somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবানে একদিন: ২য় পর্ব

২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ভ্রমণপোস্টের আগেরটা আপনাদের ভাল লেগেছে বলে আমি আনন্দিত । আগের পর্বের লিঙ্ক - বান্দরবানে একদিন (১ম পর্ব) । এবারে আসুন আমরা আবার ঘুরতে শুরু করি ।

লেকের জল দেখতে দেখতে আমরা গত পর্ব শেষ করছিলাম । এবারে আমরা বগা লেক থেকে আরো সামনে আগাতে থাকবো । পথের দৃশ্যাবলী অতি মনোরম । আসুন হাটতে শুরু করি । দেখি সামনে আমাদের দুচোখ ভরাবার জন্য প্রকৃতি কি পসরা সাজিয়ে বসে আছে ।



হাটতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই আমরা এসে উপস্থিত হলাম দুই পাহাড়ের মাঝখানে । এখানে দু পাশে পাহাড়চূড়ো আর আমরা মাঝে দাড়িয়ে । খুব সুন্দর লাগছিল দেখতে ।



আরেকটু সামনে যাবার পরেই আমি খুবই আনকোরা একটা ফুল দেখলাম । যদিও ফুল বিষয়ে আমার জ্ঞান প্রায় শূণ্যের কোঠায় কিন্তু তবুও আমার মনে হয় অনেক পরিবেশ বিজ্ঞানী এটা আগে দেখেননি । আপনারা কেউ যদি জানেন, তো আমাকে বলুনতো কি নাম এর ??



এরপরে আমার হাটতে থাকলাম বেশ খানিকটা পথ । প্রবেশ করলাম বনের গহীনে । কি যে মনোরম লাগছিল । স্বপ্ন পথের পথিকেরা বোধহয় এই পথেই হেটেছিল । আমার মনে পড়ে যায় ওদের কথোপকথন ।



যদি কোনদিন পৃথিবীর পথ ধরে-
হেটে চলতাম, এই আমরা দুজনে
অনাদিকাল ব্যাপী! কপোতের মতন,
ডানা দুটি মেলে দিয়ে আদিগন্তে!


আমি সত্যিই সেদিন কবিতাটা নতুন করে উপলব্ধি করেছিলাম । যাই হোক, হাটার গতি খুব বেশি দ্রুত ছিল না কারণ আমি প্রচুর ছবি তুলে সবাইকে থামিয়ে দিচ্ছিলাম । পথের ধারে বেশ কিছু লতানো গাছের ঝোপ ছিল । বেশ সুন্দর দেখতে । সে রকমই একটা ।



যত দেখি তত বিস্ময় । এবারে উপস্থিত আমার জন্য সেরা বিস্ময় । আমার সবাই মাকড়শার জাল দেখেছি কিন্তু এটা কত শক্ত হতে পারে সে বিষয়ে অনেকেরই কোন ধারণা নেই । নিচের ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে ।



যাই হোক আমরা যে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্থাৎ ঝরণার কাছে চলে এসেছি সেটা বোঝা যাচ্ছিল । কেমন যেন একটা জলধারার পতনের শব্দ কানে আসছিল । আর পাথরের গায়ে গায়ে জলের ধারা ।



প্রায় দু ঘন্টার ঢিমেতালে হাটাহাটির পড়ে আমরা গিয়ে পৌছলাম ঝর্ণা তলায় । এটা বেশি বড় না হলেও ভরা বর্ষায় এটা বেশ সুন্দর আর বড় লাগছিল । ঝরণাটা প্রায় শত ফুট লম্বা কিন্তু জলের পরিমান একটু কম ।



গরমে পাহাড় বেয়ে উঠবার পরে সামনে যদি পড়ে ঝরণা । না নেমে পড়ে উপায় আছে ? আমরা নেমে পড়লাম এবং গোসল সেড়ে নিলাম ।



ঝরণার আরো একটি ছবি । আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে ।



অনেক হল ঝর্ণাজলে অবগাহন এবারে ফেরার পালা । আমাদের রাত্রিযাপনের জন্য বেছে নেয়া স্থানের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু হল । কিছু দূর হেটে একটু উপরে আসতেই দেখি রুদ্র রোষে ফুসে ওঠার প্রস্তুতি সমগ্র আকাশ জুড়ে । আমার মনে জাগল শঙ্কা । পাহাড়ে বৃষ্টি অতি ভয়ংকর ।



আমরা দ্রুত পা চালাতে শুরু করলাম । আরো কিছু দূর আগাতেই দেখি কি কৃষ্ণ ঘন ঘোর মেঘের ধারা । সমগ্র আকাশ ছেয়ে গেছে কাল কাল মেঘে । এই অবস্থাতেও ছবি তোলা কিন্তু থেমে থাকল না ।



সবাই বোধহয় ভাবছেন ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছিল । আসলে ঘটনা তেমন নয় । কিছুই হয়নি । মেঘেদের বোধহয় অন্য কোন কাজ ছিল তাই হন্তদন্ত পায়ে তারা অন্য কোথাও চলে গেল ।
যাইহোক সবাই হাটছি । ইতিমধ্যে বেশ কিছু আদিবাসী লোক হাটতে হাটতে আসলেন । আমরা তাদের ছবি নিলাম হাটবার ফাকে



ফিরে আসবার সময় হাটতে খুব ভাল লাগছিল এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম সময়ে আমরা ফিরে এসেছিলাম । যাই হোক পাহাড়ের উপর থেকে কেমন লাগে বগা লেক কে দেখতে দেখুন ।



ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমরা প্রায় চলে এসেছি । তাই বেশ আনন্দ বোধ হচ্ছিল । যা হোক পথের ধারে একটা মজার দৃশ্য ।



খুব সুন্দর লেগেছে কলা ক্ষেতটাকে । আপনাদের কেমন লাগছে ? যাই হোক আবার হাটা শুরু । একটু দূরেই বগালেকের বমপাড়া চোখে পড়ল ।



আমরা যখন প্রায় পৌছে গেছি তখন এক মাংশওয়ালা হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন । তাকে জিজ্ঞেসে করতেই জানা গেল, তিনি হরিণের মাংশ নিয়ে রওনা হয়েছেন বাজারে । বিক্রি করবেন । বাজার বলতে উনি বোঝাচ্ছেন রুমা বাজার । এখান থেকে উনাদের জন্য চার ঘন্টার পথ, আমাদের ছঘন্টা । জীবন কতটা সংগ্রামের, এখানে বাস না করলে বোঝা শক্ত ।



আমাদের যাত্রা ফুরোলো । আমরা আবার পৌছে গেলাম লেকের ধারে । খেয়েদেয়ে উঠেই ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিলাম বিছানায় । আমার মনে আবার চিন্তা স্নধার দিকে পাহাড়টা কেমন লাগে দেখতে হবে । কিছুক্ষণ ঘুমিয়েই উঠে পড়লাম । বিষণ্ন সন্ধায় পাহাড়টাও কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়েছিল ।



এর পরে নামল রাত । বারবিকিউ হল । ভালই লেগেছিল খেতে । আপনাদের সাথে ছবি শেয়ার ছাড়া আর কোন উপায় করতে পারছি না বলে দু:খিত ।



রাত নটা । গহীন পাহাড়ে এটা অনেক রাত । হাজার তারার মেলা । সেদিন আকাশে চাদ না থাকায় আমি খুব খুশি হয়েছিলাম । এত সুন্দর লাগছিল কি বলব । কিন্তু পরদিনের কথা স্মরণ করে শুয়ে পড়লাম বিছানায় । ঘুমের আগে ভাবছিলাম জীবন এখানে সেজেছে নিজের মতন করে । নিজের মতন করে সে ঐশ্বর্যবান । আমরা তার ঐশ্বর্য গ্রহণ করেই যাচ্ছি । যে দেনা হচ্ছে তার পাওনা মেটাবার চেষ্টা আমাদের কই । ভাবতে ভাবতে ঘুমের গ্রাসে আমি ..................

আজ আর নয় । আগামী পর্বে দেখবেন ফেরার পথে ঝিরি পথের সৌন্দর্য । ততক্ষণ সবাই সুখে থাকুন । আর নিজের দেশকে জানুন, সবার প্রতি আমার অনুরোধ । দেখার আছে অনেক কিছু শেখার আছে অনেক কিছু ....................

বি.দ্র: কাল পোস্ট টা বিচিত্র কোন কারণে প্রথম পাতয় আসেনি । এবং ডিলিট হয়ে যায় । যারা কমেন্ট করেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৪৭
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×