somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃতদেহের সারি থেকে উঠে দাঁড়ালেন অপর্ণাদেবী

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারি সারি মৃতদেহের সঙ্গে শুক্রবার দিনভর শুয়ে ছিলেন তিনি ‘মৃতদেহ’ হয়েই। মৃতের সরকারি তালিকাতেও উঠে গিয়েছিল অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের নাম। আর প্রয়াত হয়ে যাওয়া সেই তিনিই শনিবার সকালে স্ট্রেচারে শুয়ে ফিরে গেলেন নিজের বাড়িতে। মনে হবে গল্প।

আমরি হাসপাতালের শুক্রবারের সেই অভিশপ্ত ভোররাত। ঘড়ির কাঁটা চারটে ছুঁইছুঁই। অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের পাঁচতলায় নিউরোলজির ৪৪৩ নম্বর বেডে শুয়ে ছিলেন বৃদ্ধা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। বয়স প্রায় সাতাশি। স্নায়ুঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আমরিতে ভর্তি হয়েছেন ৩ ডিসেম্বর।

রাতের ওষুধের জের শরীরে। খানিকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন। হঠাৎই প্রচণ্ড ধোঁয়ায় শুরু শ্বাসকষ্ট। ওঠার মতো অবস্থা ছিল না অপর্ণদেবীর। শুধু বুঝতে পারলেন কারা যেন তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। চারিদিকে অস্পষ্ট আর্তনাদ।

ফিকে হয়ে যাচ্ছিল সব কিছুই। তারপর....।
আর কিছুই মনে নেই অপর্ণাদেবীর। শুক্রবারের সেই স্বজনহারানোর কান্নাভেজা সকাল। নাকতলার বাসিন্দা অপর্ণাদেবীর বাড়ির লোকজন জানতে পারলেন ঘটে গিয়েছে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড।

যেখানে ভর্তি ছিলেন অপর্ণাদেবী, ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে গিয়ে সেখানে বহু রোগীই মারা গিয়েছেন। একরাশ আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে হাজির হন আমরিতে। কিন্তু কোথায় মা? ব্রততীদেবী একবার যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষের কাছে, একবার ঢুকতে চাইছেন অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফেও তাকে জানানো হলো, অপর্ণাদেবীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের তালিকাতে রয়েছে নামও।

সারি সারি মৃতদেহের ভিড়ে খোঁজ মিলল না অপর্ণাদেবীর। ব্রততী জানিয়েছেন, আমরি থেকে জানানো হলো- এসএসকেএম হাসপাতালে বিশকিছু মৃতদেহ চলে গিয়েছে। দৌড়ালাম এসএসকেএম-এ। না সেখানেও নেই।

একবার আমরি, একবার এসএসকেএম। দিনভর শুধুই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কোথাও মায়ের খোঁজ নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আত্মীয়রা একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন আমরি কর্তৃপক্ষের উপরে। ব্রততী জানিয়েছেন, আমরা বললাম আগে মায়ের মৃতদেহ দেখানো হোক আমাদের।

কোথায় আছে খুঁজে বের করুন আপনারাই। বেশ কিছুক্ষণ পর ব্রততীদের জানানো হয় এসএসকেএম-এ রয়েছে অপর্ণাদেবীর মৃতদেহ। ফের এসএসকেএস এ পৌঁছে গেলেন তারা। তখনি বেজে উঠলো মোবাইল ফোন।

আমরি থেকে জানানো হলো অপর্ণাদেবী সুস্থ রয়েছেন। তার চিকিৎসা চলছে আমরিতেই। আপনারা চলে আসুন। কার্যত কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ফের ব্রততী আসেন আমরিতে। দেখলেন অপর্ণাদেবী শুয়ে রয়েছেন বেডে। স্যালাইন চলছে।

আতঙ্কে একেবারে বাকরূদ্ধ তিনি। কোনোক্রমে অস্ফুটে ব্রততীদেবীকে বললেন দুটো লোক আমাকে বের করে নিয়ে এল। ব্যস, আর কিচ্ছু মনে নেই। ব্রততী জানতে পারলেন সারি সারি মৃতদেহের ভিড়ে দিনভর শুয়ে ছিলেন তিনি জীবন্ত অবস্থায়।

অপর্ণাদেবীর পরিবারের এক শুভানুধ্যায়ী দীপক সাহা জানিয়েছেন, আমাদের চিৎকার চেঁচামেচির পরই টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। মৃতদেহের মধ্য থেকে তখনি তাকে উদ্ধার করে শুরু হয় চিকিৎসা।

হাসপাতালের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয় কোনাভাবেই অপর্ণাদেবীকে মৃতদেহের সারিতে রাখা হয়নি। তাকে চারতলাই মহিলাদের ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। নাম বিভ্রাটের কারণে এই বিভ্রান্তি ঘটেছে। তবে অপর্ণাদেবীর নাম মৃতের তালিকায় ছিল বলে অবশ্য এদিন স্বীকার করে নেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে।

এদিন সকাল মাকে নিতে এসে ব্রততী জানালেন মাকে জীবিত অবস্থা দেখতে পাব ভাবিনি। যেকোনো মুহূর্তে মুত্যুও হতে পারতো। স্ট্রেচারে শায়িত অপর্ণাদেবীর চোখেমুখে তখনো আতঙ্কের ছাঁপ। চিকিৎসকরা ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। শনিবার দুপুরে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েছেন। শান্তির নি:শ্বাস ফেলেছেন ব্রততীরা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×