somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানালি থেকে লাদাখের পথে: (তৃতীয় পর্ব- দ্বিতীয় ভাগ)

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম ভাগঃ মানালি থেকে কেইলং

দ্বিতীয় ভাগঃ কেইলং থেকে লাদাখ


এক

কেইলং এর শীতে ভোর চারটেতে উঠে যাত্রা করা যে কী কষ্টের! কিন্তু উত্তেজনায় কিছুই টের পাই নি; HPTDC এর নাশ্তার প্যাকেট রেখে দিলাম পরে খাবো বলে- ভোর চারটেতে তো আর নাশ্তা করা যায় না। যাই হোক, কেইলং থেকে আমাদের সাথে সহযাত্রী হল আমেরিকান তিন নাগরিক। আমি দমে গেলাম কারণ বাসের পিছন দিকে আমার ছবি তোলার জায়গাটা হাত ছাড়া হয়ে গেল /:) X((


দুই

উপায়ান্তর না দেখে ড্রাইভারের পাসের ডেঞ্জারাস সীটে (আমাদের দেশে যেগুলো মহিলা সীট নামে খ্যাত) যাওয়ার চিন্তা করলাম যেখান থেকে ভিউও ভালো পাওয়া যাবে; চাই কিছু ছবিও নেওয়া যাবে। আমার সংগী সেখানে বিশ্বজিৎ দা আর তার ভাতিজা (কা-কু কা-কু করে যে অস্থির করে ফেলল!!), ওদের ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে দেওয়ার পর আমার সাথে একটু খাতির জমল যার সুবাদে ওদের কাছ থেকে একটু পর পর লজেন্স পাচ্ছিলাম। আর সাথে বোনাস হিসেবে বাবু্র (ওই মুছিয়াল) ন্যাকামী- 'কা-কু, কা-কু, হোমওয়ার্ক টা কী রকম করেচিলুম বল তো; বাবা তো বলল এতটুকু পড়া করলে আমি শিওর ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে যেতুম!!' বাবু সত্যিই অনেকটা হোমওয়ার্ক করেছিল- কখন কোন পাস আসছে , কী নদী বয়ে চলেছে- সবই পটপট করে বলে যাচ্ছে হাতের একটা মস্ত খাতা থেকে (ঠিক স্কুলের বাচ্চাদের মতো :P)। এরও দেখি আমার মতো ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে কাজ করার স্বপ্ন! মরি মরি! পার্থক্য একটাই এর পরিচিত আছে সেখানে- মনে হয় জুটিয়ে নিতে পারবে; ভাবছিলাম খাতির টাতির লাগাব নাকি ওই মুছিয়ালটার সাথে!;) সেই সুবাদে যদি আমার স্বপ্ন পূরণ হয় তো ক্ষতি কি! :P


তিন


চার

আমার ছটফট করে ছবি তোলা দেখে ওরা আমাকে সবচেয়ে ভালো জায়গাটায় বসতে হেল্প করল, মুছিয়ালটা দেখি আমায় 'তুমি' করে বলছে X( (শিওর আমাকে বাচ্চা মেয়ে ভেবেছে, সব জায়গায় লোকে আমাকে প্রথম দেখায় যা ভাবে!)। একটু পর যখন বিশ্বজিৎ দা'র কাছ থেকে জানতে পারল আমার প্রফেশান; বেশ দ্বন্দ্বে পড়ে গেল- ভাববাচ্যই মনে হয় চালানোর চেষ্টা করল B-);)


পাঁচ


ছয়


সাত


আট

মাঝে একটা জায়গায় আমরা থামলাম এবং সত্যিকার দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের অসুবিধাটা বোধ করলাম। চা এর দোকান থাকলেও কোন টয়লেট নেই :-*, সবাই না কি প্রকৃতির বুকেই প্রাকৃতিক কর্মটি সেরে ফেলে! ব্লাডার ফেটে গেলেও আমরা সেই পরিমাণে প্রকৃতিপ্রেমিক হতে পারি নি।:| এই পাসটার নাম মনে হয় ছিল লাচুলুং লা (১৬,৫৯৮ ফুট)।

বাসে উঠে আমি আবারও ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, বিশ্বজিৎ দা আর ওই মুছিয়ালটার সংগী হলাম। রাস্তার দু'পাশের সৌন্দর্য দেখে আমি তো কাইত; আমার ক্যামেরার ব্যাটারী খতম হয়ে যাওয়ায় শি ভাই (উনি ততক্ষণে মাথা ব্যাথার শিকার)এর ক্যামেরার শাটার ফেলছি ঘন ঘন। কী যে রাস্তা! বেঁকে-বুঁকে কোনমতে নিজের মাথা বাঁচিয়ে একটুখানি জানালার ফাঁক দিয়ে ক্যামেরাবাজি করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম বিশ্বজিৎ দা পানি চাচ্ছেন- অক্সিজেনের অভাব টের পাচ্ছেন। হাই অল্টিচ্যুডে আমিও কেমন যেন একটু মাথা-ব্যাথা বোধ করছিলাম; মনে হচ্ছিল- অনেক কেরদানি দেখিয়েছি এখন নিজের জায়গায় গিয়ে একটু মাথাটাকে সীটে হেলান দরকার, রাতেও তো ঘুম হয় নি (পেটে গ্যাস হলো মনে হচ্ছে!), কিন্তু সেই সৌন্দর্যের সম্মোহন থেকে বের হতে পারি নি। ভাবছিলাম আরেকটা পাসে বাস থামলেই আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো আপন জায়গায় ফিরে যাব।ততক্ষণে আমার বেশ জোরেসোরেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল (ভয় পাচ্ছিলাম- এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় না কি রক্তক্ষরণ হয়ে মানুষ মারাও যায়- আমার ভয় মৃত্যুর নয়, ট্যুরে অন্যদের অসুবিধায় ফেলার।)


নয়


দশ


এগার


বার। ইনারা মোটর সাইকেলে করে লাদাখ গমনের জন্যে বের হয়েছেন


তের। সাহস দেখেন, সাইকেলে কইরা নাকি লাদাখ যাইব!:-/


চৌদ্দ

টাগলাং লায় (১৭,৪৭০ ফুট) বাস থামার পর জানি না- অল্টিচ্যুড সিকনেস অথবা রাতে ফর্ম করা গ্যাসের জ্বালায় বমিও করে ফেললাম (এরকম আমার কখনো হয় না /:) :!> :#> ); একটু লজ্জাও পেলাম; খাবার অর্ডার করেও খেতে পারলাম না। এবার আর ভুল করলাম না- বাসে উঠেই সোজা নিজের সীটে। অক্সিজেন ট্যাবলেট খেয়েও অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারলাম না মস্তিষ্কে। একটু পর পর ক্যামেরা চালাই মাথা উঁচু করে, আবার নেতিয়ে যাই; তার ফাঁকে একটু করে বমি করি (পেটে তো কিসসু নাই; অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্যে যে পানিটা খাই, সেটাই বের করে দিই)। দুঃখিত আমার বমি কথনের জন্যে, ভয় পাচ্ছিলাম আমার সহযাত্রীরা হয় তো আমায় পচাবে- খুব তো তাফালিং করলা, কিন্তু আমাদের মধ্যে বমি করলা তো একমাত্র তুমিই; লজ্জায় মুখ লুকাবো কোথায় ভেবে পাচ্ছিলাম না। ক্যালকেশিয়ান গ্রূপও কাইত; কেবল ওই মুছিয়ালটা বাদে :-& /:) X(


পনের


ষোল


সতের


আঠার


ঊনিশ

এত কিছু হয়ে গেলেও আমি Tso (লেক ) Kar এর ছবি তুলতে ভুললাম না।এভাবে চলতে থাকল। কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করা হল- আ---র কতক্ষণ! সেই অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত সৌন্দর্য যেন আর সহ্য হচ্ছিল না। কিন্তু ওরাও তো জানে না! ল্যান্ড স্লাইডে রাস্তা নিশ্চিহ্ন হওয়ায় ওই রাস্তায় ওরা ওই প্রথম যাচ্ছে। আমাদের মহান ড্রাইভার টানা প্রায় বিশ ঘন্টা ড্রাইভ করে রাত দেড়টায় আমাদের লেহ শহরে পৌঁছে দিল।


বিশ। কার লেক


একুশ। লাদাখ, দ্য গেট অফ ইন্ডিয়া

(তৃতীয় পর্বের সমাপ্তি)

ওভারভিউঃ শিমলা-মানালি-লাদাখ ট্যুর

প্রথম পর্বঃ শিমলা

দ্বিতীয় পর্বঃ মানালি

তৃতীয় পর্ব-প্রথম ভাগঃ মানালি থেকে কেইলং
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৪৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×