somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ আগস্ট

১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যখন নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করল, সে হত্যাযজ্ঞের তারা নাম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চলাইট।' নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক সিডনি শনবার্গ লিখেছেন, সে রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, '...কেন তোমরা গুলি করছ? আমাকে যদি মারতে চাও আমি তো এখানেই রয়েছি। কেন তোমরা আমার লোকজনকে মারছ?'

এরপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'আমাকে হয়ত ওরা মেরে ফেলবে। ফিরে আসতে পারব কিনা জানি না। কিন্তু কোনো একদিন আমাদের দেশের মানুষ মুক্ত হবে। তখন আমার আত্মা তা দেখে খুশি হবে।' একথা বলে তিনি সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যান। না, পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলতে পারে নি। তবে চেষ্টাটা ছিল তাদের। বাংলাদেশ যেদিন স্বাধীন হলো সেদিনও বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পারে নি।

রামেশ্বর নাথ কাও বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করতে বললেন, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে।

বঙ্গবন্ধু বললেন, আমার কিছুই হতে পারে না, তারা আমার লোক। রামেশ্বর নাথ কাও হলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর প্রথম প্রধান। ১৯৭৫ সালের মার্চেই কাওয়ের কাছে আরও বিস্তারিত খবর পৌঁছে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে খবর বিশ্বাস করেন নি। বাংলাদেশের কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে এমন কথা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন না। ঘাতকরা যখন তাঁরই বাড়িতে ঢুকে গুলি করল, তখন কি বঙ্গবন্ধু বিস্মিত হয়েছিলেন? দেহটি ছেড়ে যেতে যেতে কি ঘুরে সিঁড়িতে পড়ে থাকা আপন দেহটির দিকে তাকিয়েছিলেন তিনি? বাঙালি তাঁর আপনজন। বাঙালি তাঁকে মারতে পারে না বলে বুকটা ভরা যে অহংকার তাঁকে প্রদীপ্ত রাখত, সে অহংকারই কি তাঁকে লজ্জিত করেছিল? বাঙালিই তো মারল তাঁকে। কেবল তাঁকে নয়। তাঁর পুরো পরিবারের প্রতিটি মানুষকেই! দু'জন বেঁচে গিয়েছিলেন ঘাতকদের নাগাল থেকে দূরে ছিলেন বলে। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যজন তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা। নাগালে পেলে নিশ্চিতভাবে তাঁদেরকেও মেরে ফেলত ঘাতকরা।

নিউ ইয়র্ক টাইমস্ সম্পাদকীয়তে লিখেছে, বঙ্গবন্ধুর লাশ ১২ ঘন্টা ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে পড়েছিল। সাড়ে তিন বছর আগে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা বীর বাঙালি ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে টুঁ শব্দটিও করে নি। একটি মানুষও প্রতিবাদে রাস্তায় নামে নি। গেল বছর বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে এত বড় একটা ঘটনা, বাংলাদেশের কোনো লোক জানতে পারল না? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে! সেই কথা আমি এখনও ভাবি! এত বড় সংগঠন, এত নেতা, কোথায় ছিল তখন? মাঝে মাঝে আমার জানতে ইচ্ছে করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারল না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিল।’

প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে বেজে ওঠা দারুণ এ আক্ষেপ আর বিস্ময় আমাদের লজ্জা।

১৫ আগস্টের পরদিন ১৬ আগস্ট ১৯৭৫ সেসময় আওয়ামী লীগের মুখপত্র বলে পরিচিত দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছিল, ‘রাষ্ট্রপতি খন্দকার মুশতাক আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গতকাল প্রত্যুষে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া দেশের শাসনভার গ্রহণ করিয়াছেন।... শাসনভার গ্রহণকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় বাসভবনে নিহত হইয়াছেন।’ ইত্তেফাক একলা নয়। সেসময় বীর বাঙালির সকল পত্রিকাই এ এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।

খন্দকার মোশতাক আহমেদ নামক এই রাষ্ট্রপতিটির পরিচিতি হলো বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীটি ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম কালো আইন ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ- ৫০/১৯৭৫’ জারি করল। অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ রয়েছে, প্রথম অংশে বলা হয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেয়া হলো।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইনটি বাতিল করা হয়। বীর বাঙালি জাতি হয় অভিশাপ মুক্ত।

ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সমপন্ন হয়েছে। ছয়জনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। পাঁচ খুনি এখনও পলাতক রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রচলিত আইনে আর দশটা হত্যাকাণ্ড যেভাবে হয়ে থাকে সেভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কি কেবলই ক’জন বিপথগামী সেনা সদস্যর হঠকারী সিদ্ধান্ত? নাকি এর পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো ক্ষেত্র? এ বিষয়টি এখনও সেভাবে আলোচনায় উঠে আসে নি। এইটি উন্মোচন হওয়া জরুরি।

সম্পাদকীয় 'অনুস্বর'


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×