somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

একুশে পদক এবং একজন মেহেদী হাসান খান

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একুশে পদক - বাংলাদেশের একটি জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভাষা আন্দোলন এর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে এই পদকের প্রচলন করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান এই পুরুষ্কার চালু করেন।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা, সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজসেবা এবং অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখার জন্য এই পুরুষ্কার দেয়া হয়। প্রতি বছর অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এই পদকে ভুষিত হচ্ছেন।

এবার চলুন একটু ভিন্ন দিকে দৃষ্টিপাত করি।


ময়মনসিংহ মেডিকেলের মেহেদী হাসান খান নামের জনৈক ছাত্র ২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ উইন্ডোজে ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য একটি কীবোর্ড সফটওয়্যার আবিষ্কার করেন। বাংলা চর্চার সুবিধার্থে তিনি এই সফটওয়্যারটি বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্যে প্রকাশ করেন। বিজয় দিয়ে বাংলা লেখা একটি সময় বেশ কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু উচ্চারণভিত্তিক (ফোনেটিক) বাংলা টাইপিং ব্যবস্থা থাকার কারনে অভ্র খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। এমনকি নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয় - এর পরিবর্তে বিনামুল্যের অভ্র ব্যবহার করেন।

এতে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বাণিজ্যিক ক্লোজ সোর্স সফটওয়্যার ‘বিজয়’ এর স্বত্বাধিকারী এবং ‘আনন্দ কম্পিউটার্স' এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। কারন এতে তাঁর পাঁচ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। তাছাড়া তৎকালীন সময়ে বিজয় কী বোর্ড নামে আলাদা কী বোর্ড ছিলো যার ব্যবসায়িক চাহিদাও ছিলো প্রচুর। কিন্তু অভ্র সফটওয়্যার প্রকাশিত হবার পর সামগ্রিক এই ব্যবসায় ধ্বস নামে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিজয়ের মালিকপক্ষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং অভ্র এর বিরুদ্ধে হ্যাকিং সহ কোড চুরি ইত্যাদির অভিযোগ আনে।

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৬ই জুন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অভ্র নির্দোষ প্রমানিত হয় এবং ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপট থেকে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। অভ্র ইউনিবিজয় লে আউট তাদের কী বোর্ড থেকে সরিয়ে নেয়।

বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষাকে ইন্টারনেটে সহজলভ্য করে তোলার জন্য, মানুষকে বাংলায় লেখার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য অভ্র একটি যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করে। ফোনেটিক বাংলা টাইপিং এর কারনে অভ্র প্রবাদ সমতুল্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মেহেদী হাসানের বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার কারনে এমন চমৎকার একটি সফটওয়্যার সম্পুর্ন বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্য তিনি প্রকাশ করেন। চাইলেই তিনি এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলাকে ভালোবেসে তিনি যে কাজ করেছেন তা জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রয়োজন। ভুলে গেলে চলবে না - আজকে অভ্র না থাকলে আমরা এত সহজে বাংলায় লিখতে পারতাম না।

তাই একুশে পদক যেহেতু ভাষা শহীদের স্মরনে দেয়ার রীতি, সেহেতু অভ্র বা মেহেদী হাসান অবশ্যই একুশে পদক পাওয়ার শ্রেষ্ঠতম দাবিদার। তার চেয়ে আরো অনেক কম গুরুত্বপূর্ন কাজ করে এমন কি বিতর্কিত ব্যক্তিগণ একুশে পদকে মনোনিত হয়েছেন। কিন্তু অদ্ভুত কোন এক কারনে তিনি এখন পর্যন্ত একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন পান নি। একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে এই প্রশ্নটি আমার মনে এসেছে, এর কারন জানতে চাই। কোন মহলের চাপে অভ্রকে জাতীয়ভাবে মুল্যায়ন করা হচ্ছে না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

সবশেষে, আমি দাবি জানাই - অভ্র এর প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান খানকে একুশে পদকে ভুষিত করে প্রকৃত মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের মুল্যায়ন করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০২
৪২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×