somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুবাই থেকে ফিরে...শেষ পর্ব

২৩ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুবাই মেরিনা

দুবাই থেকে ফিরে ৩
দুবাই থেকে ফিরে ২
দুবাই থেকে ফিরে ১

২৭ তারিখ রাতে দুবাই এ আমি প্রথমবারের মতো দেখলাম থ্রী ডি ম্যুভি- ট্রন লেগাসী! রাত দুটোতে ম্যুভি দেখে বেরিয়ে এক্সপ্লোর করলাম রাতের দুবাই, কেমন যেন এই কদিনেই জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেলাম সাংঘাতিকভাবে; এখানে একা একা চলাফেরার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, নিয়মতান্ত্রিকতা, স্থাপত্য আর সর্বোপরি শহরের প্রতি এখানকার মানুষের এটিচ্যুড- অনেক অনে-ক কিছু শেখার আছে আমাদের এই শহরের কাছ থেকে!

পরদিন শুক্রবার দুবাই এ আমার শেষ দিন- ফুজাইরা যাওয়ার কথা থাকলেও বাদ দিলাম ওই প্ল্যান; দুবাইতেই বেশ কিছু জায়গা দেখা বাকী রয়ে গেছে ওগুলোই দেখব সারাদিন রিলাক্সড হয়ে ঘুরে ফিরে একা একা! রাতে রাসেল ভাইকে ফোন দিলাম, দুবাই এসে এলাকার ভাইয়ের সাথে দেখা না করে চলে যাবো তা কেমন করে হয়। রাসেল ভাই সকালে আসলেন দেখা করতে এবং এতোদিন কেন উনি আমাকে সময় দিতে পারেন নি তার জন্যে স্যরি বলে বলে শেষ হয়ে ২৮ তারিখ সারাদিন আমাকে দুবাই দেখাবেন বলে ঘোষণা দিয়ে দিলেন! আমি যতোই উনাকে নানান কথা বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা করি উনি ততোই তার সময় না দেওয়ার জন্যে অনুতপ্ত হন। বুঝলাম, পড়েছি মোগলের হাতে; কিন্তু সকালের খানা খেতে যখন উনি আমাকে জোর করেই ট্যাক্সিতে চড়িয়ে কে এফ সি তে নিয়ে গেলেন আর বললেন সারাদিন ট্যাক্সিতেই চড়াবেন (উনার গাড়ী ওয়ার্কশপে বলে বার বার দুঃখ প্রকাশ করলেন)তখন আ্মি একেবারেই নেই, আমার শেষ দিনটা একা আনমনে ঘোরার পরিকল্পনার বাড়া ভাতে ছাই পড়ল দেখে নিশ্চুপই হয়ে গেলাম!


মেরিনা বীচে

তবে ট্যাক্সিতে শেখ যায়েদ রোড ধরে যেতে যেতে অন্য রকম ভিউ পেলাম দুপাশের; ছবি তুলি বলে আমি সব সময়ই বসি গাড়ীর সামনে! দু পাশে উঁচু উঁচু ভবনের সমুদ্র কেটে কেটে সামনে যেতে ভালো লাগছিল; গন্তব্য দুবাই মেরিনা! সমুদ্রর মাঝে ঢুকে যাওয়া দুবাই মেরিনায় হেঁটে বেড়ালাম এ মাথা থেকে ও মাথা- গ্র্যান্ড আর আনরেস্ট্রিক্টেড প্রবেশ পথের সব ভবন পথচারীকে নিজের মাঝে ডেকে নিবে বলেই যেন মাথা উঁচু করে দু হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে! মেরিনা বীচ আর মেরিনা মলে ঘোরাঘুরি শেষে চলে এলাম পাম আইল্যান্ডে! এর আগে রাতের পাম জুমেইরাহ দেখেছি, আজ ঝকঝকে দিনের আলোয় আটলান্টিস থেকে পাম গাছটার ঠিক মাঝ বরাবর মেট্রোতে চড়ে এলাম নাখীল পর্যন্ত, আর দুপাশে দেখলাম তার পাতায় গড়ে উঠা ইমারত আর ফাঁক দিয়ে দিয়ে সমুদ্রের পানির বয়ে যাওয়া! পাম জুমেইরাহর কনস্ট্রাকশন শেষ হয় নি এখনো রিসেশানের কারণে বন্ধ আছে! কিন্তু সেই অসমাপ্ত পাম গাছটিই অনেক সৌন্দর্য আর অনেক গল্পের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! নাখীল থেকে ট্যাক্সিতে চলে এলাম এমিরেটস মল এর স্কিওয়ার্ল্ডে, কৃত্রিমভাবে তৈরী একটুকরো বরফের দেশ দেখে বড় আনন্দ পেলাম!


দুবাই মেরিনা


মেরিনা মল


দুবাই মেরিনা আর মূল ল্যান্ডের মাঝের সমুদ্রের অংশ


পাম জুমেইরাহ থেকে বুর্জ আল আরব


আটলান্টিস


আটলান্টিস হোটেলের ভিতরে


স্কিওয়ার্ল্ড @এমিরেটস মল

এইবার আর ট্যাক্সি না, রাসেল ভাইকে নিয়ে জোর করেই আর টি এ এর কার্ড করিয়ে এমিরেটস মল থেকে চড়লাম মেট্রোতে আর মজার ব্যাপার হলো উনি দুবাইয়ে থেকেও এর আগে কখনো মেট্রোতে চড়েন নি! দিন শেষে দেখা গেল আসলে আমিই উনাকে দুবাই ঘুরালাম কারণ যত জায়গায় আমি উনাকে নিয়ে গেলাম তার কোনটাতেই আগে উনি যান নি, কেবল নাম শুনেছেন! মেট্রোতে এসে দেইরা সিটি সেন্টারে নেমে আমরা গেলাম দুপুরের খানা খেতে দিল্লী দরবারে!
খানা-দানার পর রাসেল ভাই যা করলেন তাতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম; মেরিনা মল বা এমিরেটস মলে জোর করে উনাকে নিরস্ত করলেও এবার আর পারলাম না। একগাদা গিফট কিনে দুহাত বোঝাই করে উনি আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে গেলেন!

দিনের শুরুতে যতোটা মেজাজ খারাপ লাগছিল, শেষে ঠিক ততোটাই মন ভালো হয়ে গেল, মনে হলো আমার কপালটা সত্যি অনেক ভালো নইলে রাসেল ভাইয়ার মতো কারো সাথে পরিচয় হয়!এ বোধ হয় বিদেশের মাটির গুণ, দেশে জীবনে যাকে দেখি নি, কথা বলি নি বিদেশ বিঁভূয়ে কত দ্রুত সে কত আপন হয়ে যায়!বিদায় নেওয়ার আগে রাসেল ভাই ঠিক বড় ভাইয়ের মতো করে নানান উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি বলতে ভুললেন না যে, এই রকম উরা ধুরা জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও ভালো কাজ নয়! এই বয়সে বিবাহ না করা খুবই ভুল কথা! দেশে শুনে তো গা সহা হয়ে গেছে, সুদূর দুবাইয়ে গিয়েও এ ধরনের কথা শুনে তো আমি হেসেই খুন!


নিজে কিনতে পারি না তো কী হয়েছে ছবি তো তুলতে পারি!

সাঁঝবেলা শুরু হলো রাতের দুবাই ঘোরা, আজ শেষ রাত! কিছুতেই ঘুমানো চলবে না, গতরাতেও না ঘুমিয়ে চষে বেড়িয়েছি, ঢাকায় তো আর কখনো সারা রাত চাইলেই রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বেড়ানো যাবে না! হিমুই পারে না আর আমি কোন ছাড়!বাসে আর মেট্রোতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর কারণে শেষ দিন দেখলাম বেশ অনেক টাকা রয়ে গেছে হাতে, আর এতোদিনে আমি ১ দিরহামকে ১ টাকা ভাবতে শুরু করে দিয়েছি!বেশ তাড়াহুড়া করেই অনেক শপিং সেরে ফেললাম!মলগুলোতে এতোদিন ঘুরে তো কেবল স্থাপতিক গুণ-দোষ দেখেছি, গিফট তো কেনা হয় নি কারো জন্যে কিছু!

আমি আর রফিক ভাই টো টো করে ঘুরে বেড়ালাম শহরের এ মাথা, ও মাথা! আমাদের মিশান ছিল- যে খানাগুলো আমি এতোদিন খাই নি কিপ্টেমী করে বা অন্য কোন কারণে সেই সকল খানা চেখে দেখা! আমি তো ভাইয়াকে বললাম স্টারবাক্স এর কফি তাকে খাওয়াবোই খাওয়াবো, যদিও ম্যাকডোনাল্ডস এ আমি একাই খেয়েছি।শেষ রাতে বাকী ছিল কেবল হাতেমের শর্মা! ওটা কিনে প্যাক করে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম আমরা জেটির পাড়ে, তারপর পা দুলিয়ে বসে খেলাম প্রাণভরে!বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল আজ রাতটাই দুবাইয়ে আমার শেষ রাত!


দুবাই এয়ারপোর্ট

পরদিন এয়ারপোর্টে ভাইয়া যখন আমার মাথায় হাত রেখে আদর করছিলেন (আমি বাবা আর মামা বাদে সাধারণত কাউকেই আমার মাথায় হাত রাখতে দিই না!) আর বলছিলেন- দেশে ফিরে কি আমায় ভুলে যাবে, ভাইয়া? আমি কিছু বলি নি, বিদায় বেলায় কখনোই আমি আবেগাপ্লুত হই না, অন্যদের অশ্রুসজল চোখ আমাকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলে তাই যথাসম্ভব সি অফ সীন আমি এভয়েড করি! শুধু এটুকু বলতে পারি- আমি ভুলে গিয়েছিলাম কোন কনফারেন্সে এটেন্ড করতে আমার দুবাই আসা, মনে হচ্ছিল এই দেশে চাকুরী করা ভাইয়ের কাছে ছুটিতে বেড়াতে এসেছিলাম, ছুটি ফুরিয়ে গেছে; বোনকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছে ভাই! বোনটা নিতান্তই হতচ্ছাড়া, তাই তার চোখে পানি নেই কিন্তু মনে মনে সে ভাবছে কত বড় কপাল করে জন্মালে এমন ভাই পাওয়া যায়!

অঃটঃ এইবার সত্যি সত্যি এই লেখাটা শেষ হইসে! এই উপলক্ষ্যে মিলাদ দেওয়া হইব! :#)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৭
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×