somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্ত্রাসী সংগঠনের তৃতীয় প্রজন্ম

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুশির খবর হলো, বর্তমানে আইএসের যুদ্ধের আহ্বানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রচার এবং সাহায্য ও আর্থিক তহবিল সংগ্রহকরণ বন্ধে আঞ্চলিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে। তারা সিরিয়ায় বড় ধরনের লোকসানের শিকার হচ্ছে। একদিকে এটিকে আমরা ইতিবাচক উন্নয়ন মনে করতে পারি। কেননা সিরিয়া ইস্যুটি বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যার প্রতিনিধিত্বকারী পরবর্তী সময়ে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, এমন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করছে। অন্যদিকে আমরা দেখছি, এ নির্মূল অভিযানের ফলে সিরিয়ায় প্রধান দুই দল আসাদ বাহিনী ও তার মিত্রবাহিনী এবং অস্ত্রধারী বিরোধী বাহিনীর মাঝে যুদ্ধের তীব্রতা ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। একটি সময়ে যখন আন্তর্জাতিক বাহিনী একটি তৃতীয় ইসলামী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার কাজ করছে, অন্যদিকে তারা অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে কিছুই করছে না। যার মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরাকের ‘আসায়েবুল হক’ শামিল আছে। যারা আইএসের স্টাইলেই হত্যাযজ্ঞ করছে। এ উদ্বেগের কথাই প্রকাশ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ। তিনি বলেছেন, ‘তারা আইএস নির্মূলের শেষ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। কিন্তু অন্যদিকে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠেনের ছত্রছায়ায় অপকর্ম করা হচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সাম্প্রদায়িক ভিত্তি থেকে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের প্রতি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? মনে হচ্ছে, সিরিয়ায় যুদ্ধ শুধু আইএসের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ রাখা সঠিক নীতির দৃষ্টিক্ষীণতার পরিচায়ক। এ নীতির কারণে ভবিষ্যতে দুই পক্ষের মধ্যে আরও ব্যাপকতর সন্ত্রাসী যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এ দ্বন্দ্ব রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত. রাজনৈতিক কোনো সমাধানে ব্যর্থ হওয়ার ফলে অনাকাক্সিক্ষত সহিংসতা দীর্ঘ হওয়ার কারণে। দ্বিতীয়ত, বাশার আল আসাদ বাহিনী সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপর জোরপূর্বক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার কারণে।
আন্তর্জাতিক জোটের নেতৃত্বাধীন পরিচালিত যুদ্ধ মিশনের নীতি হলো, শুধু সিরিয়ার আইএস নির্মূল করা এবং গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ না হওয়া। বাস্তবে এটা একটা অন্ধ নীতি। এ নীতির ধারক-বাহকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নীতিটির গতিশীলতার সংকটতত্ত্বটি বুঝতে পারছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক জোট যদি সন্ত্রাসী দলের সব যোদ্ধাদের শেষ করে তবুও বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলমান অবস্থায় এসব সন্ত্রাসী সংগঠন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মূলত যে বাশার আল আসাদ অর্ধ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর ও লাখ লাখ মানুষের ভিটেমাটিহীন হওয়ার পেছনে প্রধান দায়ী, তাকে দৃশ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে বের করার জন্য কোনো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা দেখা যায়নি। সর্বশেষ সিরিয়ায় ও সিরিয়ার বাইরে এক নতুন ‘আইএস’র উদ্ভাবন হবে। এ অবস্থা বর্তমানে ইরাকে বিরাজমান। সেখানে সুন্নি উপজাতিরা মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে মিলে আল কায়দা নির্মূল করেছে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাগদাদ সরকারের শত্রুতা ও নিপীড়নমূলক আচরণের ফলে এবং সুন্নিদের অভাব, অভিযোগগুলোর দিকে নজর দেয়ার বদলে সামরিক পথকেই বেশি আঁকড়ে ধরার ফলে এক নতুন ও তৃতীয় দলের উৎপত্তি হয়, যার নাম আইএস। যা আগের আল কায়দা থেকেও অধিক শক্তিশালী ও আকৃতি ধারণ করেছে এবং অতি অল্প সময়েই উত্তরে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। অধিক নিপীড়নমূলক আচরণ না হলে ২০০৬-এ মার্কিন বিমান হানায় ‘আল কায়দা ইন ইরাক’ এর নেতা আল জারকৌয়ই-র মৃত্যুর পর সংগঠনটি প্রায় মুছে যাওয়া অবস্থা থেকে আবার প্রদীপের আলোয় ফিরিয়ে আনতে পারতেন না আবু বকর আল বাগদাদি।
সাময়িক যুদ্ধ বন্ধ কিছু স্বস্তি দিলেও পশ্চিমা বিশ্বকে দুই পক্ষকেই এক টেবিলে আনতে হবে। কারণ এ দ্বন্দ্ব-প্রবণতার ফাঁক গলেই আল কায়দা, আইএস বেঁচে থাকে, অন্য নামে অন্য সময়ে। এখানে আন্তর্জাতিক জোটের বিদ্যমান ঝুঁকির উপলব্ধি হওয়া উচিত যে, এ সংকট আরও গভীর হবে। যদিও তারা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে নিরস্ত্র ও বিরত করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে যে, এ সংগঠনগুলো লাখ লাখ বস্তুচ্যুত সিরীয়দের মাঝে বিদ্যমান। আর তাদের পক্ষে হাজার হাজার মানুষের নিয়োগ করা ও বিভিন্ন সদস্য সংগ্রহ করা সম্ভব। বিশেষ করে ন্যাটোর মিশনে বাশার আল আসাদের মতো লেবানন, ইরাক ও পাকিস্তানের মিলিশিয়াদের অবাধে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং অবাধে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং দৃশ্যমান পরিস্থিতি থেকে সন্ত্রাসীদের তৃতীয় সংগঠনের উত্থান হবেই, যা আরও বেশি বিপজ্জনক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে।
লেখক: আবদুর রহমান আল রাশেদ
সাবেক সম্পাদক, আলজাজিরা
আশ শারকুল আওসাত থেকে
অনুবাদ করেছেন- মুহাম্মাদ শোয়াইব
মূল লেখাটির লিংক Click This Link
আলোকিত বাংলাদেশের লিংক Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×