somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাশোগি হত্যাকাণ্ড: সৌদি স্বীকারোক্তি কি যথেষ্ট?

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে সাংবাদিক খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার ১৭ দিন পরে সৌদি আরব তাকে হত্যার কথা স্বীকার করল। কিন্তু এমন কিছু ছেলেমানুষি গল্প বানিয়ে স্বীকার করল যে, সারা বিশ্ব জনমতের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হলো।

দেশটির প্রধান কৌঁসুলি এক বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে। তবে তার হত্যার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয় নাই বরং কনস্যুলেটে দেখা করতে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে খাশোগির লড়াই হয় বলে দাবি করে দেশটির প্রধান কৌঁসুলি।

কিন্তু সৌদি আরব এই ১৭ দিন বসে আমেরিকার ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এটা এমনই এক ঠুকনো যুক্তি দাঁড় করল যা বিশ্বের কাছে কোনো গ্রহণযোগ্যতা তো পায়নি বরং সারা বিশ্বের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে মিথ্যা বলার একটা শিল্প আছে। মিথ্যাটা এমন সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয় যেটা সত্যের মতো মনে হয়। কিন্তু সৌদি আরব মিথ্যাটা এমনভাবে উপস্থাপন করল যাতে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব।

ঘটনার শুরু থেকেই সৌদি আরব বারবার তার নিখোঁজের ব্যাপারে কোনো কিছু জানার কথা অস্বীকার করে আসছে। সৌদি কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্লুম্বার্গ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে খাশোগির নিখোঁজের ব্যাপারে তার সরকার কিছু জানে না। এমনকি তার কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার সরকার ১০০ ভাগ নিশ্চিত বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সে ঘোষণা প্রধান কৌঁসুলির বিবৃতির মাধ্যমেই মিথ্যা প্রমাণিত হলো।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে :

১. কেন সৌদি আরব খাশোগি হত্যার ব্যাপারটা প্রথম অস্বীকার করে ১৭ দিন পরে স্বীকার করল?

২. সৌদি আরবের এই স্বীকারোক্তি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

৩. খাশোগি যে হাতাহাতিতে মারা গেছেন তার প্রমাণ কী?

৪. তার মরদেহ কোথায়?

৫. বিশ্ব বিবেক এই ঘটনার কি জবাব দেবে?
হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। হয়তোবা কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়াই যাবে না। কিন্তু এটা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, সৌদি আরব তার ডিপ্লোমেটিক মিশনের মধ্যে তারই দেশের একজন সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

এই হত্যার দায়ভার সৌদি সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। এক্ষেত্রে তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু জোর গলায়ই বলেছেন যে, তারা তদন্তের ফলাফল সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন।

কিন্তু সৌদি যে আমেরিকা এবং তুরস্কের সঙ্গে একটা চুক্তি করেই এই স্বীকারোক্তি দিল সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।

শুক্রবার রাতে সৌদি কৌঁসলির ঘোষণার এক ঘণ্টা আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান এবং সৌদি বাদশা সালমান ফোনালাপ করেছেন। যদিও তাদের ফোনালাপের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু সৌদি বাদশা যে স্বীকারোক্তি দেয়ার আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে আগাম জানান দিয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু আসল দেখার বিষয় হচ্ছে তুরস্ক কি ঘটনাটাকে সৌদির ইচ্ছা অনুযায়ী ধামাচাপা দেবে নাকি সৌদির পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার মোর ঘুরিয়ে দেবে, নাকি সত্য ঘটনা উন্মুক্ত করবে।

পশ্চিমা মিডিয়া তুরস্কের ওপরে চাপ সৃষ্টি করছে সত্য ঘটনা প্রকাশ করার জন্য। ফলাফল দেখার জন্য হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।

তবে যে বিষয়টি এখানে প্রকাশ্য হলো সেটা হচ্ছে সৌদি সরকারের মদদ ছাড়া এত জঘন্য একটা হত্যাকাণ্ড কনস্যুলেট ভবনের মধ্যে ঘটা সম্ভব না। আর তুরস্ক যে শুরু থেকেই বলে আসছে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটাও সত্য।

তুর্কি মিডিয়ার ফাঁস করা তথ্য সৌদি আরবের সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় সমগ্র বিবৃতির চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।

কিন্তু সৌদি সরকারের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার দুপুরে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির মুখপাত্র ওমের চেলিক স্পষ্টই ঘোষণা দিলেন যে তুরস্ক খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করবেই এবং তদন্তের ফলাফল বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে।

যদি তুরস্ক তার কথায় অটল থাকে তাহলে সৌদির জন্য খুব খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।

লেখক: সারওয়ার আলম, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার-নিউজ পাবলিশার, আনাদলু এজেন্সি, তুরস্ক

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×