বাকশালী মুজিব, অত্যাচারী মুজিব, স্বৈরাচারী মুজিব.... আরো কত কথা বলে লোকে। জাতির পিতার কিছু ঘটনা জানার পরে ভেবে পায় না এই সাদাসিধা, হাসিখুশি লোকটা সত্যিই কি এত অত্যাচারী ছিল নাকি পরিস্থিতি, সময় তাকে স্বৈরাচারী করে দিয়েছিলো!
বাহাত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে। অনুষ্ঠান শেষে ১৪জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সবার হাতে উপহারস্বরুপ একটা করে বেঙ্গালুরু সিল্কের শাড়ি দিলেন তাদের বেগম সাহেবাদের জন্য। শাড়ি বিতরণ শেষ। এমনসময় বঙ্গবন্ধু এগিয়ে এসে তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের হাত থেকে ছোঁ মেরে শাড়িখানা কেড়ে নিয়ে জনাব জহুর আহমদ চৌধুরীর হাতে ধরিয়ে দিলেন। ইন্দিরা গান্ধী এটা দেখে অবাক হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, "মনোরঞ্জন ধর ব্যাচেলর মানুষ। তার শাড়ীর দরকার নেই। বেচারা জহুরের দুটি বউ। এক শাড়ি নিয়ে দুজনে টানাটানি করবে। তাই তারটি জহুরের আরেক বৌয়ের জন্য দিলাম।"
একদিন গণভবনে সান্ধ্য আসর বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় উত্তেজিত তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এসে উপস্থিত, "নেতা এই গাফ্ফার কি লিখেছে আমাে সম্পর্কে দেখেছেন? লিখেছে, আমি নাকি সরাইলের কুকুর।" বঙ্গবন্ধু তখন জানতে চাইলেন, কেসটি কি?
জানা গেল, আব্দুর গাফ্ফার চৌধুরী(দৈনিক জনপদের তৎকালীন সম্পাদক) তাদের পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেওয়ায় তথ্য মন্ত্রণালয়েের সমালোচনায় প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে "সরাইলের সারমেয়" অর্থাৎ সরাইলের কুকুর বলেছেন।
বঙ্গবন্ধু তখন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, " অন্যায় করেছো। তাহেরকে সরাইলের কুকুর বলা ঠিক হয় নি। জানো কত প্রজাতির কুকুর আছে? বিলেতি মেমসাহেবরা কোলে বসিয়ে ল্যাপডগকে আদর করে। আস্ট্রেলিয়ার রাখালের তাদের ভেড়ার পাল সামলায় শেফার্ড কুকুর লেলিয়ে দিয়ে। উত্তর মেরুর বরফের...............। আমার ভজহরির মত এমন ঘাড়ে গর্দানে নাদুসনুদুস, ফরসা, তবে হ্যা, রাগলে লালমুখো হয়ে যায়, একধরণের কুকুরও আছে বৈকি। সেগুলো হলো বুুলডগ, লালমুখো, মোটাতাজা শরীর।" আড়চোখে নাদুসনুদুস তাহেরউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা গলায় বললেন, "খবদার গাফ্ফার এরপর কারো চেহারা সুরত নিয়ে ঠাট্টা করবা না।"
বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল সাইকেলে চেপে স্কুলে যেত। বাকশালী রাষ্ট্রপতির ছেলের জন্য গার্ড ছিল না।
লোকটার সাথে কেউ দেখা করতে আসলে বলতো, " আরে তুই অমুক গ্রামের অমুক পোলা না? তো দাদা কেমন আছে, সেই ছোট্ট বোনটির বিয়ে হয়েছে?"
হ্যা, তিনি ব্যর্থ শাসক ছিলেন। তবে তার জন্য সে নিজে নয় তার বাঙালী হৃদয় দায়ী ছিল। সে অপরাধীদের খুব সহজে ক্ষমা করে দিতো। এই মুজিবই ইরাক থেকে ভিক্ষা করে তেল এনেছে, রাশিয়ানদের পটিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরের মুখ থেকে ডুবে যাওয়া জাহাজ পরিস্কার করিয়েছে, মাঠ ঘাটের মাইন পরিস্কার করিয়েছে, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ হতে তিনি সাহায্যকারী ভিনদেশী সেনাদের সরিয়েছেন। অনেক পাপীকে ক্ষমা করেছেন। সে সারাবাংলাদেশের মানুষকে একটি পরিবার হিসেবে ভেবে নিজেকে পরিবারের কর্তা হিসেবে ভেবে পুরো দেশটা চালানোরই ব্যবস্থা করেছিলেন। পরিবারের যাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তারা যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে তার কি করার আছে! সেতো নিজের লোকদের উপর কঠোর হতে পারতো না।
ধানমন্ডি থেকে বের হওয়ার সময় কোন এক দেওয়ালে বঙ্গবন্ধু এই লেখাটি দেখতে পান। " বঙ্গবন্ধু কঠোর হন।" তিনি সেদিন ভাবতে পারেন নি কার উপর তার কঠোর হওয়া দরকার।
আচ্ছা কথায় কথায় তাকে স্বৈরাচারী, বাকশালী বলি। আচ্ছা স্বৈরাচারী হয়ে সে তার পরিবারের জন্য কত অর্থ উপার্জন করেছিলো? কতজায়গার অর্থ সে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আদায় করেছিল?
ক্ষমতা ব্যবহার করে সে তার কতজন শত্রুকে হত্যার আদেশ দিয়েছিল?
আমরা সবাই জানি যা হয়েছিল সবই তার অগোচরে তার কাছের লোকদের দ্বারা। তবে কেন তাকে দোষী বলি? কেন তার হত্যাকে জায়েজ বলি? একটা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বিদ্ধস্ত, অভাবী দেশকে আস্তে আস্তে আলোর মুখ দেখানোর জন্য?
তথ্যসূত্র: মুজিব ভাই-এবিএম মুসা