালো বা যোগ্য নেতার উদহারন লাগবে না। তারা নিজেরাই শিখবে আদর্শ এবং দেশপ্রেম। যেমনটি শিখেছি আপনি এবং আমি। আমি এটাও বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের সব রাজনীতিবিদরা একই রকম নন। এখনও হয়ত কিছু ভালো মানুষ আছে, যাদের আমরা এখনও চিনতে পারিনি। তারাও হয়ত অপেক্ষা করছেন নতুন একজন নেতার জন্য। যার নেতৃত্বে আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে পারব। যতদিন পর্যন্ত আমরা এই একই সিস্টেমে চলব, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা সহঅবস্থানে আসবে না, ততদিন পর্যন্ত আপনি আমি যতই মায়া কান্না কাঁদি না কেন, এই হতভাগা শ্রমিকগুলোর তথা আমাদের দেশের কোন উন্নতিই আমরা আশা করতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×