আমার চশমা দিয়ে যখন আমি পৃথিবী দেখি তখন সেই পৃথিবী আসলে একটা ফ্যান্টাসির জগত। এই ফ্যান্টাসির জগৎটাই আমি দেখতে অভ্যস্ত। যেহেতু অনেক দিনের মজ্জাগত অভ্যাস, তাই এভাবে দেখাই আমার জন্য আরামদায়ক। এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যা আরামদায়ক তা (আমার ক্ষেত্রে আমার খুব ফ্যান্সি ফ্যান্টাসির জগতটা) ছেড়ে মানুষ সহজে বের হয়ে আসতে চায় না।
ইদানিং আমার মধ্যে এই বোধটা জেগে উঠছে যে আমার এই ফ্যান্টাসি জগত আসলে আমার "মনের একটা অবস্থা বিশেষ" ছাড়া কিছুই না যদি তা বাস্তব জগতের সাথে হেলা ফেলা করেও তুলনা করা হয়। গত ছয় মাস যাবত আমি নিজেই দেখলাম যে আমার ১৭ বছরের পেশাগত জীবনটা তালগোল পাকিয়ে কত দ্রুত সবেগে নিচের দিক নামছে তো নামছেই। এরকম কিছু একটা হবে তা ছিল আমার কল্পনারও অতীত। ধারণাই করতে পারিনি যে, "ইহা আমার উপরেই নিপতিত হইবে"। এতগুলো বছর নিষ্ঠা ও সততার সাথে চাকরি করে এবং কারো পেশাগত জীবনের ক্ষতি সাধন না করেও কিভাবে ঊর্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক অবিচারের শিকার হয়ে বিদায় নিতে হয়, সে এক অভিজ্ঞতা বটে।
অপরাধ না করেও জুলুমের শিকার মানুষরা হয় সাধারণতঃ এতিম। চেনা মানুষও ঐ নাজুক সময়ে তাকে আর চেনে না। ওদিকে অপদার্থ, আকাট মূর্খ জুলুমবাজদের ভাই বেরাদারদের কোন অভাব হয় না। আসলে এসব পঙ্গপাল আর আগাছা পরগাছার দল যুথবদ্ধ হয়েই কাজ করে। অনাদিকাল হতে এসবই হয়ে আসছে।
যাই হোক, এরকম ধাক্কা খেয়ে বসে থাকলে তো আর চলে না। কেননা জীবন স্রোতস্বিনীর মতোই নিরন্তর বহমান। এর প্রবাহ তখনই থামে যখন তা পরকাল নামক মহাসমুদ্রে গিয়ে পড়ে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই নিজের সেই স্বপ্নময় ফ্যান্টাসির জগত থেকে বেরিয়ে বাস্তব পৃথিবীর ধূলধুসরিত মাঠে নেমে পড়লাম । নিজের আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের যোগাযোগ সমূহ কাজে লাগানো শুরু করলাম। নতুন করে নিজের সিভি দেওয়া শুরু করলাম অনলাইনে অফলাইনে। ফলাফলও পেতে শুরু করলাম। কিন্তু ইন্টারভিউ তো আর শুরু হয় না। কর্তৃপক্ষের একটাই ভাষ্য, তা হলো "নির্বাচনী কোষ্ঠকাঠিন্য"। এরপরেও নির্বাচনের আগেই একটা সেন্ট্রালাইসড ব্যাংক ইন্টারভিউর জন্য ডেকে বসলো। খুশিতে বাগবাকুম, মনে হলো আকাশের চাঁদ পেলাম। তখনও বুঝিনি যে তা ছিল আমার জন্য, "too good to be true"।
১. পজিশনঃ
সিনিয়র ম্যানেজার একাউন্ট সার্ভিসেস
২. জব পোস্টিং
১৪.১১.২০২৩
৩. সিভি সাবমিশন
২০.১১.২০২৩
৪. জব ইন্টারভিউ
১১.১২.২০২৩
.
.
.
.
৫. রিক্রুটমেন্ট সেটেলমেন্ট (নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে)
২০.১১.২০২৩
হিন্দিতে একেই বলে "কাহানী মে টুইস্ট"। এই টুইস্টের ধাক্কা খেয়ে আমি আবার, উপুর্যুপুরি, পালাক্রমে, উপলব্ধি করলাম যে আমার 2+2=4 ভিত্তিক সমীকরণের কোন অস্তিত্ব বাস্তব জগতে নেই (আছে কেবল আমার ফ্যান্টাসির জগতে )। একটা নামকরা সেন্ট্রালাইসড ব্যাংক অফিসিয়ালি ইন্টারভিউর জন্য কল করে, "ইন্টারভিউ পরিচালনা করলো (৪ নম্বর), ইন্টারভিউ পরিচালনারও কয়েক সপ্তাহ আগে একই পজিশনে রিক্রুটমেন্ট ফাইনালাইজ (৫ নম্বর) করার পরে"। হ্যাঁ, বাংলায় একে সম্ভবতঃ বলে যে, সাপও মরল কিন্তু লাঠিও ভাঙলো না অথবা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও তার চাহিদা ও বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী কুমিরের বাচ্চা দেখিয়ে বুঝ দেওয়ার কাজটা নিশ্চিত করল।
শেষমেষ আমি কি শিখলাম?
আমার শিক্ষা এটাই যে, 2+2=4 এর সমীকরণটা বাস্তবতার জগতে সম্পূর্ণ অসম্ভব না হলেও এদেশের কর্পোরেট মাফিয়া সিন্ডিকেটের কল্যাণে তা এখন অসম্ভবের কাছাকাছি।
বরং মানসিক প্রস্তুতিটা যদি এরকম হয় যে 2+2=n (n means any outcome......), তবেই এ বাস্তব পৃথিবীর ততোধিক কঠোর ও অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা বোধ করি কম কষ্টকর হয়। কিন্তু আপোষকামী মানসিকতা ধারণের কষ্টটা অনেকের কাছেই অনেক বড়।
রেগুলার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক মিড লেভেল ম্যানেজারদের দেশান্তরী হতে দেখা যায় আজকাল। বয়স ৪০ বা ৪৫ উর্ধ্ব এ সকল ম্যানেজারদের আবার নতুন করে পেশাগত জীবন শুরু করার কোন বিকল্প সুযোগই নেই। না দেশে, না বিদেশে। তো বাকি থাকে তাদের পরিবারের সবচেয়ে কমবয়সি সদস্য, তাদের সন্তান। আগাছা-পরগাছা বান্ধব এই বাংলাদেশে তাদের সন্তানরা যে উপরে বর্নিত পরিস্হিতির শিকার হবে না তার নিশ্চয়তা কই?
কর্পোরেট কালচার-২
কর্পোরেট কালচার-১
কর্পোরেট রোবট নাকি অ্যাসেমব্লি লাইন ওয়ার্কার অথবা ডিসপোসেবল (হিউম্যান রিসোর্স) কিছু.......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৬