সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছ। কিছুদিন ধরে প্রায় নিয়মিত ভূমিকম্প হচ্ছে.।.।.। এত ভূমিকম্প হওয়ার কারণ কি ভেবে দেখেছেন? এত বেশি ভূমিকম্প হচ্ছে তা সত্যিই চিন্তার বিষয় ! কারণ আমাদের মনে রাখা দরকার বাংলাদেশে বিগত অনেক বছর ধরে কোনো ভূমিকম্প সংঘটিত হইয় নি.। কাজেই বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে.।
১৯১২ সনে জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রের্ড ওয়েগনার পৃথিবীর মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এক সময় পৃথিবীর মহাদেশগুলো একত্রে ছিল যা কালক্রমে ধীরেধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ওয়েগনারের এই তত্ত্বকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট। এ তত্ত্ব বলে পৃথিবীর উপরিতল কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। একেকটি টেকটনিক প্লেট মূলতঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গলিত পদার্থের বাহিরের আবরণ যা একটি পাথরের স্তর। ভূ-স্তরে যা কিছু রয়েছে তা এই প্লেটগুলোর উপরে অবস্থিত।
টেকটনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি লেগে রয়েছে। এগুলো প্রায়ই নিজেদের মাঝে ধাক্কায় জড়িয়ে পড়ে। কখনও মৃদু, কখনও সজোরে। যেহেতু প্লেটগুলো শিলা দ্বারা গঠিত, তাই ধাক্কার ফলে তাদের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এই ঘর্ষণের মাত্রা অধিক হলে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা ভূ-স্তরকে প্রকম্পিত করে। যদিও ভূমিকম্পের আরও কারণ রয়েছে (যেমন আগ্নেয়গিরি), তবে এই কারণটিই অধিকাংশ ভূমিকম্পের জন্যে দায়ী।
পৃথিবী একটা বিরাট গোল প্লেটের উপর অবস্থিত।।বাংলাদেশ যে প্লেটের উপর অবস্থিত তার সাথে সংযোগ আছে ভারত এবং নেপালের। তাই ঐসব অঞ্চলে ভূমিকম্প হলে সেই ভূমিকম্পের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।
ভূমিকম্প হয় মূলত মাটির নিচের শিলা আচমকা ভেঙে যাওয়ার ফলে। হঠাৎ করে এই ভাঙন মাটির তলার প্রচণ্ড শক্তির সৃষ্টি করে এবং এটা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মাটি কেঁপে ওঠে এবং মাটির ওপরে থাকা সবকিছু দুলতে থাকে।
যখন মাটির নিচে দুটি ব্লক অথবা দুটি শিলার মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন সেগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে যায়। তবে এটি খুব ধীরে ধীরে হয় এবং ভেঙে যাওয়া শিলাগুলো একে অপরের সাথে গায়ে গায়ে লেগে থাকে এবং একে অপরের ওপর চাপ দিতে থাকে।
ভেঙে যাওয়া শিলাগুলো চাপের মধ্যে থাকায় একসময় সেগুলো ভাঙতে শুরু করে। যখন শিলাগুলো ভেঙে যায়, তখনই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। যে স্থানে শিলাগুলো ভেঙে যায়, সেটাকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বলা হয়।
বাংলাদেশে বিগত শতাব্দীতে বড়কোনো ভূমিকম্প সংঘটিত হয় নি এবং বাংলাদেশে ভূ অভ্যন্তরীন প্লেটগুলো পুরোনো হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছে।কাজেই বাংলাদেশ যেকোনো সময়ে প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য মানসিক এবং অন্যান্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।