বিয়ের বয়স কমানো নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটুকু বাস্তব সম্মত হবে বা সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তা আমাদের জন্যই বা কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে এরকম একটি প্রশ্ন উঠে আসছে।
ছেলেদের বর্তমান বিয়ের বয়স ২১ বছরের সাথে যেখানে সবাই খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সেখান থেকে সরে এসে বিয়ের বয়স ১৮ আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। আন্যদিকে মেয়েদের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার যে চিন্তা ভাবনা চলছে তা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের নানাবিধ সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
এমনিতেই আমরা নানা বিধ কারনে পিছিয়ে রয়েছি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের থেকে। তার মধ্যে দারিদ্রতাই অন্যতম। আর এই দারিদ্রতার কারনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়া অশিক্ষা কুশিক্ষা জনসাধারনকে করছে বিপথগামী। দরিদ্র পরিবারে অধিকাংশ মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারনে অপরিনত বয়সে স্বল্প বয়েসী মেয়েদের হয়ে যাচ্ছে বিয়ে ।
বিশেষজ্ঞের মতে ১৮ বছরের আগে শরীরের অভ্যন্তরীন যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সন্তান ধারনের মত একটি জটিল প্রক্রিয়া সর্ম্পূণ করে সেগুলো বিকশিত হয়না। এজন্য ঝুকিপূর্ন মাতৃত্ব ও প্রসব কালীন জটিলতার শিকার হয় কিশোরী মেয়েরা। ২০ বছরের আগে সন্তান ধারন করায় রক্ত শূন্যতা,একলামশিয়া, খিচুনিসহ নানাবিধ রোগ দেখা দেয় এবং বাচ্চার ওজন কম হওয়া শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও অধিকাংশ শিশু জন্ম নেয়। জাতীয় পর্যায়ে এক জরিপে দেখাযায় ১৮ বছরের কম বয়স মেয়ের মাতৃ জনিত মৃত্যুরহার প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ২ জন । বাল্য বিবাহের শিকার শতকারা ৮০ ভাগ নারীরা হচ্ছে স্বামী কতৃক নির্যাতিত । এছাড়া এসব নারীর শতকরা ৬০ ভাগ শিশু জন্মগত নানাবিধ রোগ ও প্রতিবন্দীর শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ৬৬ শতাংশের এক তৃতীয়াংশ ১৯ বছরের হওয়ার আগেই মা বা গর্ভবতী হচ্ছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর ২০১০ এর এক প্রতিবেদনে বলাহয় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড তেলত সার্ভে ২০০৭ এর তথ্য মতে বাংলদেশে নারীর বিয়ের গড়বয়স ১৫ বছর ৩ মাস থেকে ২৪ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে যাদের ১৮ বছরের মধ্যে প্রথম বিয়ে হয়েছে তাদের শত করা হার ৬৬ যা ২০০৪ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড তেলত সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৩০ শতাংশ মা এবং ৪১ শতাংশ শিশু অপুস্টিতে ভুগছে দেশের জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর কিশোরী২০০৮ সালের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় যোগাযোগ কৌশল পত্রে জানা যায় কিশোরী দের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুন এবং শিশু মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় ৩০ ভাগের বেশী ।
তবে ২০১০ থেকে চলতি বছরের জুন মাসের বে সরকারী হিসাবে কিশোরী মাতৃত্বের হার উন্নতি হয়ে শতকারা ৩০ শতাংশে দাড়িয়েছে । অল্প বয়সে বিয়ে জরায়ুমুখে ক্যানসারের অন্যতম কারণ। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েদের জরায়ু মুখের কোষ পরিপক্ক হওয়ার আগেই স্বামীর সঙ্গে মিলিত হতে হয়। এতে কোষ গুলেতে বিভিন্ন ইনফেকশন হয়ে ক্যানসারের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ এবং দেশের বিদ্যমান শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে ১৮ বছরের নিচে ছেলে বা মেয়েকে শিশু বলা হয়েছে।