ভারতের গরিব মানুষ এখন গিনিপিগ
অন্ধ্রের আদিবাসী অধ্যুষিত খাম্মাম জেলার ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ১৫০০ মেয়েকে ২০০৯ সালে এইচ পি ভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা দেওয়া হয়েছিলো, সারভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে তা কতটা কার্যকর যাচাই করার জন্য। এটা ছিলো ভ্যাকসিনটি নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অঙ্গ। টিকা দেওয়ার পরপরই বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারা যায় ছ’জন। এরপর এই পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ এই বিপজ্জনক পরীক্ষার নীরব মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে তাদের বাবা-মার সম্মতি নেওয়া তো দূরের কথা এমনকি তা তাদের জানানোও হয়নি। অথচ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যাদের উপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে তাদের অনুমতি পাওয়া। এজন্য সংস্থাটিকে যাদের শরীরের উপর পরীক্ষা চলবে তাদের সঙ্গে বিধিসম্মতভাবে চুক্তি করতেই হয়। এতে খরচও বিপুল। সেই খরচ এড়াতে ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের বড়ো কর্তাদের সঙ্গে বহু অঙ্কের টাকার লেনদেনে বহুজাতিক ওষুধ ব্যবসায়ীরা ব্যবস্থা করে ফেলে। কোনোও গরিব এলাকার মধ্যে থেকে রাতারাতি খুঁজে নেওয়া হয় পরীক্ষার জায়গা। সরকারও তাতে মদত দেয়। এই মদতের পরিণতিতে মানুষের শরীরে ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে দেশে মৃত্যু সংখ্যাও বাড়ছে। ২০০৬-এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বলি ছিলেন ১৩২জন, ২০০৭-এ ৬৩৭জন এবং ২০১০-এর জুন মাস পর্যন্ত এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬২জন। অথচ এক্ষেত্রে যে তদন্ত হয় তাতে বহু ক্ষেত্রেই ফল হিসাবে জানানো হয় ট্রায়ালটির সঙ্গে মৃত্যু বা দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
এই মদত দেওয়ারও নানানরকম পন্থা আছে। প্রথমেই বড়ো অঙ্কের টাকার টোপ দিয়ে মৃত বা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ির লোকের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়। তারপর রাষ্ট্র বলে, এটা ঠিক ট্রায়াল নয়, এটা আসলে একটা স্টাডি হচ্ছিল। রাষ্ট্রের এহেন তৎপরতায় বহুজাতিকরাও খুশি, কারণ তাদের লক্ষ্য তো একটাই, তাড়াতাড়ি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যথটা সম্ভব কমিয়ে বাজারে দ্রুত ওষুধটি আনা। ভারতে তো সেই সুবিধাগুলিই তারা পাচ্ছে। ইউরোপের কোনোও দেশে হৃদরোগের কোনোও ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খরচ ভারতের থেকে ২০ গুণ বেশি। আর ট্রায়ালটি মার্কিন মুলুকে হলে এই খরচ দাঁড়াবে ৬০ গুণ। আর এতো সস্তার জায়গা বলেই ২০০৫ সালে যখন আমাদের দেশে মাত্র ১০০টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হতো তার জায়গায় এখন সেই সংখ্যাটি ১০০০-এর বেশি।
কে নেই এখানে? জনসন অ্যান্ড জনসন থেকে গ্ল্যাক্সো সবাই আছে। কোনোও ওষুধ বা রোগ নির্ণয় পদ্ধতি কতটা কার্যকর, হাতেকলমে পরীক্ষা করে তা জানার এই বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলির কাছে ভারত ভূখণ্ড এক আদর্শ জায়গা। ইতোমধ্যেই অনেক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি তাদের তৈরি ওষুধগুলির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য ভারতে তাদের সংস্থা খুলেছে। ভারতে এখন ট্রায়াল চালাচ্ছে ১৩৯টিরও বেশি সংস্থা।
মানুষের কী উপকার হয়েছে জানা নেই, কিন্তু ওষুধ ও রোগ নির্ণয় নিয়ে পরীক্ষা চালানোর ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ এখন সামনের সারিতে। কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন পরিষেবা প্রদানে আমাদের দেশের ব্যবসা ২০০৮ সালে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০১৫-তে এটা দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ওষুধের বাজারে প্রতিযোগিতা এখন তীব্র থেকে তীব্রতর।
এর পরশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতের মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও গবেষণা পদ্ধতির উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কম, যেখানে মানুষকে নির্বিচারে সহজেই পরীক্ষার মাধ্যম করে তোলা যায়, সেখানে ট্রায়াল কতটা সঠিক হচ্ছে সেই প্রশ্নও উঠেছে। পরীক্ষা পদ্ধতির স্বচ্ছতা, গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল নিয়েও বিতর্ক আছে। অভিযোগ উঠেছে, মানুষের উপর ওষুধ-বিষুধ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে হেলসিঙ্কি ডিক্লারেশনে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিলো, এক্ষেত্রে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ হলো, যেহারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ব্যাপারে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বাড়ছে না। টাকার জন্য বা নিরুপায় হয়ে যারা নিজেদের শরীরে এই পরীক্ষা চালাতে দিচ্ছে তারা জানেই না ব্যাপারটা কী? অধিকাংশই নিরক্ষর, লিখিত সম্মতিদানের প্রশ্নও নেই। এটা চূড়ান্ত অনৈতিক এবং বিপজ্জনক।
আলোচিত ব্লগ
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন