ধরে নেই,
১.
দুটি শিশু ভালো আঁকতে পারে, তারা জানে তারা কী চায়। তারা পাগলের মতো আঁকতে চায়। কিন্তু চ্যালেঞ্জ তো এক জায়গায়।
ঐ শিশু দুটির, এক শিশুর জন্ম বস্তিতে আর আরেক শিশুর জন্ম, সচ্ছল একটি পরিবারে। দুই শিশু যে পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিকতার মাঝে বেড়ে উঠছে, সেই দুই পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার পার্থক্য, আকাশ পাতাল সম। এক শিশুর পরিবার, চাহিদামাফিক আঁকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই কেনে, এমন কি গৃহশিক্ষকও রাখে। অন্যদিকে বস্তিতে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় বড় হতে থাকা শিশু ভয়ে হয়তো একটা 2B পেন্সিলও, তার মা বাবার কাছে চাইবে না। কোন ইতিবাচক ও কার্যকরী সাপোর্ট ছাড়া, বস্তির ঐ শিশু কতদূর যেতে পারবে?
এরপরও হয়তো, ঐ রকম অবস্থা থেকে উঠে এসে মূলধারায় জায়গা করে নেবে অনেকে। কিন্তু আমরা আম জনতা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর fractional একটা শতাংশের সাফল্যের কাহিনীই শুনি। ঝরে পড়া সংখ্যাগরিষ্ঠের কাহিনী, অবধারিতভাবেই আমাদের অন্ধ চোখে (শুধুমাত্র সাফল্যের কাহিনী ছাড়া) ধরা পড়ে না।
২.
চাকরীর বাজারে যে শিক্ষার্থী মাত্র ঢুকবে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ, তার সার্টিফিকেটের মূল্য কত? চাকরি না পাওয়া বেকার যুবক যুবতী দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় যে, ২০-২৫ বছর ধরে এদেশে পড়াশোনার পিছনে ব্যয় করা সময়, শ্রম ও অর্থ একশতভাগ অর্থহীন হয়ে গেল কিনা। এখন হতে পারে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির কারণে সে চাকরি পাচ্ছে না আবার এরকমটা হওয়াও খুব অস্বাভাবিক না যে, যে বিদ্যা শিক্ষা সে অর্জন করেছে, তার চাহিদা চাকরি বাজারে নেই। উন্নত বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর সরকার যেভাবে যুথবদ্ধ ভাবে কাজ করে এবং প্রয়োজন মাফিক শিক্ষানীতি সময় সময় যুগোপযোগী করে, তা কি আমাদের দেশে আদৌ সম্ভব?
তাই বিদ্যমান বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সিলেটের এক তরুণের পরামর্শ হলো, এদেশের মানুষের ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যেই বিদেশে পাড়ি জমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। নইলে, এদেশের ভেঙে পড়া সিস্টেমের সাথে আপোষ করে নিজেকেই সিস্টেম হয়ে যেতে হবে।
৩.
২% ধনীর মধ্যে কত শতাংশ ট্যাক্স ফাঁকি না দেয়া জেনুইন ব্যবসায়ী আর কত শতাংশ oligarch, যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, ঋণ খেলাপি এবং তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে যাবতীয় সব অনিয়ম তারা করে, এমনকি, প্রয়োজনে জন প্রতিনিধিকে কাজে লাগিয়ে আইনও পরিবর্তন করে ফেলে। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া ব্যবসায়ীরা কি কি নাগরিক সুবিধা পায় আর যথাযথ ভাবে ট্যাক্স দেওয়ার পরেও মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবীরা কি কি নাগরিক সুবিধা পায়? এ তো কারো অজানা নয়, যে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া ধনী শ্রেণীর চাইতে ট্যাক্স দেয়া মানুষজন, রাজস্ব বিভাগের ভোগান্তিতে পড়েন বেশি।
৪.
ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে, বিবেকের দায়বদ্ধতা আমলে এনে, অতি প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা দূর্নীতি বান্ধব, অনিয়ম বান্ধব, জবাবদিহিতাহীনতার সংস্কৃতি লালনকারী একটি সিস্টেমের বিপরীতে যুদ্ধ করা যায়, কিন্তু তাতে কি সেই গণ বিরোধী সিস্টেমের পরিবর্তন সম্ভব, নূন্যতম হলেও? সুতরাং আগাছা পরগাছার দৌড়াত্মে , নিজেকে বট গাছের বনসাইয়ে রূপান্তরিত না করে যারা নিজ জীবনে ইতিবাচক একটা পরিবর্তন চায়, যারা নিজের ও তার পরিবারের ভালো একটা ভবিষ্যৎ মনে প্রাণে কামনা করে, তারা নিশ্চিতভাবেই সপরিবারে অন্য দেশে হিজরত করে, দেশান্তরী হয়। তার জীবনের মানচিত্র সে নিজেই এঁকে নেয়।
আগে শুধু শিক্ষার্থীরাই বিদেশ পাড়ি জমাতো। আর এখন ৩৫-৪৫ বছর বয়সের এই সীমায় থাকা দক্ষ কর্মী বাহিনীর অনেকেই, সমানে দেশ ছাড়ছে। দেশে আরো ২০-২৫ বছর চাকরী করার সম্ভাবনা থাকার পরও তারা জেনে বুঝে এবং সচেতন ভাবেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ওদিকে বৈধ অবৈধভাবে এদেশে কাজ করা বিদেশীদের (বিশেষতঃ ভারতীয়দের) সংখ্যা নাকি এখন সাকুল্যে ২৬ লাখ। এরকম চলতে থাকলে, এদেশের প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কর্মী ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:১৮