শীতের শেষ হয়ে বসন্ত চলে। দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি বিলাসী, মানে বৃষ্টি খুব প্রিয় যাদের, তাদের জন্য দীর্ঘদিনের বিরহ। এখন খানিক বৃষ্টির জন্যে এদের হৃদয়ে হাসফাঁস করছে। অন্যান্য বছর শীতের মাঝেও দু'একবার বৃষ্টি ক্ষণিকের জন্য দেখা দিয়ে যেয়ে এদের মনে প্রশান্তি ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এবার সেই যে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি হলো, এরপর এক অনন্ত ক্ষরা। ঐ লোকগুলো তাই প্রেয়সীরহারা প্রেমিকের মতন। জলহীন রুক্ষ ফসলি জমি যেমন, ঠিক তেমন তাদের হৃদয় ভূমিও চৌচির। হাইওয়ে ধরে ছুটে চলা বাসটির পঞ্চম সারির জানালার ধারে বসে ছেলেটিও তেমন এক বৃষ্টি বিলাসী।
পশ্চিম আকাশের সূর্যটা মিলিয়ে গিয়েছে বেশ অনেকটা সময় হলো। বাইরে গোধুলীর রাঙারং আর নেই। বসন্তের আকাশ, তেমন মেঘ নেই। পূর্ণিমা নিকটবর্তী। তাই দিনের আলো চলে গেলেও আলো-আঁধারে ভালোই লাগছিল। সারাদিনের হালকা গরম ভাব রাতের দিকে বেশ কমে আসে। ছেলেটি বাসের জানালা হালকা খোলা রেখে বাতাসের সে হিম স্পর্শ নিচ্ছিলো। দিগন্ত বিস্তৃত খোলামাঠ সাঁ সাঁ করে পেছনে সরে যাচ্ছিলো। সে নিবিষ্ট চিত্তে তাকিয়ে দেখছিল- রাস্তার পাশের গাছপালা, আর কাছে-দূরের ঘরবাড়ি কেমন করে পেছনে ধাবমান। ছেলেটির রোমান্টিক মন জেগে উঠেছিল। এমন সময় তাকে অবাক করে দিয়ে কয়েক ফোঁটা জলের দর্শন দেখা দিলো বাসের জানালায়। বৃষ্টি বিলাসী ছেলেটির মন হু হু করে উঠলো আনন্দ- নেমেছে! তার প্রতীক্ষিত বৃষ্টি তবে নেমে এসেছে তাকে খুশিতে ভরিয়ে দিতে! সে তবু নিশ্চিত হতে জানালা দিয়ে হাতটি তার বাড়িয়ে দিলো। জলের ধারা আরেকটু বাড়লো যেনো। সে তুষ্ট দৃষ্টিতে খানিকটা চেঁচিয়েই উঠলো, আহ বৃষ্টি!
ছেলেটির চিৎকারে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির মুখে চাপা হাসি বিস্তৃত হলো। তারপরই লোকটি সচকিত হয়ে চিৎকার করে বললো, আরে ভাই, বৃষ্টি না, বৃষ্টি না। বমি! বমি!
হতভম্ব ছেলেটি দাঁড়িয়ে গিয়ে সামনে তাকালো। দেখলো, সামনের সিটের মেয়েটি মাথা বের করে বমি করছে। বিরক্তিতে ছেলেটির হাসিমাখা মুখ কুঁচকে গেল। তার গা গুলিয়ে উঠলো। মনে হলো তারও পেট উগলে সব বেরিয়ে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৪০