somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনে পয়সায় ঢাকের মেলা ভ্রমণ

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনে সব সিদ্ধান্ত হুট করে নেয়া । আমার কাছের বেশির ভাগ বন্ধু এই কথাটা জানে। এবং এর জন্য প্রায় কাছের কয়েকজন আমাকে ভয় পায় কখন কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের বিপদে ফেলি তা নিয়ে । আর সেটা আবারো প্রমাণিত হল ঢাকের মেলা যাবার সিদ্ধান্ত নেবার পর। বাসা থেকে বেরনোর সময় কোন মেলা-টেলা যাবো ভেবে বেরইনি তাই টাকা ছাড়াই বের হলাম। একটু ঘুরেই ফিরে আসবো । কিন্তু এই একটু ঘুরতে যাওয়া আমাকে যে এতদূর এতকিছুতে নিয়ে যাবে ভাবিনি ।

বিকেলের দিকে শুভ আমার বাসায় এল । দুজন মিলে বাইরে বের হলাম। হাঁটতে হাঁটতে বলল কাছেই একটা মেলা হচ্ছে, যাবো নাকি। বললাম বাসা থেকে টাকা আনিনি পকেট পুরো ফাঁকা । এসময় সোহেল সাইকেল নিয়ে এল।

তিন জন বন্ধু মিলে হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়া স্বভাব হিসেবে সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো। এইখানেইতো যাই ঘুরে আসি।

রওনা দিলাম। সাইকেল একটা আর চড়ে বসলাম তিনজন।তখন সন্ধ্যা প্রায়। আমি, শুভ, সোহেল।যেতে যেতে ধরলা নদীর ঘাটে এলাম। আমি জানতাম নদী পার হতে হবে না। কিন্তু সোহেল বলল নদীর ও পাশেই মেলা, পার হলেই হয়। পকেটে টাকা নাই অথচ পার হতে হবে। পার হতে হবে জানলে সত্যিই আসতাম না । সামনে নৌকা, ঘাটের টাকা সব মিলে দরকার ৪০ টাকা। কিছু দুই নম্বরী করতে হবে।কিন্তু আমি করব না বললাম।শুভ তার বীরত্বগাথা অনেক দু নম্বরী ঘটনা শুনিয়ে দু নম্বরীকে এডভেন্চারে পাল্টে দিল। মনে মনে ভাবলাম মাঝে মাঝে করা যায়।এবং সব শেষে মোট পার হলাম, খরচ হল দশ টাকা।

নদীর ওপারে গিয়ে দেখি ঘাট চেন্জ হইছে।। একদিকে রাত নেমে এসেছে অন্য দিকে নতুন রাস্তা কিছুই চিনি না। সামনে দুই দিকে দুটি রাস্তা গেছে। কেউ বলে এটা ঠিক, কেউ বলে ওটা।একজন কে জিজ্ঞেস করলাম মেলায় যাবার রাস্তা কোনটা। দেখিয়ে দিল আর বলল পাঁচ মিনিট গেলেই পাওয়া যাবে।

মাটির রাস্তা আর রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। তাই হেটে যেতে হল। হাটছি তো হাটছি। বাঁশঝাড়ের নিচ দিয়ে কখনও কারবো বাড়ির উঠোন দিয়ে । রাস্তা একবার এদিকে মোড় নেয় আর এক বার অন্য দিকে। আমাদের সাথে ইন্ডিয়া থেকে চোরাই ভাবে আনা সাইকেলের দালালও আছে।তিনি চারটা সাইকেল নিয়ে আসছে। তিনি ঠিক রাস্তায় যেতে কিছুটা হেল্প করলেন।

অবশেষে একটা মোড়ের কাছে এসে কিছু লোক পেলাম। তাদের মেলার কথা বললাম। বলল পার করে আসছি। আবার ফিরে গিয়ে একটু দূরে ওদের কথা মত একটা রাস্তা পেলাম। সেখান দিয়ে আসার পর দেখলাম ধানের জমিতে চলে এসেছি। ঐ দুরে মেলার লাইট বিন্দু আকারে দেখা যাচ্ছে। অথচ কোন রাস্তা নেই। জমির মাঝে আইল আছে কিন্তু কোনটা ঘুরে কোন দিকে গেছে বোঝার উপায় নেই।

উপরে পরিস্কার রাতের আকাশ। বিশাল চাঁদ একটা চাদ। তার আলো সব দিকে ছড়ানো। আমরা সব দিকেই দেখলাম কিন্তু আন্দাজ করা গেল না আসল রাস্তা কোনটা।

সোহেল আমি ভাবনায় ব্যস্ত কিন্তু শুভ ফোন নিয়ে আছে তেনার জি এফ এর সাথে চ্যাটিং এ। পুরো রাস্তা এভাবেই এসেছে। আমি, সোহেল দুজনে ভেবেচিন্তে এক দিকে এগুতে লাগলাম। শুভর চিন্তা নেই আমাদের পিছু পিছু আসছে। সব চিন্তা আমাদের।

হাটতে হাটতে সোহেল বলল দেখ সামনে আবার পুকুর পড়ে নাকি। আমি পাত্তা দিলাম না। হাটছি আর ঠিক করছি আর কোন দিকে যাবো।ফিরে যাবারও বুদ্ধি নাই কারণ কোন দিক দিয়ে আসছি সেটা বোঝা যাচ্ছিল না। সব দিকে একই রকম। যেতে যেতে সোহেলের কথা সত্যি করতে পুকুর এসে হাজির হল। একপাশে ক্ষেত আর এক পাশে বাঁশঝাড় আর মাঝখানে বড় পুকুর। পুকুরে নেমে গেলে সবচেয়ে ভাল হয়। ঠিক হল সাইড দিয়ে হাটু পানিতে পানিতে পেরিয়ে যাবো। নামার পর বুঝলাম অসম্ভব। খুব ধান্ডা। উঠে বাঁশঝাড় ভেঙে এগুতে লাগলাম। সাইকেল থাকায় খুব অসুবিধা হল।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা। এক ঘন্টা পেরিয়েছে। তারকিছু দুর যাবার পর মেলায় পৌছুলাম।

অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়। পৌছে দেখলাম মেলা শেষ। সেদিন ছিল শেষ দিন। দোকান পাট তুলে সব প্যাক করছে সবাই। কয়েকটা জিলাপির দোকান শুধু আছে। তার মাঝে একটা শুভর বন্ধুর। সেই দোকানে গিয়ে ফ্রি জিলাপি, খুরমা পেট ভরে খাওয়া হল।তারপর চলল আড্ডা।

সেখানে একটা টাওয়ারের মত দেখলাম। টাওয়ারটা শলা দিয়ে বানানো। তাকে চারদিক থেকে টানছে বারটা বড় বড় ঘোড়া। দেখার মত জিনিস। ফোনে ফ্লাশ নাই তবুও চেষ্টা করলাম ছবি তুলতে। কিন্তু অন্ধকার ছাড়া কিছুই এল না।

এবার ফেরার পালা । এবার অন্য রাস্তায়। মেলার লোকেরা এই রাস্তাটা দেখিয়ে দিল। হাটছি। শুভ সেই ফোন নিয়ে গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে মেসেজিংএ । আমি, সোহেল গল্প করে মজা করে যাচ্ছি। যেতে আবার ঝামেলা। সামনে রাস্তা দু দিকে চলে গেছে। শুভ এবার প্রথম ফোন থেকে মাথা তুলে কি কি যেন হিসেব করল। বাম ডান উত্তর দক্ষিণ সব এক করে ডানের রাস্তায় যেতে হবে বলল। আমরা যাব এমন সময় এক লোককে পাওয়া গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বামের রাস্তাটায় যেতে বললেন। বুঝলাম শুভর ফোনে থাকাই ভাল, গার্লফ্রেন্ড থাকলে মাথা ঠিক না থাকাই স্বাভাবিক। আমাদের গার্লফ্রেন্ড নাই তাই আমাদের মাথা ফ্রেশ।আমারা হাটা শুরু করলাম।

কিছুদুর যাবার নদীর পাড়ে এলাম। উপরে বিশাল জোছনা ভরা আকাশ নীচে একপাশে নদী অন্য পাশে আখ ক্ষেত মাঝে বালুচর তা দিয়ে আমরা যাচ্ছি। আমার মাথায় কুমতলব আসলো আখ চুরি করলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। শুভকে পাহারা রেখে আখক্ষেতে ঢুকে গেলাম। পাশেই বাড়ি ঘর। বাচ্চার কথা বলার শব্দ আসছে। খুব সাবধানে ভাঙা শুরু করলাম। এসময় দেখি কিছু লোক এদিকে কাছাকাছি এসে গেছে। পাহারাদার শুভর দিকে তাকালাম তিনি ফোন নিয়ে বিজি। বিপদ অনুভব করে আখখেতে শুয়ে পড়লাম। চলে যাবার পর উঠে আবার ভাঙা শুরু করলাম। এভাবে আট নটা আখ হল। বাজারে যার দাম আশি টাকা। আসা যাওয়ার পয়সা উসুল।

আখ সাইকেলে বেধে রেখে শুভকে ধরতে দিয়ে নদীতে হাত ধুতে গেলাম ।
হাত ধুয়ে এসে শুভ ঝাড়ি শুরু করল সাইকেল ধরে নাকি জি এফ কে এসএমএস দিতে খুব অসুবিধা হইছে। ওর হাত থেকে আমি সাইকেল নিয়ে এগুতে লাগলাম। ওর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে প্যানপ্যানানির চেয়ে বালু দিয়ে সাইকেল টানা সহজ।

রাত দশটা পার হয়েছে তখন। নৌকা দিয়ে আবারো দু নম্বরী করে দশ টাকায় পার হলাম। রাত হওয়ায় যেখানে কম করেও ষাট টাকা যেত। এবং পরে রাস্তায় উঠে আখ ভাগ করে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।তখন ফোনে শুভর তার জি এফের সাথে ঝগড়া করছে।

তবে শুভ খুব ঝামেলা করলেও সব টাকা ওই দিছে। শুভ আসলেই ভাল ছেলে। এভাবে শেষ হল বিনা খরচে ঢাকের মেলা ভ্রমণ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×