ইদানিং ইসলাম পালনের জন্য আমাদের বড় একটা সমস্যা হলো ফতোয়া । এটা হারাম ঐটা হারাম । আবার একজন হারাম করলে আর একজন হালাল করে দেয়। এর মধ্যে অনেকে দাঁত ভাঙ্গা জবাবও দেয় । আবার অনেকে অকাট্য দলিল দিয়ে হারাম করে বা হালাল করে। তখন আমরা যারা সাধারন পাবলিক তাদের বিপদে পরতে হয়।
কে সঠিক ? আর কে বেঠিক ? আমি / আমরা বুঝে উঠতে পারি না।
সুতরাং আমাদের কি করা উচিত । সেটা বলার আগে আর একটা কথা বলে নেই।
ইসলাম আমাদের কে একটা বিষয় বৈধ করে দিয়েছেন সেটা হলো চলোমান কিয়াস। প্রত্যেক মানুষই প্রতি মুহুর্তে কিয়াস করে বা কিয়াস করে চলতে হয়।
উদাহরন দিলে বুঝতে সহজ হবে । যেমন-
আপনি চরে ধান বা ফসল কাটতে গেছেন । ধান বোঝাই নৌকা নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন। আর মনে মনে নিয়ত করেছেন বাসায় এসে নামাজ পড়বেন । কিন্তু মাঝে এসে নৌকা ডুবে গেছে । আপনি একদিকে, নৌকা একদিকে , ধান এক দিকে , এর মধ্যে আপনার লুঙ্গি খুলে গেছে।
এখন আপনি কি করবেন?
সাঁতার কাটবেন?
লুঙ্গি পরবেন?
ধান ধরবেন?
না নৌকা ধরবেন?
এর মধ্যে আপনার মনে হয়েছে যে আপনি নামাজ পড়েননি । আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন নামাজের টাইমও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নামাজ ফরজ তাই পড়তে হবে ?
লংগি সতর , নদীতে না হলেও তিরে এসে তো লাগবে ?
নৌকা ভাড়া করে নিয়েছেন ? এটা ছাড়া যাবে না ।
ধান সারা বছরের খোরাক এটা তো আন্তেই হবে ?
এই সময় আপনি নামাজ পড়বেন?
কাযা করবেন ?
অজু করবেন?
নামাজ দাড়িয়ে পড়বেন ?
হাত তুলে নিয়ত করবেন ?
মাসালা জানার জন্য কি তখন আলেম খুঁজবেন ?
না কুরআন- হাদিস নিয়ে বসবেন?
না নিজে নিজে কিয়াস করবেন?
বিবেক-বুদ্ধি খাটাবেন?
না নদীর দু'তীর থেকে চিল্লাইয়া কিছু লোক কথা বলতেছে বা কেঊ গালি দিচ্ছে তা শুনবেন?
তার মানে আপনাকেই একটা সিধান্ত নিতে হবে কিয়াসের মাধ্ম্যে।
এবং
আপনি একটা কিয়াস করবেন ?
কিভাবে আপনি নামাজ সারবেন?
কিভাবে তীরে আসবেন? বা বাকী কাজ কিভাবে সহজ করে করবেন?
এটা কিয়াস । এরকম প্রতিদিন প্রতি মূহুর্ত আমারা অনেক সমস্যায় পড়ি এবং এই কিয়াস করে করে চলি
মানুষ যে প্রতি মুহুর্তে কিয়াস করে তার আর একটা উদাহরন দেই ।
যেমন - আপনি লঞ্চে বরিশাল যাচ্ছেন এশার নামাজের জন্য ইচ্ছা করলেন অজু করবেন। প্রথমে গেলেন পানির নিকট । যেয়ে দেখেন নদীর পানি গন্ধ । পবিত্রতার চেয়ে অপবিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।
এখন আপনি কি করবেন?
অজু করবেন না তাইয়াম্মুম করবেন?
এখন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কি লঞ্চে বসে আলেম খুঁজবেন যে আপনার কি করা উচিত?
না !
কুরআন হাদিস পড়া শুরু করে দিবেন ?
কুরআন হাদীসে কি লেখছে তা দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন?
আমরা কি করি?
তখন আসলে আমরা উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে কিয়াস করে নেই? বিবেক বুদ্ধি কে কাজে লাগাই।
এবং এই কিয়াস একেক জনের টা একেক রকম হয়। আপনি খেয়াল করে দেখবেন কেউ এই পানি দিয়েই অজু করছে ,
কেঊ এই পানি দিয়েই গোসল করছে,
আবার কেউ তাইয়াম্মুম করছে ।
আরো একটা ব্যাপার লক্ষণীয় কেউ এই পানি খাচ্ছেও ।
এই পানি ব্যাবহার করে লঞ্চে রান্না হচ্ছে এবং বুঝে না বুঝে সেই রান্না VIPথেকে শুরু করে সবাই খাচ্ছে।
প্রমানের জন্য মাঝে মাঝে সদর ঘাট যেয়ে দেখে আসবেন । আর যারা বিদেশে যান তারা আরো সহজে বুঝতে পারেন। অন্য ভাবে।
আপনি কি বলতে পারবেন কে সঠিক আর কে সঠিক না? এখানে কার জন্য কি ফতোয়া হবে ? কার ইমান নাই আর কার ইমান আছে?
কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামি?
এই অধিকার কি আল্লাহ কাউকে দিয়েছেন?
( আমি দেখতেছি যেভাবে একজনে আরেক জনকে ইমান নাই বলা শুরু হয়েছে তাতে ইমানদার কোন লোকি নাই। আবার যেভাবে জাহান্নামি বলা হচ্ছে তাতে আমাদের আলেমগন কাউকেই জান্নাতে যেতে দিবে না।)
এবার আসি নতুন ফতোয়া নিয়ে। আসলে কি করবো আমরা ? এই দু'দিনে ২ টি নতুন ফতোয়া পেয়েছি- ১। একামতে দ্বীন জায়েজ নাই
২। হরতাল জায়েজ নাই এবং এটা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম? যেহেতু দু'দল একদল পক্ষে একদল বিপক্ষে ? এবং দু'দলেরই শক্ত দলিল আছে? এক্ষেত্রে আমরা ক'য়েক টা প্রশ্ন করে নিতে পারি ।
মানুষের চিন্তাশক্তি, যুক্তি বিশ্লেষণ কাজে লাগাতে পারে বিভিন্ন প্রশ্ন করে করে । যে এগুলো হারাম না হালাল । যেমন- যা দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। তা হলো-
১। কি?
২। কে ?
৩। কেন?
৪। কিভাবে?
৫। কোথায়?
৬। কখন?
৭। ক্ষতি?
৮। লাভ?
বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করা যেতে পারে নিজে নিজেই যেমন _ কেন করে ? কি করে ? কিভাবে করে? কখন করে?
আবার কে বলেছে ? কেন বলেছে? কখন বলেছে? কিভাবে বলেছে? ( অনেক সময় বলার বাচন ভঙ্গি বলে দেয় বলাটা আদর্শগত দাওয়াত না শত্রুতা )
কোথায় বসে বলেছে ?
কার কথায় বলেছে?
আল্লাহ বলেছেনঃ
Truly, the worst of all creatures in the sight of Allah are the deaf, the dumb, those who do not use their reason/think. ( 8:22)
আল্লাহর দৃস্টিতে নিকৃষ্ট প্রাণী তারাই যারা চিন্তাশক্তি বা যুক্তি ব্যবহার করে না। আল্লাহ আবার বলেছেনঃ
সূরা ফুরকানের ৪৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহরাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন:
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا (44)
“(হে নবী) তুমি কি মনে করো যে, তাদের বেশিরভাগ (সত্য) শোনে অথবা তা উপলব্ধি করে? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট।” (২৫:৪৪)
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. চতুষ্পদ জন্তুর বিবেক নেই, তাই ভালো-মন্দ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু যারা পথভ্রষ্ট তারা হয় নিজেদের বিচার-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না অথবা সত্যকে উপলব্ধি করার পরও তা মেনে নেয় না।
২. সত্য পথ পেতে হলে আল্লাহর বাণী শুনতে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি যে ভালোবাসা সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে তাকে জাগিয়ে তোলার জন্য ঐশীবাণী শোনা অপরিহার্য।
৩. যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত পথ মেনে নেয় তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ নেমে আসে। আর যে ব্যক্তি সত্যপথ থেকে দুরে থাকে সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায়।#
অতএব কাউকে দোষ না দিয়ে । কারো কথায় মন খারাপ না করে, নিজেই বের করে নিতে হবে আপনি কি করবেন। এবং মনে করতে হবে আপনি যা করেন সেটাও সঠিক আর অন্যরা যা করে সেটাও সঠিক । কাউকে অপমান করা যাবে না । যেহেতু ইসলমী রাট্র আমাদের নাই।
আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে তাদের সবাইকে নিয়ে উম্মাহ ক্রুন।
Allah plz help us!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:০৮