somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান নিয়েছে চিলে, সবুজ চাঁদ উঠেছে বাড়ির ছাঁদে

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুজব পৃথিবীর সবখানেই ছড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা একটু বেশিই ছড়ায় চেইন বিক্রিয়ার মত এবং বিশ্বাস করার লোকেরও অভাব হয় না। এজন্য গুজব এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য আমরা জাতিগতভাবে একটা নোবেল আশা করতেই পারি...

পোলাপান সব ফোন দিয়ে বলে, "আজ সবুজ চাঁদ উঠবে। তুই দেখবি না?"
ফেসবুকে ঢুকে দেখি এইটা গুজব এবং বাঙালি গুজবকে বিশ্বাস করে বেশ জোরে লাফাচ্ছে।

দুইদিন আগেই তো ফেসবুকে দেখলাম যে আটদিন চাঁদ উঠবে না। চাঁদমামা তার মামার বাড়িতে বেড়াতে যাবে :)

এজন্য বুঝি চিলে কান নেওয়ার কবিতা লেখা হয়েছিলো। ছোটবেলা থেকে এই আঠারো বছরের জীবনে বহু গুজব আর প্রোপাগান্ডা শুনেছি। আমাদের গর্বের জায়গা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এমনকি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে নিয়েও অনেক অপপ্রচার আর গুজব শুনেছি এবং শুনছি।

আমার শোনা গুজব আর অপপ্রচারের মধ্যে কিছু তুলে দিলাম।
.
সেই সময় চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সেজো আন্টির বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে কেউ একজন একটা "কোরআন শরীফ" দিয়েছিলো।

তো কিছুদিন পরে একটা গুজব উঠলো যে, "কোন হসপিটালে নাকি একটা বাচ্চা হয়েছে যে হওয়ার পরেই ডাক্তারদের সালাম দিয়েছে। তার ভ্রু আর মাথায় কোন চুল নাই। ডাক্তারদের সে বলছে তার ভ্রু আর মাথার চুল কোরআন শরীফের ভিতরে আছে। তারপরে একদিন হঠাৎ করে সে হসপিটাল থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।"

শুরু হয়ে গেল খোঁজ খোঁজ। যারা কুরআন শরীফ খোঁজে তারাই দেখি চুল পায় আর সেই চুল পানিতে ভিজিয়ে পানি খায়! তো এবার আম্মু আমাকে আন্টির বিয়েতে পাওয়া নতুন কোরআন শরীফটা দিলো চুল খুঁজতে আর আম্মু নিজের পুরাতনটা নিল। তো দেখা গেল আম্মুর পুরাতনটাতে সেই মহান ব্যক্তির কেশ পাওয়া গেল কিন্তু নতুনটাতে কোন চুল টুল পাওয়া গেল না।
রাত্রে আব্বু বাসায় এসে চুলের কাহিনী শুনে আমারে বললো,
→ নতুনটাতে পেয়েছিস?
না।
→ তোর আম্মুরটাতে?
হ্যা, আম্মু পেয়েছে।
→নতুনটাতে তো জীবনেও পাবি না। কারণ নতুনটা তো এখনো কেউ পড়ে নি। পড়লে হয়তো পড়ার সময় মাথার থেকে মাঝে মাঝে যে চুল পড়ে তার দুই একটা পেইজের ভিতরে ঢুকে থাকতো আর আমরা সেই চুলকে আজ মহান ব্যক্তির চুল হিসেবে শনাক্ত করতে পারতাম যে গুলো পুরাতন কোরআন শরীফের সাথে হয়েছে। :)
.

খুব সম্ভবত ছয় বা সাত বছর আগে সকালে একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাদের চারটা বাঁশঝাড়ের প্রত্যেকটাতে অনেকগুলো কঞ্চির মাথা কাঁটা! কাহিনী কি? আমাদের বাসার কেউ জানে না।
পরে শুনি গ্রামের সবাই কঞ্চির মাথা কেঁটে "কোন পীর কর্তৃক ওহী দ্বারা" কঞ্চির মধ্যে নাযিলকৃত কুদরতি পানি পেট ভরে গলা পর্যন্ত পান করেছে। পরেদিন থেকে অবশ্য অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ঐ নোংরা কুদরতি পানি খেয়ে!
.
একদিন স্কুল থেকে এসে বসে আছি। হঠাৎ দেখি এক মহিলা আরো কিছু মহিলা আর একটা অর্ধেক আলু নিয়ে আম্মুর কাছে আসছে।
আমিও দেখতে গেছি।
তো মহিলা আম্মুকে বলতেছে, "দেখেন ভাবি, আলু রান্না করার জন্য কাটতেছিলাম হঠাৎ দেখি আরবী লেখা!"

আমি আলুটা হাতে নিয়েই ফিক করে হেঁসে ফেলছি।
আম্মু বলতেছে সেই মহিলাকে, "এই আলু যদি না খাও তাহলে ফেলে দিচ্ছি। কোন আরবী টারবী নাই। আলুতে দাগ ধরে এমন ডিজাইন হয়েছে।"
.
একসময় লিফলেট আর এসএমএস পেতাম। মহানবী (স.) কে কেউ স্বপ্নে দেখেছে অথবা তাকে কোন কবর থেকে উঠে আসতে দেখেছে। এই খবর কয়েকজনের কাছে না পাঠালে দুঃসংবাদ শুনতে হবে আর পাঠালে সুসংবাদ আসবে। যদিও কাউকে কোনদিন পাঠালাম না তবুও কিছুই হলো না!

ছোটবেলায় ২০০১-২০০৫ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন শুনতাম আওয়ামীলীগের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামীলীগের লোকেরা মালাউন কেউ সহীহ মুসলিম নয়। যদিও আজ পর্যন্ত সেই টুপি পরানো একটা ছবিরও প্রমাণ পেলাম না।

আমার এই উনিশ বছর বয়সের মধ্যে চৌদ্দ বছর ধরে শুনছি শেখ হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বেঁচে দিয়েছে বা দেবে। সবকিছু ঠিক করা আছে। বাংলাদেশ দখল করবে ভারত। যদিও আজও পর্যন্ত আমরা ভারতবাসী হতে পারলাম না।
.
সাঈদীকে চাঁদে দেখা নিয়ে আম্মু এক পরহেজগার মহিলারে বলেছিলো, "আমরা তো কেউ দেখতে পেলাম না। আপনারা দেখলেন কেমনে?"
সেই মহিলা উত্তর দিয়েছিলো "যাদের ইমান ঠিক নেই তারা ওসব দেখতে পায় না।"(বত্রিশটি দাঁত বের করা হাসির ইমো গপে)
যদিও মহিলা বলে নি সে সাঈদীরে নিজে চাঁদে দেখছে না দেখে নি।

.
বাঙালীর পিছনে বাঁশ না ঢুকলে এরা একই গুজব ছড়িয়েই যায়। যেমন সাঈদীরে চাঁদে দেখে লাফালাফি করে সহিংসতা করার পরে যখন পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ওদের খানিকটা লাশ পড়লো তখন থেকে ওরাও সাঈদীরেও চাঁদে দেখা বন্ধ করে দিছিলো :)
.
আর কতকাল চিলের পিছনে দৌড়াবে বাঙালি! কবে কানে হাত দিয়ে দেখতে শিখবে যে কান, কানের জায়গাতেই বহাল তবিয়তে আছে।

সহজ সরল মানুষগুলোর ধর্ম ভীরুতা আর বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অপপ্রচার আর গুজব বেশ ভালোভাবেই ছড়ানো হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২৩
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×