somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন অসহায় বাবা’র আবেদন।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার জন্য উপস্থিতি হিসেব করতেছি। সবাই এলাও হলেও দেখছি একটা ছেলে আল সাদিক সম্পদ বেশ ক’দিন যাবত অনুপস্থিত।



ওর সহপাঠী শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলাম- ওর কী হয়েছে ? স্কুলে আসেনা কেন ?
সাথে সাথেই সমস্বরে সবাই বলে উঠল- ওর অসুখ, ও হয়তো আর বাঁচবেনা, স্যার !
বললাম- কেন, কী হয়েছে ?
ছাত্ররা বলল- ওর দুটো কিডনীই ড্যামেজ ! ওর শরীর ফুলে কলাগাছ . . .।
জিজ্ঞেস করলাম- কোন ছেলেটা, চিনতে আমাকে একটু সাহায্য কর।
ক্লাস ক্যাপ্টেন দাঁড়িয়ে বলল- স্যার ঐ-যে আপনি যাকে সুন্দর ছেলে বলে ডাকেন, সেই . . . । কিছুদিন ক্যাপ্টেন ছিল।
এবার চিনতে পারলাম।

আহারে !
মুহূর্তেই ক্লাস ফোর -এর কোমলমতি শিশুগুলির মধ্যে তাদের প্রিয় সহপাঠীদের জন্য মৌনতা নিরবতায় ছেয়ে গেল।


বেশ ক’দিন পর। জেলা পরিষদের ক্যান্টিনে চা খাচ্ছি। স্কুলের একজন পরিচিত মুখ এর সাথে একজন লোক ঢুকলেন। কোমরটা বাঁকা। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। গায়ে ময়লামতো একটি ফুল হাতা শার্ট। কতদিন গায়ে জড়িয়েছে হিসেব নেই। আমার পাশেই দাঁড়ানো।

পরিচিত মুখকে বসতে বললাম।
তিনি ঐ রোগীমতো লোকটাকে বসার জন্য বললেন। কিন্তু বসতে পারলেন না।

কিছুক্ষণ পর।
পরিচিত মুখটিকে বিষণ্ন বদনে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম- কী হয়েছে ? এমন উদভ্রান্ত লাগছে কেন আপনাকে ?

তিনি আফসোস করে রোগীটিকে বলছেন- আমার সাধ্যমতো আমি যা পারি তা করবো। আপনি আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন।

জানতে চাইলাম- কী হয়েছে ?
রোগীটি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল।
পরিচিত লোকটি বলতে লাগলেন-
চাঁদের মতো একমাত্র ফুটফুটে ছেলেটির দু’টি কিডনীই নষ্ট।
বললাম- উনার ছেলে কি বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়ায় পড়ালেখা করে ?
বলল- হ্যাঁ। আপনি চিনেন ওকে ?
বললাম- চিনি মানে ! ও ক্লাস ফোর –এ পড়ে না ? ওর রোল নম্বর . . .। আমিতে ওর ক্লাস টিচার !

ও, তা-ই !
আবার বলা শুরু করলেন- ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে জমি-জিরাত, স্য’ মিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা ছিল তার সব কিছু-ইতো শেষ করেছেনই। মাত্র এই কিছুদিন আগে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় তার নিজেরও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে আছেন। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। এমতাবস্থায় এই লোকের গতি কী। তাই নিয়ে ভাবছি। ভাবছি সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পেতে কিছু টাকা পয়সা ম্যানেজ করে দে’য়া যায় কি না !

এর ক’দিন পর রোগী লোকটির সাথে দেখা। জেলা পরিষদ এলাকায়। ইতস্ততঃ ঘুরাফেরা করছে। কিন্তু হাঁটতে পারছেনা। বুঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ বেশ পরিপাটি লাগছে। পরিস্কার একটা টি শার্ট গায়ে জড়ানো।

কাছে ডেকে নিয়ে দুইটা ছবি উঠালাম। আহা, সে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা একটু সোজা হয়ে পোজ দেবার জন্য !
হাতে কিছু কাগজপত্র দেখে জানতে চাইলাম- এগুলো কিসের কাগজপত্র ?
প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট . . .
বলেই- হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
বলল- স্যার আমার জন্য কিছু করতে পারবেন ?



বললাম- আমার মতো স্কুলের নগন্য একজন শিক্ষকের কী-ইবা করার আছে ? আপনিই বলুন ?
বললেন- আপনি যেখানে পারেন সেখানে আমার হয়ে একটু হাতটা পাতবেন ! আমার যে এখন দিন চলে একবেলা খেয়ে, না খেয়ে . . . সামনে আবার আসতেছে রোজা . . .

কান্না থামাতে বলে তার হাত থেকে কাগজগুলো ফটো কপি করে নিয়ে, সামান্য কিছু সহায়তা করে চলে এলাম।

আজ আমার নিজেরই প্রচণ্ড জ্বর। বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। হঠাৎ একটা ফোনে ওপাশ থেকে আল সাদিক সম্পদের বাবা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছে-
স্যার, আগামীকাল আমার ছেলের একটা চেকআপের ডেট আছে। কাছে একটা পয়সা নেই। সাদিক আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়।
ওর সাথে কথা বলতে পারবো না- বলেই ফোনটা রেখে দিলাম নির্দয়ের মতো।
কী করে বুঝাই ওর কান্নাজড়িত কণ্ঠ আমি কোনক্রমেই সহ্য করতে পারবোনা !


আপনাদের মধ্যে যাদের সামর্থ আর ইচ্ছে আছে তারা এতটুকু সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ছোট্ট চাঁদমুখটি হয়তো আবারও বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া’র আঙ্গিনায় দৌঁড়ে বেড়াতে পারবে। আর তার বাবা-মা ফিরে পেতে পারে তাদের কলিজার টুকরাটিকে।

তাকে সহযোগিতা করতে চাইলে সরাসরি তার সাথে অথবা তার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে



তার সাথে ফোনে অথবা সরাসরি যোগাযোগের ঠিকানা-
মোঃ আবু শাহীন
পিতাঃ মৃত আমিরুল ইসলাম
সাংঃ নাটাইপাড়া
থানা ও জেলা বগুড়া।
ফোনঃ 01719 828 314

ব্যাংক হিসাব নম্বরঃ 34017372
মোঃ আবু শাহীন
অগ্রণী ব্যাংক
চেলোপাড়া শাখা

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×