somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মজিদ মাহমুদ
জেগে ওঠো প্রবঞ্চিত প্রেমিকের দল, সম্ভ্রম হারানো বোনযারা কালরাতে ঘুমাতে পারনি নিজের বিছানায়যে সব মা জেগে আছ সন্তানের ফেরার প্রত্যাশায়যারা ভূগছ মাদক আর সিজোফেনিয়ায়তোমাদের কথা লিখেছি আমার কবিতায়----

জালাল উদ-দীন রুমি

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক গৃহস্থের বাড়িতে দুটি কুকুর ছিল। গৃহস্থের সুসময়ে তারা ভালোই ছিল। কিন্তু সব দিন তো আর সমান যায় না; এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে, একটি কুকুর অন্যত্র চলে গেল; কিন্তু অপরটি কষ্টে-শিষ্টে মাটি কামড়ে রয়ে গেল গৃহস্থের ভিটিতে। না খেতে পেয়ে হাড় জিরজিরে হয়ে মরার উপক্রম; তবু ভিটে ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নয় সে। একদনি ওই রাস্তা দিয়ে তার পুরনো বন্ধু যাওয়ার সময় তার এই হাল দেখে বলল, এখনো তুই এই ভিটে ধরে আছিস! আর কদিন গেলে তো না খেয়ে মারা যাবি। গৃহস্থই খেতে পায় না তোকে কোত্থেকে খাওয়াবে? একে কুকুরের কৃতজ্ঞতাও বলে না; তুই বরং না থাকলেই বেচারাকে মুক্তি দেয়া হবে।

গৃহস্থের কুকুরটি কাচুমাচু করে বলল, নারে দোস্ত, কৃতজ্ঞতা-টিতজ্ঞতা নয়, আমি আসলে একটি আশায় বুক বেঁধে আছি। এ জীবনে তো কিছু হলো না। আজকাল আমার মালিক প্রায়ই রেগে গেলে তার স্ত্রীকে বলে, মাগি, তোকে কুকুরের সাথে বিয়ে দিয়ে দেব।

ঠিক একই গল্প সার্কাসের ঘোড়া নিয়েও আছে। শূন্যে দড়ির ওপর সাইকেল রেসের মেয়েটিকে তার মাস্টার সর্বদা ভয় দেখায়- উপর থেকে পড়ে গেলে, তাকে সার্কাসের মরকুটে ঘোড়ার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে; আর সে ভরসায় সার্কাসের ঘোড়াটি নানা অত্যাচার সহ্য করেও কোথাও য়ায় না। ঘোড়া ও কুকুর নিয়ে এ ধরনের অনেক গল্প রয়েছে। তবে অধিকাংশ গল্পতে প্রাণি হিসাবে তাদের মহত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। একটু খাওয়া, একটু যত্ন-আত্মি পেলে প্রভুর জন্য তারা জীবন বাজি রাখতে পারে। এ ধরনের গল্পের মধ্যে তলস্তয়ের পক্ষীরাজ, শেখভের কানাশকাতা, তুর্গিনেভের শিকারি কুকুর আর্কতুরসহ দেশি-বিদেশি বহু অম্লান গল্প রয়েছে।

তবে সম্প্রতি জালাল উদ-দীন রুমির একটি গল্প আমাকে অশ্লিল হাস্যরসের সঙ্গে উইটের স্বাদ দিয়েছে। বাড়ির মালিকিন লক্ষ্য করলেন তার ঘোড়াটির স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন আগে বিধবার স্বামী মারা গেছে; বাড়ির ফাইফরমাশ খাটে এক তরুণীর সঙ্গে তার সববাস। একদিন বাড়ির মালিক মহিলাটি লক্ষ করলেন, তার চাকরানি মেয়েটি গভীর রাতে ঘোড়ার ঘরে যায়। সে খড়ের গাদায় শুয়ে ঘোড়াটির সঙ্গে মিলিত হয়। আর এ ধরনের ঘটনার জন্যই হয়তো ঘোড়াটির স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবু যা-ই হোক, বিধবারও ইচ্ছে জাগল। সে কৌশলে মেয়েটিকে এক রাতে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিল। কিন্তু মেয়েটি ফিরে এসে দেখলো তার মালিকিন খড়ের গাদার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় মরে আছে।

মেয়েটি খুব ব্যথিত হলো। ভাবল, কাণ্ডজ্ঞানহীন তার প্রভু নিজের মাপের হিসাব না করেই আশ্বায়তনের সঙ্গে মিলিত হতে গেছে। কোনো কিছু করার আগে তার নিজের ওজন জানা দরকার। সে নিজে ঘোড়ার সঙ্গে মলিত হয় বটে, কিন্তু সে কুমড়ার একটি খোল বানিয়ে নিয়েছে, সে কেবল তার পরিমাণটুকুই ধারণ করে, বাকিটা খোলের মধ্যে থাকে।

এটি যদিও একটি অশ্লিল গল্প; তবু আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রায় সকল গল্পের সঙ্গে শরীর ও কামনার অঙ্গগুলোর একটি প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। এমনকি ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে জননইন্দ্রীয় ও নারী পুরুষের সম্পর্কের জ্যান্তব ভূমিকা রয়েছে। যাক, সবচেয়ে বড়, রুমি একজন সাধক কবি ছিলেন। তার অনেক বড় বড় অপরাধও পারস্যবাসী ক্ষমা করে দেখেছেন। এমনকি রুমি কেবল নিজে নন, পারস্যবাসীও দাবি করে থাকেন, মসনবি হলো ফারসি ভাষার কোরান। অন্যরা হয়তো এ ধরনের দাবি করলে মেরেই ফেলতো। রুমির একটা কবিতা আমি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছিলাম; এ স্থলে তা প্রদত্ত করলাম:

মাটির ঢেলা

তাদের সঙ্গে থাকো যারা তোমাকে অস্তিত্বে এনেছে
অজ্ঞ মানুষের সঙ্গে করো না বাস
তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত ঠাণ্ডা বাতাস
কোনো কিছু দৃশ্যত জন্ম দেবে না; তোমার অনেক কাজ

একটি মাটির ঢেলা শূন্যে ছুঁড়ে দিলে হয়ে যায় বহুধা বিভক্ত
তুমি ওড়ার চেষ্টা না করলেও একদিন মাটিতেই হবে পতন
মৃত্যু তোমাকে করে দেবে ছিন্নভিন্ন
কোনো কিছু করার জন্য তখন আর পাবে না সময়

শুষ্ক পল্লব হলুদাভ হয়ে গেলে- গাছ মাটির গভীর থেকে
রস শুষে নেয়; মেলে ধরে নতুন পত্রালি;
এমন জীবন পেয়েও তুমি কেন হয়ে যাবে শুষ্ক পীতাম্বর

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×