somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মজিদ মাহমুদ
জেগে ওঠো প্রবঞ্চিত প্রেমিকের দল, সম্ভ্রম হারানো বোনযারা কালরাতে ঘুমাতে পারনি নিজের বিছানায়যে সব মা জেগে আছ সন্তানের ফেরার প্রত্যাশায়যারা ভূগছ মাদক আর সিজোফেনিয়ায়তোমাদের কথা লিখেছি আমার কবিতায়----

সত্যবাদী বিছানায় মরে না

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্য নিয়ে অনেক কথা আছে। সত্য নিয়ে বড়াই করতে সবাই ভালোবাসেন। মিথাবাদীকেও বলা যায় না, আপনি সত্য বলেননি; কিংবা আপনি মিথ্যাবাদী। তবে সত্য জিনিসটা এত সরল নয় যে, আপনি দেখা মাত্রই চিনতে পারবেন। সত্য কখনো একমুখী নয়। সত্য বহুমুখী সম্পর্কের দ্বারা নির্ণীত। আপনি যাকে সত্য বলে বিবেচনা করছেন; অন্যে তাকে পরম অসত্য বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে সত্যের সব মুখ আমরা একত্রে দেখতে পাই না। অনেকটা অন্ধের হস্তি দর্শনের মতো। সামান্য একটা টেবিলের পুরোটা কি আমরা একত্রে দেখতে পারি? এমনকি একজনের সামনেরটা দেখলে পেছনেরটা দেখতে পারি না। স্বয়ং নিজের চোখ দিয়ে নিজের পুরোটাও তো দেখা সম্ভব নয়। তাই সত্যকে দেখতে একটি বায়োনারি পজিশন দরকার হয়। সত্যকে দেখার জন্য একটি রিলেটিভিটি বা তুলাদ-ের দরকার হয়। কিন্তু যারা তুলাদ- নিয়ে সত্যকে পরিমাপ করতে যায়, তাদের সত্যও প্রশ্নহীন নয়। তবু মানুষ সত্যের জন্য বেঁচে থাকে, সত্যের জন্য লড়াই করে। কাহলিল জিবরান তার এক কবিতায় বলেছেন, সত্যের সঙ্গে একদিন মিথ্যার দেখা হয়ে গেল, মিথ্যা বলল, ভাই সত্য চলো নদীতে গোসল করে আসি। উভয় নদীর পাড়ে পোশাক খুলে রেখে ¯œানে নেমে গেল। মিথ্যা আগে উঠে এসে সত্যের পরিত্যক্ত পোশাক পরে চলে গেল লোকালয়ে। সত্য নদী থেকে উঠে দেখলো সেখানে পড়ে আছে কেবল মিথ্যার পোশাক; সে বাধ্য হয়ে লজ্জা নিবারণে পরে নিল মিথ্যার ফেলে যাওয়া পোশাক। সেদিন থেকে লোকজন মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে ভুল করে থাকে। যদিও তাদের চোখে কোনো পোশাক ছিল না। সুতরাং সত্যকে জানতে হলে পোশাক ছাড়াই চিনে নিতে হবে।
তাহলে সত্যটা কী? সত্যটা হলো একটি বিশ্বাস ও ধারণা; অর্থাৎ ধারণাটার সত্যটা অনুমান। অনুমান মিথ্যাও হতে পারে, আবার সত্যও হতে পারে। আমার মনে হয়, সত্যের সবচেয়ে যুৎসই প্রতিশব্দ হতে পারে উপলব্ধি। সকল কিছুর সাপেক্ষে নিজের কাছে যা সত্য বলে অনুমিত হলো। নীতি কথায়, শিশুদের পড়ানো হয়, ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ, সদা সত্য কথা বলবে’। শিশুপাঠ্যে দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই মিথ্যাবাদী রাখালের গল্প। যে বনের ধারে নির্জন প্রান্তরে গবাদি পশু চরাত। প্রায়ই সে বাঘ বাঘ করে চিৎকার করে উঠত। গ্রামবাসী তার সাহায্যে এগিয়ে এসে কোথাও বাঘের হদিস পেত না। গ্রামের মানুষের ধারণা জন্মালÑ রাখাল আসলে মিথ্যা কথা বলে তাদের প্রতারিত করছে। এই ঘটনার পরে রাখাল বাঘ বাঘ করে চিৎকার করলেও আর গ্রামবাসী তার সাহায়্যে এগিয়ে আসেনি। একদিন সত্যিই রাখালকে বাঘে খেয়ে ফেলল। উপসংহারে কিন্তু এটা বোঝা গেল নাÑ প্রকৃত মিথ্যাবাদী কে? রাখাল না গ্রামবাসী? রাখালকে তো সত্যিই বাঘে খেয়ে গেল; তাহলে বাঘের গল্প তো সত্য ছিল। এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন থাকতে পারেÑ যেমন এর আগে যখন রাখাল বাঘ বলে চিৎকার করেছিল, তখন গ্রামবাসীর আগমনে বাঘ পালিয়ে গিয়েছিল; অথবা রাখাল ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, এভাবে নির্জন বনে সে একা থাকলে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলবে। এখানেও দেখা যাচ্ছে, সত্য কথা বলায় রাখালের মৃত্যুর জন্য শোয়া হলো না। অপরিণত বয়সে দাঁড়ার ওপর বাঘ খেয়ে গেল। আমি ঠিক জানি না, তাহলে গুলিভর্তি পিস্তল দিয়ে এরশাদ সাহেব যে সবার সামনে আত্মহত্যা করে বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি কি তাহলে আখেরে আত্মহত্যা করবেন? তবে সাপের ওঝা সাপের কামড়ে, গেছো গাছ থেকে পড়ে, মাঝি নৌকায় ডুবে মারা যাবে এটা তো সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব। সত্য জিনিসটা আসলে তা-ই যা মিথ্যা নয়। মহামুণিরা যে সব বাণী উচ্চারণ করেন তার সত্য মিথ্যা মহাকালগত বলে তার ভক্তরা বিবেচনা করে থাকেন। তবে মহামতি ফুঁকো সত্য বলে একক কোনো ধারণায় বিশ্বাস স্থাপন করতে রাজি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সকল সত্যই তার কাল ও সাপেক্ষের উপর নির্ভরশীল। এককালে যা সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, অন্যকালে তা চরম মিথ্যায় প্রতিপন্ন হতে পারে। এই সব সত্য সাধারণত ক্ষমতাবলয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। কিংবা ক্ষমতাকে টেকসই করার জন্য জনগণের মধ্যে একটি সত্য-চেতনা গড়ে তুলতে হয়। আর এই সত্য তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন ওই সত্যের প্রতি আস্থাহীনদের দমন করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ভাষাছন্দ কবিতায়Ñ নারদমুণি ও বাল্মীকির কথোপথনেÑ নারদমুণি বাল্মীকিকে বলছেন, ‘তাই সত্য যা রচিবে তুমি, কবি তব মনোভূমি রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে কবির সত্য আলাদা। এমনকি ইতিহাসবিদের সত্যও এক নয়। ইতিহাসগ্রন্থে যেসব কাহিনী আমরা পাই তা ঘটমান সত্যের হুবহু রূপ নয়। কারণ ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ প্রকৃত সত্য দেখতে পান না। তবু কোথাও তো একটা সত্য আছে। না হলে সত্য বলার জন্য আমরা উদগ্রীব কেন। আর সত্য কথা শুনলে লোকজন খুশি হতে পারে না কেন। তাই যে সত্য কথা বলে তাকে লোকজন পছন্দ করতে পারে না। এমনকি স্থানকালপাত্র না বুঝে সত্য কথা বললে তার বেঁচে থাকা সহজ হয় না। আগের দিনের রাজারাজড়ার সামনে তো কথা বলাই যেত নাÑ তৎক্ষণাৎ ম-ুপাত। এখনকার রাজারা অবশ্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মারেন। তাই রাজারা কাপড় না পরলেও বলা যায় নাÑ রাজা তুমি লেংটো। আর এই জন্যই বলা হয়, যে সত্য কথা বলে তার পক্ষে পরিণত বয়সে কিংবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে মরার সৌভাগ্য হয় না; তার আগেই সত্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তরা তাকে হত্যা করে থাকে। ঈশ্বর বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব ধরে নিয়েই তার সত্যের ধারণা নির্মাণ করেন; আর ঈশ্বরে যাদের আস্থা নেই তাদের সত্যের নির্মিতি আলাদা। যদিও দৈর্ঘ, প্রস্থ, ওজন সম্পন্ন বস্তুর ক্ষেত্রে সত্যের রকম ফের হওয়ার সুযোগ নেই। যে সত্য বস্তুগত সে সত্য একার্থিক, যে সত্য মনোগত সে সত্য বহুমাত্রিক। মহামতি রাসেলের যেমন ঈশ্বরে বিশ্বাস ছিল না; তাকে তার ভক্তরা জিজ্ঞাস করেছিলেন, মৃত্যুর পরে যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব দেখতে পান, তাহলে কি করবেন? রাসেল বলেছিলেন, ঈশ্বরকে বলব, তুমি যে ছিলে পৃথিবীতে তার এত কম প্রমাণ রেখেছিলে কেন? সত্যিই সত্য প্রমাণের জন্য আমাদের কাছে সত্যিকারের কোনো প্রমাণ নেই। রবীন্দ্রনাথও তার শেষ জীবনে আক্ষেপ করেছিলেন, সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম; সে কখনো করে না বঞ্চনা। সত্য বঞ্চনা করে না মানে, সত্যের কঠিন আঘাতের জন্য সত্যবাদিকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়। সত্য আঘাত হানলে বিছায় শোয়ার সময় থাকে না।
তবে বিছানায় না মরলেও একজন লেখককে সত্যবাদি হতেই হয়। মিথ্যাবাদিরা লেখক হতে পারে না। তারা হয় অনুকারক, অন্যের মন বুঝে কোপ মারে, সত্যকে স্বার্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। তাই প্রতিবছর অনেক বই প্রকাশিত হলেও সত্য গোপনই থেকে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×