যদি ধরা পড়ি তবে দুচারটারে লিয়া মরমু!!!
৪ই-জুন ১৯৭১....
দুপুর দুইটা। দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে খেতে বসেছে নীরিহ কৃষক নাসির মণ্ডল। ছোট ছেলে আজিজের বয়স ১৪/১৫ বছর।
বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ১০/১২জনের একটা আর্মি কনভয় থামলো আজিজদের বাড়ির সামনে। আর্মি দেখে আজিজ ঘরের মধ্যে লুকালো। পাকিরা নাসির ও তার বড় ছেলেকে হত্যা করলে।
আজিজ ও তার মা বেঁচে গেলো। পথে পথে ঘুরতে লাগলো। একটা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে দেখা হলো। আজিজ গ্রেনেড চার্জ করা শিখে নিল। দুটো গ্রেনেড চেয়ে নিলো!!!
আজিজের বুকে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। সুযোগের অপেক্ষা.....আজিজ লক্ষ করলো বগুড়া পুলিশ লাইনসের পাশে হওয়া হাটের বেশিরভাগ পাকি আর বিহারীরা!!! শাক বেঁচার বাহানায় মাঝে মাঝেই হাটে আসতো আজিজ। একদিন লক্ষ্য করলো হাটের পাশে একটা পাকি আর্মির ট্রাক দাড়িয়ে থাকে এবং রানওয়ে নির্মাণের কাজ তদারকি করে। আজিজ লক্ষ্য খুঁজে পেল...
হাটে এসে সন্ধ্যার আগে শাক বিক্রি শেষ করে টাকা থলিতে নিয়ে ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেল। থলিতে দুইটা গ্রেনেড!!!
ট্রাকের পাশে এসেই পোলা ঝোপঝাড় ভর্তি ডোবায় নেমে গেল। দেখলো ট্রাকে আট/দশটা পাকি বসে আছে। টার্গেট সেট!!! উঠে দাড়িয়েই চার্জ করলো আজিজ। দ্বিতীয়টি চার্জ করেই দৌড় দিল আজিজ... দেখলো হাঁটুরের দল লুঙ্গি খুইলা দৌড় দিতেছে। পরে আজিজ শুনলো অনেক পাকি সেদিন হতাহত হয়েছিল....
বগুড়ার পুলিশ লাইন, পলিটেকনিক্যাল কলেজ ও নতুন তৈরি রানওয়ে নিয়ে পাকিদের শক্ত ডিফেন্স। চৌদ্দই ডিসেম্বর সকালে মিত্রবাহিনী আক্রমণ করে তাদের একচুলও নড়াতে পারলো না। ট্যাংক নিয়ে মুক্তিবাহিনী এসেছে পিছন থেকে আক্রমণের জন্য। পথেই দেখা আজিজের সাথে। আজিজ ওদের সব কথা বললো। আক্রমণের নতুন পথ খুঁজে দেওয়ার জন্য ওরা আজিরের উপর দায়িত্ব দিলো।
আজিজ: স্যার আমি আগে যাইয়া দেইখা আহি। তারপর খবর দিমু। তয় হামাক দুইটা গ্রেনেড দেন
কমান্ডার: গ্রেনেড তুমি কি করবা?
আজিজ:যদি ধরা পড়ি তবে দুচারটারে লিয়া মরমু।
গ্রেনেড নিয়ে আজিজ চলে গেল। হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের পিছন থেকে গ্রেনেড ফাটার শব্দ হলে!!!
সবাই ছুটে গেল... তারা ভাবলো তাদের পিছনে গ্রেনেড ফুটলো কেন? পাকিরা তো সামনে!!! হঠাৎ দেখলো আজিজ দৌড়ে আসছে।
আজিজ এসে বললো সে পাকিদের রেকিটিম টাকে উড়িয়ে দিয়েছে। আশেপাশের বাড়ি সার্চ করে তিনজন আহত পাকি কে দেখা গেল।
মিত্রবাহিনী বুঝলো তাদেরকে পিছন থেকে আক্রমণ করার জন্য রেকিটিম পাঠানো হইছিলো। কিন্তু রেকি করার আগেই চৌদ্দ বছরের আজিজ রেকিটিমটাকে উড়িয়ে দেয়।
তৎকালীন পৃথিবীর সেরা আর্মির চৌকস রেকিটিমকে উড়িয়ে দেয় আমাদের অবুঝ বালক। বাঁচিয়ে দেয় মিত্রবাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধাকে.....
নাহ, আজিজদের কথা কেউ মনে রাখে নি... পাকি ক্রিকেটারদের সাপোর্ট করতে গেলে আজিজ আমাকে বাধা দেয়ে। ম্যারি মি আফ্রিদি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখলো কেঁদে ওঠে আজিজের মত পুতুল নামের মেয়েটিও...
তের/চৌদ্দ বছরেরএই ছেলেমেয়েগুলো সেদিন শত্রু চিনেছিলো....
কিন্তু আজ তেতাল্লিশ বছর পরেও আমরা পাকিবীর্য কি বুঝি না!!!!
পারলে আমরা আফ্রিদীর ডান্ডু চোষনের ইচ্ছাপ্রকাশ করি!!!
পারলে আমাদের মেয়েরা আফ্রিদিকে মন রাজ্যের স্বামী হিসেবে মানে!!!!
আমাদের মেয়েদের কাছে পাকি লন হল স্বর্গ থেকে আগত কাপড়!!!
তারা একাত্তরের পাকি ক্যাম্পে নির্যাতিত মায়ের কথা ভুলে যায়.... তারা বিবস্ত্র সেই মায়ের সেই অবয়ব দেখে না.... তারা পাকি লনগুলোতে ধর্ষিত মায়ের রক্ত দেখতে পায় না...
আসলে আমাদের ল্যাবগুলোতে অনুবীক্ষণ যন্ত্র আছে কিন্তু মনবীক্ষণ যন্ত্র নেই!!!
এ জাতির মনে ৭৫এর পরেই নষ্ট ডোবার পাঁক লেগেছে...
তাইতো আজ আজিজেরা থেকে যায় অগোচরে আর ডাকবাবা আফ্রিদীরা হয়ে ওঠে আইডল!!! আইডল....
[তথ্যসূত্র: জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা- মেজর কামরুল হাসান ভূইয়া]