মুসলমান সম্প্রদায় তাদের ধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি বিধানের জন্য পালনের জন্য কোরানের পাশাপাশি হাদীসও পড়েন। পৃথিবীর শেষ দিনের লক্ষন হিসাবে হাদীস বইয়ে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে, বিভিন্ন ইংগিত প্রদান করা হয়েছে। সেই সকল ইংগিত সমুহের মধ্যে একটি হচ্ছে পৃথিবীর শেষ সময়ে দাসীরা মনিব প্রসব করবেন।
এই সকল ইংগিতকে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা জানেন মহান সৃষ্টিকর্তা। আমরা হয়ত শুধু ধারনা করতে পারি মাত্র। যারা মুসলিমদের কোরান নিয়ে গবেষনা করেছেন তাঁরা দাবি করেছেন বা তাদের মতে কোরানে অনেক কিছুই রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর সাথে একই মত প্রকাশ করি। পাশাপাশি আমার মনে হয়, মেটাফোর শুধুমাত্র কোরানে নয় বরং হাদীসেও আছে। যার ফলে এই সকল আয়াত বা ঘটনা সমূহ সরাসরি লাইন টু লাইন ব্যাখ্যা করলে তা বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নাও হতে পারে বা ভুল হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দাসীরা মনিব প্রসব করবেন - এই লাইনটি ব্যাখ্যা হিসাবে বলা যায়, পৃথিবীতে এমন একটা সময় আসবে যখন প্রবীনরা নবীনদের জন্য কোন জ্ঞান বা অনুসরন করার মত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে না বা অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শেখার মত কোন অভিজ্ঞতা থাকবে না বা শিক্ষকদের কাছ থেকে শেখার কিছু থাকবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের আশেপাশে এমন অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি যা অনেকটা দাসীর মুনিব প্রসব করার মত। যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন না, তাঁরা হয়ত ধর্ম টানায় বিরক্ত হতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা আধুনিক শিক্ষিত সমাজের চিন্তা চেতনার প্রসঙ্গ টানতে পারি। আধুনিক সমাজে যে নীতি নৈতিকতার মানদন্ড আছে সেই সকল মানদন্ড অনুসারেও 'দাসীর মুনিব প্রসব করা' গ্রহনযোগ্য নয়। যারা আমাদেরকে পথ দেখাবেন, তাঁরাই এখন পথভ্রষ্টের অভিযোগে দুষ্ট। সবচেয়ে আফসোস হচ্ছে, এই সকল প্রসবকৃত "মুনিবরা" নিজেদের ভুল স্বীকার করার সৎ সাহস বা যোগ্যতা রাখেন না। উপরুন্ত তাঁরা নিজেদের মেধা বা ক্ষমতাকে ব্যবহার করেন তাদের ভুলকে সঠিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কেউ শুধরে দিতে চাইলেও তাঁরা সংশোধিত হতে চান না এবং যারা সংশোধন করে দিতে চাইছে তাদেরকে অপবাদ দেন সমাজের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে। চারিদিকে এই ধরনের অন্যায় স্বেচ্ছাচারিতার ছড়াছড়ি।
আমাদের মধ্যে একটা শ্রেণী শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবতে পছন্দ করে। তারা মনে করেন, সবাইকে একই চিন্তা অনুসরন করতে হবে অথবা তিনি বা তারা যা ভাবছেন - সেটাই সঠিক। একটা জগে যখন অর্ধেক পানি থাকে, তখন সেই চিত্রটিকে দুইভাবে মানুষ ব্যাখ্যা করে। কেউ বলেন - জগটি অর্ধেক পানিতে পূর্ন আর কেউ বলেন, জগটির অর্ধেক খালি। এই যে দুই ধরনের মত প্রকাশ তার কোনটাই কিন্তু ভুল নয়, দেখার ভিন্নতা ছাড়া দুটোই সত্য। একটা ইতিবাচক আরেকটা নেতিবাচক। সম্প্রতি একটা ভিডিও দেখলাম, সেখানে একজন বলল তিনটি তিন দিয়ে ত্রিশ বানাতে। একজন সমাধান দিলো - {(৩√)×৩)+৩ = (৯×৩)+৩ = ২৭ + ৩ = ৩০।
আরেকজন এত কাহিনী না করে, সমাধান দিলো ৩৩ - ৩ = ৩০।
ধরলাম আপনার কাছে প্রথমটাই সহজ বা বুদ্ধিদীপ্ত। এখন দ্বিতীয় সমাধান যিনি দিয়েছেন তাঁকে যদি আপনি বলেন, ডোডো পাখির মগজ কিংবা লিলিপুটিয়ান মগজ - তাহলে এটা কি গ্রহনযোগ্য হবে?
পৃথিবীর কোন আদালত এই ধরনের একটি বক্তব্যকে গ্রহনযোগ্য বলবে বা বলবে এটাই বাকস্বাধীনতা? যদি বলে, আমি সেই আদালতের সন্ধান চাই। সেই আদালতকে যুক্তি দিয়ে বুঝাতে হবে কেন এটা বাকস্বাধীনতা!
হ্যাঁ, এই ধরনের কথা বলা যায়! কাকে বলা যায় কোথায় বলা যায়, সেটা বুঝতে পারাটাও এক ধরনের নূন্যতম সেন্সের বিষয় যাকে সমাজ কমনসেন্স হিসাবে চিহ্নিত করে। যেমন অনেক সময় আমরা এমন অনেক বিতর্কিত মতামত দেখি যা আমাদের সার্বজনীন স্বাভাবিক আদর্শের সাথে যায় না। ফলে তখন সাধারন মানুষ সেই সকল ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখায়। সেই সকল বিকৃত বা অন্ধ মানসিকতার লোকদের অনেক সময় মানুষ নানা ধরনের কটু কথা বলে যা আদতে এক ধরনের ব্যক্তি আক্রমনই কিন্তু সব সময় সুশিলতা চলে না বলেই আমরাও কটু সমালোচনা করি। এটা জীবনেরই অংশ!
কিন্তু আপনার মতের সাথে না মিললে সবাই 'ছাগল', 'পিগমি', 'ডোডো' ইত্যাদি ধারনা পোষন করার মানে হচ্ছে আপনি নিজের অজান্তেই উক্ত প্রাণীতে পরিনত হয়েছেন। যার কারনে মানবিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে। আপনি অবশ্যই দেখতে পান, কিন্তু সেটা মানুষের দৃষ্টিতে নয়! দুঃখজনকভাবে উক্ত প্রানীদের দৃষ্টিতে।
এখন আসুন দেখি, কিভাবে দাসী মুনিব প্রসব করছে।
এই ধরনের অন্যায় আচরন যারা করছেন, তারা কিন্তু অশিক্ষিত মানুষ নয়। তাদের পরিবার আছে, তাঁরা নিজেদেরকে শিক্ষিত দাবী করেন, পৃথিবীর সেরা স্থানে বাস করেন, সেরা সুবিধা পান! তারা শিক্ষক হিসাবে আর্বিভুত হয়েছেন অনেকের সামনে, কিন্তু হায়! কি শিক্ষা তাঁরা দিলেন? হাজার শাস্তির পরেও ব্লগের কমেন্টে কমেন্টে সেই সকল ভুল ও অন্যায় নিয়ে এখনও চলে নির্লজ্জ গর্ব এবং অহংকার! আমি দুর্গন্ধে টিকতে পারি না। আমার লজ্জা লাগে। আমি লজ্জিত অনুভব করি।
কিছু অসুস্থ মানুষ দেখেছি যারা এই ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরো বড় অন্যায় করেছেন। জঘন্যতম উপায়ে আমাদের সকলের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আমরা তা সমর্থন করি না। আমরা আইন শৃংখলা বাহিনীর সাহায্য পর্যন্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু তাতে কি কোন লাভ হয়েছে? হাজার অনুরোধেও নিজেকে সংশোধনের কোন প্রচেষ্টা নেই বরং চারিদিকে কল্পিত আক্রমনের গল্প!
এইভাবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারা মরে যায়!
এবার আসুক স্বর্ণলতার গল্প বলি! আমাদের এই সব মুনিবদের শরীর বেয়ে এক ধরনের স্বর্ণলতারা গজিয়ে উঠছে। যুগে যুগে স্বর্ণলতারা সব সময় মুনিবদের শরীর বেয়েই উঠে। একজন মানুষ যখন সকল বিবেকবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে আরেকজনকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, তখন তারা নিজেদের অজান্তে এক ধরনের স্বর্ণলতায় পরিনত হয়। তারা চিন্তা চেতনা, নীতি নৈতিকতার উর্দ্ধে উঠে চাটুকারিতার শিকড় গেড়ে মনিবের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই ভাবে এই সকল মুনিবদের অন্যায় ও দুর্গন্ধ ঢেকে দেয়া যায় না। একটা জিনিস আমাদের স্বর্ণলতারা বুঝতে চান না - যত মুনিবদের মাথা পর্যন্ত বেয়ে উঠে যাক না কেন, - স্বর্ণলতারা আজীবন পরগাছাই থাকে। এরা পরজীবি!
মুনিবদেরকে মানুষ মাঝে মাঝে মনে রাখলেও - পরজীবিদের কোন ভবিষ্যত নেই। তাদের কেউ মনে রাখে না।
আমি চাই আমাদের স্বর্ণলতারা ভালো কোন গাছ হতে না পারুক - অন্তত ক্যাকটাস হোক!
পরজীবি স্বর্ণলতা হবার চাইলে কন্টক ময় ক্যাকটাস হওয়াটাও সম্মানের।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২২ রাত ১:৩৫