somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরুপম এবং..

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল বন্ধ । আজ ও একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠল নিরুপম ।
বিশাল বাংলা প্যাটার্নের বাড়িতে ও আর ওর বাবা থাকেন । বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে । নিরুপমের মা, নিরুপমের জন্মের সময় মারা যান । প্রতিদিন ওর বাবা অফিসে চলে যাওয়ার পর নিরুপম স্কুলে চলে যায় । তাই বাসায় একা ওর খুব একটা থাকা হয় না । তবে আজ ওকে বাসায় একাই থাকতে হবে । অবশ্য দুপুরে বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যাবে । চোখ ঘষতে ঘষতে প্রথমেই ঘড়ির দিকে তাকাল, সর্বনাশ ৯ টার উপরে বাজে । বাবা নিশ্চয় এতক্ষণে অফিসে চলে গেছেন ।
‘নিরুপম তাড়াতাড়ি খেতে আয়, দেখেছিস কইটা বাজে? নাস্তা খেয়ে পড়তে বস ।’

‘আসছি বাবা’, বলেই নিরুপম একলাফে সোজা বাথরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে ডাইনিং এ এলো ।
‘আজ ফিরতে একটু দেরি হতে পারে ,তুই দুপুরের লাঞ্চটা সেরে নিস, কেমন?’
‘ঠিক আসে, বাবা ।‘
বাবা অফিসে চলে গেলে নিরুপম অংক বইটা নিয়ে বসে

। একমনে ও অংক করতে থাকে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ওর ধ্যান ভেঙ্গে যায়। ধ্মা এমন সময় আবার কে এলো? বড়সড় বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকায় নিরুপম । শুনে, ‘আম্মাগো, চাইটটা ভিক্কা দিবেন?’

‘মাফ করো, বাসায় কেউ নেই ।

ভিক্কুকটি কাঁধে বস্তা ঝুলিয়ে চলে গেল ।

ওদের কোন কমনসেন্‌স নেই, কাকে কি বলতে হয় তা পর্যন্ত তারা জানে না? ওকে আম্মাগো না বলে আব্বাগো বললেই পারত । হাঁসির একটা সূক্ষ রেখা মুখে টেনে ও আবার পড়তে বসে । অংক ওর ভালই লাগে । এবার পরীক্ষায় ও ই হাইয়েসট নম্বর পেয়েছে । ওর জ্যামিতিতে সামান্য দুর্বলটা আছে । এবার জ্যামিতি বইটা বের করল । বইটা আর খুলতে পারল না, আবার কলিং বেলের শব্দ । ইস, আজ ফকিরদের হয়েছে কী? চেয়ার ছেড়ে ও বারান্দায় আসে । না, কোন ভিক্কূক নয়, তবে ছুটো অর্থাৎ ওর সমবয়সী একটি মেয়ে, ওর কোলে ছোটট,একটা বাচ্চা । কী নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে । মায়ের কোলেই কেবল বাচ্চারা এভাবে ঘুমাতে পারে ।
‘এই যে, কী চাই তোমার, কাকে চাও?’
‘না ভাই, কাঊরে ছাই না, সাহায্য ছাই ।’
নিরুপম কী যেন মনে করে নিচে নেমে আসে, কী সাহায্য করতে পারি ?

'এইটা আমার ছোট ভাই , বয়স দুই মাস হইছে । ওর জন্মের সময় আমার মা মারা যায় ।" বলেই মেয়েটি হু হু করে কেঁদে উঠল।

নিরুপমের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল ।সে সিঁড়িতে বসে পড়ল । মেয়েটি কেঁদে কেঁদেই বলল, "ভাইজান আমার বাপ নাই, মা ও চইলা গেল। এখন আমি এই ছোট্ট ভাইটিকে কীভাবে বাঁচাব; আজ সারাদিন ও কিছুই খায়নি ,দুধ কেনার পয়সা ও আমার কাসে নাই ।"
নিরুপম ভাবত তার মত দুঃখী হয়ত পৃথিবীতে আর কেউ নেই ।এখন তার ধারণা পাল্টে গেল। ছোট্ট এই ছেলেটি তো তার চেয়েও দুঃখী ।তার নিজের জন্য তো এভাবে দুধ ভিক্ষা করতে হয়নি ।তার নিজের বোনকে ও তো এভাবে রাস্তায় রাস্তায় হেটে কষ্ট করতে হয়নি ।নিরুপমের চোখ টলটল করছে । নিষ্পাপ, অসহায় মেয়েটির চোখ তখন ও অশ্রুবর্ষণ করছে , "এই , তুমি কেঁদো না , দেখি কি করা যায়। বলেই নিরুপম উপরে উঠে গেল
চিন্তা করছে টাকা কোথায় পায় । হঠাৎ তার টেবিলের উপর রাখা মাটির ব্যাংক এর কথা মনে পড়ে গেল। সে এই ব্যাংক ভেঙ্গে যা টাকা পেল সব নিয়ে নিচে এল । ততক্ষণে মেয়েটির ছোট্ট ভাইটি জেগে উঠছে ।নিরুপম মেয়েটি হাতে টাকাগুলো তুলে দিল ।টাকাগুলো দিতেই ওর মুখ মৃদু হাঁসিতে ভরে গেল । সে তার ভাঈয়ের গালে চুমু খেল । ভাইয়ের প্রতি বোনের এমন স্নেহ-ভালবাসা নিরুপম এই প্রথম কাছ থেকে দেখল।
' ভাইজান, আসি । '
'আচ্ছা' ।


অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, তবু নিরুপমের ঘুম আসছে না ।বারবারই ওই অসহায় মেয়ে আর তার ভাইয়ের মুখ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে ।

বারান্দার গ্রিলের কাছে এসে দাঁড়ায় নিরুপম। আজ পূর্ণিমা । সমস্ত আকাশটা চাঁদের আলোয় ভোরের মতই ফরসা লাগছে ,তারাগুলি একবার জ্বলছে, আরেকবার নিভছে ,ঠিক যেন বিয়েবাড়ির লাইটিং এর মত, কিছু তারা স্তির , জলেই রয়েছে । আজ ওর মার কথা মনে পড়ছে। আচ্ছা , মা কি আমাকে ছোটবেলায় ওই মেয়েটার মতই কোলে নিত? আদর করত? আমি তো মার কোলে কখনও চড়িনি ।স্কুল থেকে ফেরার পর মা কি নিজের হাতে খাইয়ে দিত? এই যে রাত দেড়টার সময় আমি একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে , মা থাকলে নিশ্চয়ই হঠাৎ পিছনে দাঁড়িয়ে পিঠে হাথ বুলাতে বুলাতে বলত,' কি বাবা, ঘুমাসনি? এখানে কী করছিস ?" নিরুপমের গাল বেয়ে অশ্রুবন্যা নামে । ও ওর মাকেই দেখেনি,সুদু ছবি দেখেছে ।ও ড্রয়ার থেকে মায়ের ছবিটা নিয়ে আসে ," এইতো আমার মা, আমার পাশে " বলে নিজেয় নিজেকে সান্তনা দেয় । পূর্ণিমার চাঁদটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে । মায়ের মুখটাও আরও পরিস্কার দেখতে পায় নিরুপম । সে ডুকরে কেঁদে উঠে । ওর কান্নার শব্দে বাবা উঠে আসেন। কীরে নিরুপম, কি হয়েছে এ্য। , কাঁদছিস কেন, ঘুমাসনি ? মার ছবিটা ওর হাতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না কিছু । তিনি নিরুপমকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন

রাতে নিরুপম সপ্নে দেখল, মা ওকে বলছেন ,কাঁদিস কেন নিরুপম ,সব দুঃখকেই জয় করতে হয় । কে বলেছে আমি নেই ? ওই যে দুঃখী ,দরিদ্র মায়েদের মধ্যেই আমি বেচে আছি ।তুই ওদের দেখিস, বাবা ।‘ ঘুম ভেঙ্গে গেল নিরুপমের । খুব ভাল লাগছে ওর । নিজেকে দারুন গবিত মনে হচ্ছে ।

এ সময় বাবা ডাকলেন, ' নিরুপম, নাস্তা খেতে আয় ' ।


' আসছি বাবা '




;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;

SUSTian, sylhet.


৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×