somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম নিশ্চুপ দ্বীপে...১

০৬ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ফেসবুকের পোকা, কাজের মাঝে একটাই বুঝি- যত্র-তত্র ঘুরে বেড়ানো আর সেই বেড়ানোর যত খুশী ফটো আপলোড করা। অনেকদিন কোথাও যাওয়া হচ্ছে না, অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। এমন সময়ে একদিন ফেসবুকে দেখি জু-১ এর স্ট্যাটাস- নিঝুম দ্বীপে যাইতেসি। চুপচাপ এই দ্বীপটাতে যাওয়ার আমার বহুত দিনের শখ, তাই আমিও কমেন্ট দিয়ে দিলাম- আমারে লইয়া যাইস। দুইদিন ধরে দেখি জু-১ এর কোন জবাব নেই, মন-মেজাজ খারাপ। এর মাঝেই দেখি বুধবার গহীন রাতে (৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯) জু-১ ফেসবুকে- দিলাম ঝাড়ি। ধমকের চোটে সে ভয় পেয়ে ফোন দিল- দোস্ত, মাইন্ড করিস না, চল। বিষ্যুদবার মানে আগামীকাল সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ।আমরা পাঁচজন যাইতেসি, তুই সহ ৬ জন। মনে মনে পূর্ণ যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপর দিয়ে ঝাড়ির উপর রাখলাম, একটা অস্বস্তিও অবশ্য ছিল মনে- ছুটি নিই নি আর জু-১ বাদে বাকীদের কাউকে আমি চিনি না, নাম পর্যন্ত শুনি নি আগে। আমার কাছে যদিও নিঝুম দ্বীপে যাওয়াটাই বড়, কিন্তু অন্যদের অস্বস্তি হতে পারে। জু-১ এর সাথে শেষ যে কথা হল- কেউ যদি আমি যাওয়ার কারণে বেগড়বাই করে তাহলে চ্যাংদোলা করে তাকে সোজা বুড়িগঙ্গায়।

আমি খুশি মনে রাজী হয়ে গেলেও ইতস্তত করছিলাম যাওয়ার আগের মুহূর্তেও। ভাবছিলাম – নানা ফন্দি ফিকির করছিলাম, ছুটি না নিয়ে গেলে এসে কী করব। এর মাঝেই ম্যাডামের এস এম এস- শনিবার সকাল ১১ টায় মিটিং, মেজাজ টা গেল খিঁচড়ে। আর তাই আমার জেদ চেপে গিয়েছিল আরো- যাবোই, নিজেকে কয়েকদিনের জন্য অসুস্থ বানিয়ে ফেলব দরকার হলে। আমার এক কলিগ যখন শুনল অচেনা পঞ্চ-পান্ডবের সাথে আমি না জেনেশুনেই যাত্রার প্ল্যান করেছি, চোখ কপালে তুলল। কিন্তু অচেনা-অজানার দিকেই যে আমার সকল আগ্রহ আর জু-১ আমাকে আস্বস্ত করল এই বলে যে- আমাদের ঘন ঘন চা পান ব্যতীত কোন ধরনের বদ অভ্যেস নেই, তোর যদি চা পানে কোন আপত্তি না থাকে তো চলে আয় তাড়াতাড়ি, কারণ আমি সবাইকে তোর যোগদানের বার্তা জানিয়ে দিয়েছি। মাছের কী কখনো জলে আপত্তি থাকে?- তাই সংক্ষিপ্ত ব্যাগ গুছিয়ে অজানার পথে পা বাড়ালাম।

সদরঘাট পৌঁছে দেখি চারজন অলরেডী চলে এসেছে, টার্মিনালের বাইরে- জু-১,২,৩ আর অ। ব (একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কলিগ এবং তাকে আমি কখনো দেখি নি) এক্কেবারে রাতের খাবার নিয়ে আসবে, লঞ্চেই দেখা হবে ওর সাথে। ভিতরে ঢোকার আগেই দু’কাপ চা হয়ে গেল- জু-১ এর কথার প্রমাণ পাওয়া গেল।

লঞ্চে উঠেই সোজা তিনতলার খোলা ডেকে। আমার জন্য একটা কেবিন নেওয়া হলো আমার আপত্তি সত্বেও। আমি তো জানি,এই পূর্ণিমার আলোয় ডেক ছেড়ে আমি সারা রাত নড়ব না। চাঁদের আলোয় ওরা তাস খেলা শুরু করল, আর আমি জু-৩ এর মোবাইল দিয়ে আবারো ফেসবুকে, স্ট্যাটাস আপডেট করলাম- চাঁদের আলোয় আমরা কয়েকজন। জু-১ পঁচানো শুরু করল, বলল- স্ট্যাটাস বদলাস, না? তোর আর খেয়ে দেয়ে তো কোন কাজ নাই, কী আর করবি! লেখ- চাঁদের আলোয় কয়েকজন ধইনচা। মানুষ যে অপদার্থ বোঝাতে নিজেদেরকে ধইনচা সম্বোধন করে এই প্রথম শুনলাম।

অনেক রাত পর্যন্ত চলল আড্ডাবাজী- এরাও দেখি আমার মতো সব পাঙ্খা বাহিনী, চরম ঘোরাঘুরি করে। অ ভাই (আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র, বাকীগুলো আমার ব্যাচমেট) তো হিসেব রাখছেন, পি এইচ ডি করতে যাওয়ার আগে উনি বঙ্গদেশের ৬৪ টি জেলা ঘুরে শেষ করে যেতে চান। ডেকের মানুষজন দেখে মজা পাচ্ছিলাম, দু’টো টিনএজার মেয়ে মোবাইল ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল আর নিজেদের মধ্যে প্রেম বিষয়ক আলোচনা চালাচ্ছিল (অবশ্যই আমাদেরকে শুনিয়ে - আমরা তো হেসে কুটিকুটি, বাচ্চা বাচ্চা পোলাপানের বাচ্চামি কান্ড-কারখানা দেখে। ওরাও আমাদের দেখে ব্যাপক আনন্দ পাচ্ছিল আর আমাকে দেখে একটুখানি দ্বিধান্বিত, মনে হয় ছেলে না মেয়ে ঠাহর করতে পারছিল না।











কেবিন থেকে বিছানা বালিশ নিয়ে এসে ডেকেই শয্যা পাতলাম, যদিও ঘুম আসছিল না লঞ্চের ভেঁপুতে। সূর্যোদয় দেখার তাড়নায় ভোরের দিকে একটু ঘুম ঘুম লাগলেও তাকে বর্জন করলাম- অদ্ভুত সুন্দর সেই দৃশ্য, নদীর বুকে সূর্যোদয়। সকালের দিকে আমরা পৌঁছলাম মনপুরায়- জু-১ জানাল এই জায়গার নামেই নাকি সেই মুভিটার নাম যার শুটিং হয়েছে হাতিয়ায়। একটা ব্যাপার এখানে খুব চোখে পড়ার মতো। শয়ে শয়ে নৌকা ঘাটে এবং এদের প্রত্যেকটার ভিন্ন ভিন্ন রঙ এর পাল। পরে অবশ্য খেয়াল করলাম ওগুলো আসলে পাল নয়, নিশান- এক একটা নৌকার জন্যে তাই তা আলাদা। ক্যামেরায় সেই রঙ এর প্রাচুর্য্য ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, অপার্থিব সৌন্দর্যের আধার আমার দেশ! অদ্ভুত শান্তি নিয়ে হাতিয়ায় পৌঁছলাম কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই শান্তি বিদায় নিল।













হাতিয়া থেকে সপ্তাহে একদিন ট্রলার যায় নিঝুম দ্বীপে, ১ অক্টোবর সেই নির্ধারিত দিনটি ছিল না বলে আমরা হাতিয়া থেকে প্রথমে চাঁদের গাড়ী আর তারপর নৌকায় করে ঠিক কয়টার দিকে পৌছঁলাম নিঝুম দ্বীপে মনে নেই। ঢোকার মুখেই দেখি অনেকগুলো চার পেয়ে জীব পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য, এক দেখাতেই ঠিক গরু বলতে সাহস করলাম না যেহেতু এর আগে কখনো গরুকে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি নি। যদিও গরু, সাইকেল এবং আমরা একই নৌকায় দ্বীপে এসেছি।





গ্রামের মধ্য দিয়ে হাঁটা পথ বড় সুন্দর। একদম নিশ্চুপ চারধার- অনেক দূরে দূরে কিছু বাড়ীঘর। মনে হলো এত দিনে বুঝি সত্যিকারের গ্রাম দেখছি। কোন যানবাহন নেই, আমরা হাঁটছি আর হাঁটছি। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে বাজারে পৌঁছে শুনলাম- এ নাকি সবে দ্বীপের শুরু, এখনো বহুত দূরে আমাদের গন্তব্য। আর এর মাঝেই আমাদের জু-২ তার কাঁধের বিশাল হ্যাভারসেক নিয়ে কাহিল!













যাই হোক বাজারে রিকশা পাওয়া গেল। অনেকদূর রাস্তা রিকশায় গিয়ে আমাদের এক জায়গায় নামিয়ে দিল। এখান থেকে জঙ্গলের শুরু, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এখন নাকি আমাদের আবার হাঁটতে হবে।দূরে দেখা যাচ্ছিল রূপালী সমুদ্রের রেখা। অনন্ত সময় ধরে কেবল হাটঁছি। সবাই বিরক্তি প্রকাশ করলেও আমার ভালোই লাগছিল। আমি তো ঢাকার রাস্তায় হেঁটেই আনন্দ পাই, আর এতো অতীব সুন্দর সবুজ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে রাস্তা। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, এত হাঁটার ধকল আমার সহ্য হলেও আমার স্যান্ডেলের হলো না। সে ছিঁড়ে যাবে বলে বদ্ধ পরিকর হয়ে মুখ বাকিঁয়েছে। অগত্যা তাকে হস্তে নিয়ে আমি খালি পায়েই হাঁটা শুরু করলাম। এক প্যাকেট ম্যারী বিস্কুট দিয়ে ছয়জনের দুপুরের আহার চালিয়ে যখন প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছুলাম- তখন বাজে মনে হয় চারটা কি পাঁচটা। কোলাহল ছেঁড়ে নির্জনে পৌঁছাতে একটু বেশীই কাঠখড় পোহাতে হল।

এর পর... নিঝুম নিশ্চুপ দ্বীপে...২ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১৭
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×