একবার ভারতের একটি ফাঁকা মহাসড়কে আমার গাড়ির ড্রাইভারকে দেখলাম ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়তে। জিজ্ঞেস করলাম, কি রে ভাই! তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ড্রাইভার বিরক্ত হয়ে বলল, কেন বাবু! সিগন্যালে লাল বাতি দেখতে পাচ্ছেন না?
আমি মনে মনে বিষ্মিত হয়ে ভাবলাম, এমন দৃশ্য তো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায় না। ফাঁকা রাস্তায় লাল সিগন্যাল দেখলে আমাদের ড্রাইভাররা বলবে, সিগন্যাল নষ্ট।
ভারত বা পুরো পৃথিবীর মানুষদের সাথে আমাদের দেশের মানুষদের প্রধান পার্থক্য হলো আইন মানার ইচ্ছে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা।
আমি ভারতের উদহারন টেনে বলি, সেই দেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কারন এখানে পুলিশে দুর্নীতি থাকলেও পুলিশ গণহারে অনৈতিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারে না। একটি জবাবদিহীতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে, পুলিশের প্রতি সে দেশের মানুষের একটি সম্মানসূচক ভয় আছে। যা আমাদের দেশে নেই। বাংলাদেশের শতকরা ৯৯% মানুষ মনে করেন - পুলিশ মানেই দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর।
কয়েক বছরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলেই এই ব্যাপারে ধারনা পাওয়া যায়। কিভাবে অপরাধীরা চোখের সামনে দিয়ে বিদেশে চলে যায়, কিভাবে একজন সাধারন ব্যক্তি ক্ষমতাশীনদের অন্যায় প্রতিপত্তির কারনে নির্যাতিত হয়। গত কয়েকদিন আগেও রামপুরাতে পুলিশের এক এসআই গাঁজা দিয়ে জনৈক ব্যবসায়ীকে ফাঁসাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারে পুলিশ অবিশ্বাস্য দক্ষতা অর্জন করেছে।
আমরা অনেকে প্রশ্ন করি যে, সেনানিবাসের ভেতর কেন মানুষ আইন মেনে চলে?
কারন মানুষ জানে এখানে আইনের শাসন আছে, যারা আইন প্রয়োগ করে তারা কঠোরভাবে আইন মেনে চলে। তাই সেনানিবাসে সব কিছু এত সুন্দর। যদি মানুষ কখনও বুঝত সেনাবাহিনী দুর্নীতিগ্রস্থ, এখানে আইনের শাসন নেই। তখন কেউ সেনানিবাসের ভেতর আইন মেনে চলত না। সেখানেও বিশৃংখলার রাজত্ব হতো।
বাস্তবতা হচ্ছে, একটা দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর যদি গণ মানুষের এতটা অবিশ্বাস, সন্দেহ, ঘৃণা বা ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেই দেশের জনগন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে না, এটাই স্বাভাবিক। মানুষ ভাবে, কাদা জলে গোসল করে সাবান মেখে কি লাভ?
ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, পুলিশের সম্মান, গৌরব পুলিশ ফিরে পাক। কয়জন বাংলাদেশী সুপার কপ বা সেলিব্রেটি পুলিশ কর্মকর্তা দেখেছি তারা চেষ্টা করছেন, পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দিতে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে - পুলিশের সামগ্রিক দুর্নীতি আর অপকর্মের তুলনায় তাদের এই প্রচেষ্টা খুবই নগন্য।
পুলিশের ব্র্যান্ড ঠিক না হলে, তাদের ইমেইজ ইতিবাচক না হলে কোন লাভ নাই। আমরা গার্বেজ, গার্বেজই থাকবো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




