somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

বায়েজিদ সবুজ উদ্যান সমীপে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ৫ নভেম্বর ২০১৯, মোঙ্গলবার, চট্টগ্রাম।)
শহরে মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত। যান্ত্রিক জীবনে এই ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে। ছুটির দিনে কিংবা অবসর সময়ে একটু সরল বিনোদন ও খেলাধুলা করার মতো আজকাল শহরে সহজে কোন মাঠ-ঘাট ও পার্ক খুঁজে পাওয়া দুরহ। ইটপাথরের জঞ্জালে ভরা নগরীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের দেখা পাওয়াই যেন কষ্টসাধ্য। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গাও তেমন একটা নেই। একদিকে ধুলোবালি, নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া গাড়ি এবং অন্যদিকে প্রয়োজনহীন অসহনীয় হর্ণের শব্দে আরো অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তবে আশার কথা হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী কাজে ডুবে থাকা মানুষের ছুটির দিনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার মতন জায়গা তৈরি হয়েছে নগরীর বায়েজিদ থানাধীন সেনানিবাস সড়কের বাম পাশে ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’। সপরিবারে ভালো সময় কাটানোর জন্যই এই প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্রটি নগরবাসীর জন্য একটি উপহার। বিশেষত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব ও পশ্চিম নাসিরাদ এলাকাবাসীর সুস্থ্য বিনোদনের জন্য এযেন এক আর্শীবাদ। দুই একরের বিশাল জায়গাজুড়ে এই সবুজ উদ্যান।

প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্রে এ সবুজ উদ্যানে রয়েছে ২টি সৃদৃশ্য ফটক। বসার বেঞ্চ আছে একক ৩৯টি, দ্বৈত ৭টি। ৬০ ফুট ব্যাসের জলাধারের দুই পাশে উন্মুক্ত গ্যালারি রাখা আছে। জলাধারে পানি রাখা হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট। ১ হাজার ২০০ ফুট সীমানা প্রাচীর রয়েছে। পার্কে আসা নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা টয়লেট। এ ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং হওয়ার কথা উদ্যানটি। বাগানে সবুজ ঘাসে ও গাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর জন্য রয়েছে ৬০টি স্প্রিঙ্কলার। পুরো উদ্যানে ১০৮টি কম্পাউন্ড লাইট, ১৬টি গার্ডেন লাইট, ৫৫টি ফাউন্টেন লাইট রয়েছে। সকালে ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি ও শরীর চর্চার জন্য এবং বিকালে সপরিবারে বেড়ানোর জন্য উদ্যানটি খোলা রাখা হয়। উদ্যানের পরতে পরতে সাজানো ৪১ প্রজাতির বৃক্ষরাজির সবুজায়ন। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে রয়েছে বসার বেঞ্চ। প্রায় ৪ হাজার ফুটের ওয়াকওয়ে। শিশুদের সময় কাটানোর জন্য রয়েছে স্লিপার ও দোলনা। চারদিকে আলোর ফোয়ারা।

পার্কটি উদ্বোধনের প্রায় ১ মাস পর গত শুক্রবার ১লা নভেম্বর প্রথমবারের মতো পার্কটিতে গেলাম সবুজের মাঝে কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু বিধিবাম, গিয়ে দেখি জন সমুদ্র। উন্মুক্ত উদ্যানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রায় হাজার খানেক মানুষের সমারোহ পার্কটিতে। মানুষের তুলনায় পার্কটিকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। এতো মানুষের একই সময়ে উপস্থিতি পার্কটির শান্ত ও সুশীতল পরিবেশকে ম্রিয়মান করে দিয়েছিল। প্রবেশ ফটকে ছিল লম্বা জট। নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় যে যার মতো করে সারিবদ্ধ শৃঙ্খলা না মেনে ধাক্কাধাক্কি করে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশদ্বার না থাকায় সবাইকে দলাদলি করে প্রবেশ করতে হয়। কেউ কেউ নিরাপত্তার জন্য যে ছোট বেষ্টনী আছে, তার উপর দিয়ে লাফিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছিল দেখতে পাই। হতাশার উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, প্রায় হাজার খানেক এই দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে থাকা শোচাগারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। তথ্যমতে, পার্কটি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাথা হয় জনস্বার্থে। তাহলে ভাবুনতো, এই দীর্ঘ সময় সাধারণ মানুষকে কেন কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক কর্মসাধনের এই শোচাগার ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখবেন তা বিস্ময়ের বিষয়। আরেকটি ভয়ানক বিষয় না বললেই নয়। তাহলো; পার্কের মধ্যে আলোকসজ্জায় বিদ্যুতের সঞ্চালনের জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ২৪০ ভোল্টের যে খুঁটিগুলো আছে, তার চারপাশে কর্তৃপক্ষ কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী দেননি। তার পরিবর্তের রয়েছে ইট-বালি-সিমেন্টের ছোট্ট বেদী। ফলে বিশেষত, বাচ্চারা যে কোন সময় খুঁটিগুলোকে জড়িয়ে ধরতে কিংবা তার উপরে উঠতে পারে যা একটা মরণফাঁদ। ঘটে যেতে পারে যে কোন সময় যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা, এমনকি মৃত্যুও। বিশেষত বর্ষাকালে বা শীতের কুয়াশার স্যাঁতস্যাঁতে পরিস্থিতিতে বিদ্যুত পৃষ্ঠ হবার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুরো পার্কের আয়তনের তুলনায় পার্কের অভ্যন্তরের একমাত্র ফোওয়ারটি একটু বেশী জায়গা দখল করে আছে বলে আমার কাছে দৃশ্যমান হয়েছিল। আকারে আরেকটু ছোট হলে সে জায়গায় আরো বেশ কিছু মানুষের সঙ্কুলান করা যেত। আশাহুত হয়েছি সদ্য প্রতিষ্ঠিত পার্কটির এই একমাত্র ফোয়ারাটিকে চালাতে না দেখতে পেয়ে। কর্তৃপক্ষ কেন ফোরাটি বন্ধ রেখেছিলেন তা আমার জানাছিল না। সান্ধ্যকালীন ফোয়ারার জলধারা পার্কটির সৌন্দর্য্য আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে পারতো, মুগদ্ধ করতে পারতো দর্শনার্থীদের। আমি বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেছিলাম পার্কটিতে। উপরোল্লিখিত তথ্যমতে, পার্কটি বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত রোদের আঁচড়ে ঘর্মাক্ত দর্শনার্থীদের স্বস্তির জন্য কিংবা হঠাৎ বৃষ্টির আঘাত মোকাবেলায় ছাতা সদৃশ কোন ছাওনী নেই পার্কটিতে। আরো বলা বাহুল্য যে, দর্শানার্থীদের ব্যবহার্য্য উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য পার্কটির বিভিন্ন স্থানে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দর সুন্দর বেশকিছু ডাষ্টবিন দেওয়া হয়েছে পার্কের অভ্যন্তরে। কিন্তু মানুষের মধ্যে ডাষ্টবিন ব্যবহারে আশাজনক সচেতন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। সুন্দর ও নয়নাভিরাম পার্কটি মানুষের কোলাহল, শব্দ আর বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের ফেলনা আবর্জনায় অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছিল।

পরিশেষে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করে বলছি, জনমানুষের সেবায় পার্কটির পরিবেশের সচ্ছতা আনয়নে আরো উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ রক্ষায় আরো প্রয়োজনীয় নানাবিধ ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড সংযোজন করতঃ সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে। পার্কের পরিবেশ ও সম্পদ বিনিষ্ট করনে প্রয়োজনে শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা যেতে পারে। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার খাতিরে প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ এবং নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশপথ হতে পারে পার্কে আগত সাধারণ মানুষের জন্য বাড়তি পাওনা। প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের উন্মোক্ত প্রবেশ ও সহজ চলাচলে নেওয়া যেতে পারে সহায়ক পরিকল্পনা।


লেখকঃ কলামিস্ট
ই-মেইলঃ [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×