ব্লগার সোনাগাজীকে ব্যান মুক্ত করার জন্য অনেকেই মডারেটর হিসাবে আমাকে অনুরোধ জানিয়েছেন আবার অনেকেই তাঁকে চিরস্থায়ী ব্যান করার স্বপক্ষে অনুরোধ বা কিছুটা চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি এই বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে ব্লগার মহাজাগতিক চিন্তা একটি পোস্ট করেন।
আমরা প্রথমে পোস্টটি সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পোস্টের শিরোনাম এবং বিষয়বস্তু পড়ার পর এই বিষয়ে পুনরায় কিছুটা আলোচনা করার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
প্রথমত, ব্লগার সোনাগাজী মুক্তিযোদ্ধা কি মুক্তিযোদ্ধা নন, সেটার প্রমাণ আমাদের কাছে নেই এবং আমরা এই বিষয়ে কোন প্রমাণ চাওয়ারও প্রয়োজনীয় অনুভব করছি না কারণ তিনি কখনও নিজে উদ্যোগী হয়ে নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি আমাদের কাছে প্রকাশ করেন নি বা এই পরিচয়ের ভিত্তিতে তিনি কোন প্রভাব বা সুবিধাও আদায় করতে চান নি।
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি আমাদের সবার জন্য স্পর্শকাতর, সম্মান ও ভালোবাসার একটি বিষয় তাই, ব্লগে কোন এনোনিমাস আইডির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করার আগে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রয়োজন। আমরা কারো ব্যক্তিগত জীবনের কোন অর্জন যা কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করেন না বা জানান না - তা জাস্টিফাই করি না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, কারো অযাচিত ভালোবাসা বা স্ব-উদ্যোগী হয়ে কাউকে কোন উপাধি প্রয়োগ করার কারণে যদি উক্ত ব্যক্তি কোন ধরনের হেনস্থা বা অপমান বা সমালোচনার মুখোমুখি হন, সেটার দায়ভার উক্ত উপাধি প্রয়োগকারী ব্লগারকেই ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই সংক্রান্ত কোন আপত্তিকর মন্তব্য পেলে তা নীতিমালার আওতায় আনব এবং এই ব্যাপারটি ব্যক্তি আক্রমন হিসাবে চিহ্নিত করব।
দ্বিতীয়ত, যে কোন ব্লগারকে নীতিমালায় আনার কাজটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। কিন্তু অনেক সময় ব্লগের সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ব্লগ টিম নীতিমালার প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়। ব্লগার সোনাগাজীকেও আমরা সুনির্দিষ্ট কারণে নীতিমালার আওতায় এনেছি।
ইতিপূর্বে এই ব্যাপারে আমরা বহুবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের মাধ্যমে ব্লগার সোনাগাজীকে কেন নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে সেই ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত সকল প্রকার পাল্টাপাল্টি পোস্ট বন্ধ করার লক্ষ্যে আমরা প্রথম পাতায় এক ধরনের সেন্সরশিপ আরোপ বা মিডিয়া ব্ল্যাক আউটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে এই সংক্রান্ত কোন পোস্ট প্রদান না করতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছে এবং পরবর্তীতে কিছু পোস্ট আসলেও তা আমরা সরিয়ে দিয়েছি।
ব্লগার সোনাগাজী সংক্রান্ত ইস্যুতে আমরা অনেক ব্লগারকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করতে লক্ষ্য করেছি এবং এই সকল বিষয়ে কোন পক্ষকেই আমরা অনুতপ্ত বা বিব্রতবোধ করতে লক্ষ্য করিনি। এখনও যে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয় নি সেটার প্রমাণ ব্লগার মহাজাগতিক শক্তির প্রকাশিত পোস্ট এবং সোনাগাজীর নিজের পোস্টে বিভিন্ন মন্তব্য উভয় জায়গায় উপস্থিত।
ব্লগার সোনাগাজীর মন্তব্য বা সমালোচনা অন্য যে কারো ভালো না লাগতেই পারে। এতে আমাদের কিছু করনীয় নেই। কেউ যদি ব্লগার সোনাগাজীর জন্য ব্লগিং করতে না চান, সেটাও তাদের নিজস্ব বিবেচনা, এই ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু করনীয় নেই। তবে যে বিষয়ে আমাদের করনীয় আছে, তা হলো, কেউ যদি তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘন করেন।
ব্লগার সোনাগাজী তাঁর ব্লগীয় আচরণ সংশোধনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আমাদের কোন পরামর্শ বা অনুরোধ তিনি কার্যত রক্ষা করেন নি। সুযোগ পেলেই নিজের মতামত তিনি অন্যের উপর প্রচণ্ড স্থূলভাবে চাপিয়ে দিয়েছেন এবং সেটাকে ডিফেন্স করতে গিয়ে তিনি যে সকল ভাষা ও যুক্তির ব্যবহার করেন - যা অনেক সময় ব্যক্তি আক্রমনের পর্যায়ে চলে যায়।
আমরা যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্লগারের যৌক্তিক কঠোর সমালোচনা বা ক্ষেত্রে বিশেষে ব্লগীয় সংস্কৃতিতে যে প্রচলিত পদ্ধতিতে তিরস্কার করা হয় (ছাগু সম্প্রদায়, ধর্মান্ধ ও তাদের দোসর), সেটাকে গ্রহণ করলেও আলোচনা বা সমালোচনার নামে ব্যক্তি আক্রমন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে মনে হয় না।
আমাদের সবার পরিচয় আমরা ব্লগার। আমরা সবাই একটি সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করছি। এখানে আমরা কেউ কারো সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি বা কারো সাথে মনোমালিন্য করতেও আসি নি। আপনি যে প্ল্যাটফর্মে লিখছেন, সেটার সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের প্রতি আপনার শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
ব্লগার সোনাগাজী তাঁর নিজস্ব আচরণের কারণেই ব্যান মুক্ত হতে পারছেন না। বাকস্বাধীনতা যেমন কারো অধিকার তেমনি বাকদায়িত্বশীলতাও নিজেকে প্রয়োগ করতে হবে। ফলে ব্লগার সোনাগাজীর ব্যানমুক্তি তাঁর নিজের হাতেই অবস্থিত, এখানে আমাদের কিছু করনীয় নেই।
আর দিন শেষে, কেউ যদি কোন প্ল্যাটফর্মের নিয়ম না মানতে রাজি হন, তাহলে সেই প্ল্যাটফর্মটি তাদের জন্য নয়। - এটা তো সিম্পল হিসাব।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৫